দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন : হাসিনা-খালেদা সমঝোতার লক্ষণ নেই
রাজনীতির সরল দোলক ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে শেখ হাসিনা ও তার সরকার থেকে । পবিত্র ঈদুল ফিতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে ঈদ কার্ড বিনিময় হলেও তাদের মধ্যে শান্তি (সমঝোতা) প্রতিষ্ঠার কোন লক্ষণ নেই বললেই চলে। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ইকোনমিস্ট অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে এমনই মূল্যায়ন করেছে। এর শিরোনাম ‘বাংলাদেশজ ভোলাটাইল পলিটিক্স: দ্য ব্যাটলিং বেগমস’। এতে বাংলাদেশের দু’ নেত্রীকে ব্যাটলিং বেগমস বা লড়াইয়ে লিপ্ত নারী হিসেবে অভিহিত করা হয়। বলা হয়, তারা দু’ জনে হলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবারতন্ত্রের দ্বন্দ্বে লিপ্ত দু’ শীর্ষ প্রধান। ইউরোপীয়ান একজন কূটনীতিক বলেন, তিনি সবেমাত্র তার দেশের রাজধানীতে দুটি তারবার্তা পাঠিয়েছেন। প্রথম তারবার্তায় জানানো হয়েছে, আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়। দ্বিতীয় তারবার্তায় জানিয়েছেন, ব্যাটলিং বেগমদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার অর্জনের পরিকল্পনা। আসন্ন নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দল মিস করবে বলে মনে হচেছ। ১লা আগস্ট ঢাকার হাই কোর্ট রুল দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় দল জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কারণ, তাদের গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়েছে আল্লাহকে। আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এতে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়ার পথ হয়ত নিশ্চিত করবে বলে ধরা হচ্ছে। কারণ, বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র জামায়াত। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবে কিনা তা নিয়ে ক্রমাগত সন্দিগ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে কোন নির্বাচিত কোন সরকার এমনটা কখনও করতে পারে নি। জামায়াতে ইসলামীর যেসব সদস্য স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৃশংসতা ঘটিয়েছিল বা এতে সহযোগিতা করেছিল, তাদের অপরাধ তদন্ত করে বিচারে দাঁড় করানো হয়। এ বছরের শুরুর দিকে এ নিয়ে আদালতের ‘ত্র“টিপূর্ণ’ (ঋষধবিফ) রায়ে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ সতেজ হয়ে ওঠে বলে মনে হয়। জামায়াতের প্রায় সব নেতাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই শাস্তি দেয়া হতে পারে। সেই শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড। এর প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দল এ বিচারকে ইসলাম বিরোধী শক্তি ও ধার্মিকদের মধ্যে লড়াই বলে অভিহিত করে। এর ফলে মার্চে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের পথ সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়বার যখন তারা রাজধানীতে বিক্ষোভ করে তখন নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা হত্যা করে ৫০ জনকে। এখানে আসা যুবকরা গ্রামে একটি বার্তা বহন করে নিয়ে গেছেন। তাহলো ওই সমাবেশে হত্যা করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এতে সারাদেশে সরকারের জনপ্রিয়তা ধ্বংসের দিকে গেছে। তারপর থেকে চাঙ্গা হয়েছে বিএনপি। এতে জুন ও এপ্রিলে মেয়র নির্বাচনে প্রচণ্ড ধাক্কা খায় আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে গাজীপুরকে ধরা হয় শিল্প অঞ্চল। এ অঞ্চলকে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে নিরাপদ ঘাঁটির একটি ধরা হয়। সেখানেও আওয়ামী লীগ হেরে যায় মেয়র নির্বাচনে। এই অবস্থার পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। তারা ৪০ লাখ গার্মেন্ট কর্মীর বেতন কাঠামো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এই গার্মেন্ট শ্রমিকরা অনেক কারখানা নিরাপদ না হওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তারা ক্ষুব্ধ মে মাসে সাভারে রানা প্লাজা ভয়াবহভাবে ধসে যাওয়ার পর ১১২৯ জনের স্বজনকে দেয়া ক্ষতিপূরণ নিয়ে। বেতন বাড়ানোর মাধ্যমে অনেক ভোটারের মন জয় করা যেতে পারে। কিন্তু কারখানার বস বা মালিকরা এমন চুক্তি বা পরিকল্পনার বিরোধী বলেই মনে হচ্ছে। দলীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থানও দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারে। তার দলের এক তৃতীয়াংশ এমপি তাদের ওপর আক্রমণের ভয়ে এলাকায় যান না। দুরাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন উদাহরণ নেই। বিশ্বাসযোগ্য প্রার্থীদের বেছে নিলে তাদের দলে বিভক্তি দেখা দিতে পারে। সর্বশেষ শেখ হাসিনার পুত্র ও তার রাজনৈতিক উত্তরসূরি সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ের তিন সপ্তাহ রাজনীতিতে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় তাকে রাজনীতিতে নবীন বলে মনে হয় নি। রাজনীতিতে তার উত্তরাধিকার সূত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। তিনি অনেকটা অগ্রবর্তী। তিনি যেন আগামীকালই ল্ডন থেকে একটি বিমানে চড়ে বসেন। তার মায়ের স্বাস্থ্য ভাল নেই। তিনি তার বড় সন্তানের কাছে ক্ষমতা তুলে দিতে উদগ্রীব। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ মোকাবিলা করছেন। এতে আরও বলা হয়, আগামী নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিষয় যদি আগামীতে আওয়ামী লীগ রাজি না হয় তাহলে তারেক রহমান সোজা জেলে যেতে পারেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সাংবিধানিক সংকটকে বৃদ্ধি করতে পারে। আওয়ামী লীগও তীব্রতার সঙ্গে লড়াই করবে। কিন্তু নির্বাচনে যদি তারা পরাজিত হয় তাহলে বিএনপি তার দুর্নামগ্রস্ত উত্তরাধিকার ও মিত্র জামায়াতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে। অবশ্য যদি ততদিনে তাদের যদি ফাঁসি না হয়।