সৌদি আরবে কমানো হচ্ছে বিদেশী নির্মাণ শ্রমিক
সৌদি আরবে এবার নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে বিদেশী শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ সব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিদেশী প্রকৌশলীরা বলেছেন, তাদের নিয়োগকারীরা বিদেশী শ্রমিক কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেখানে ‘নিতাকাত’ কর্মসূচির আওতায় ওই সব শূন্য পদ পূরণ করা হবে সৌদি আরবের নাগরিকদের দিয়ে। কিন্তু এ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিদেশী নাগরিকদের চেয়ে সৌদি আরবের নাগরিকদের কর্মদক্ষতা কম। ফলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ শিল্পে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। এরই মধ্যে সাধারণ ক্ষমার অধীনে কয়েক লাখ অবৈধ শ্রমিককে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোয় অনেক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ।
উল্লেখ্য, নির্মাণ শিল্পে সেখানে নিয়োজিত রয়েছেন কয়েক লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক। সৌদি সরকারের নতুন এ পরিকল্পনায় চাকরি হারাতে পারেন বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। ওই রিপোর্টে বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ না থাকলেও এর প্রভাব পড়তে পারে তাদের ওপর। ফলে তাদের কেউ কেউ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।
বর্তমানে সেখানে যে নিয়ম আছে সে অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিতদের মধ্যে কমপক্ষে শতকরা ৭ ভাগ সৌদি নাগরিক থাকতে হবে, যাতে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয়। কিন্তু এখন নতুন করে বিদেশী শ্রমিক কমানোর পরিকল্পনা ও সে সব শূন্য পদে সৌদি আরবের নাগরিক নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনায় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রকল্পগুলোর স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, সৌদি আরবের নাগরিকরা বিদেশী নির্মাণ শ্রমিকদের মতো সমান দক্ষ নয়।
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। বছরে কমপক্ষে এক লাখ শ্রমিক সেখানে যান কাজ করতে। কিন্তু ২০০৯-২০১৩ সময়কালের মধ্যে শুধু ৭০৫৭৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক সেখানে কাজ পেয়েছেন।
একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক সালাহ আইয়েদ বলেন, সৌদি আরবের নাগরিকদের কাছে পছন্দের চাকরি বা পদ হলো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক পদ। এক্ষেত্রে টেকনিক্যাল পদে বিদেশীরা যতটা দক্ষ ততটা দক্ষ নন সৌদি আরবের নাগরিকরা। তাদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ বিদেশীরা। এ সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয় একবারে প্রশাসনিক অথবা টেকনিক্যাল পদে বিপুল সংখ্যক সৌদি নাগরিককে নিয়োগ দেয়ার জন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ সৃষ্টি করছে না।
রিয়াদে একটি নির্মাণ প্রকল্পে নিয়োজিত মিশরীয় প্রকৌশলী নাদের আবদুল আত্তি। তিনি বলেন, তার কোম্পানি ৫ জন টেকনিশিয়ান ও ২ জন প্রকৌশলীকে চাকরি থেকে বাদ দিচ্ছে। এর মাধ্যমে শ্রম মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া শতকরা ৭ ভাগ সৌদিকরণ করা হবে। তবে অদ্ভুত বিষয় হলো, এরই মধ্যে এ কোম্পানিতে প্রশাসনিক ও আর্থিক বিভাগে কর্মরত রয়েছেন বিপুল সংখ্যক সৌদি নাগরিক।
জেদ্দা চেম্বার ফর কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কনট্রাক্টর কমিটির একজন সদস্য আবদুল্লাহ বকর রাদওয়ান। তিনি নিশ্চিত করে বলেছেন, কাউন্সিল অব মিনিস্টারস দ্য সৌদি জেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শতকরা ৭ ভাগ কোটা পূরণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার করা হচ্ছে যাতে এসব খাতে অধিক সংখ্যক স্থানীয় চাকরি করতে পারেন। তিনি বলেন, এই স্কিমের আওতায় তরুণ সৌদি নাগরিকদের ছোটখাটো কোন উদ্যোগ নিয়ে ব্যবস্থাপনার কাজ পুনঃস্থাপনে সহায়তা করবে। এ পদক্ষেপে অনেক সৌদি নাগরিকের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৌদি আরবের নাগরিকরা যাতে টেকনিক্যাল কাজ করতে পারেন সে জন্য আমরা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করব অর্থায়নে।
সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে ২০১৩ সালে কয়েক লাখ বিদেশী শ্রমিক সৌদি আরব ছেড়ে গেছেন। এর ফলে অনেক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে পড়েছে। এ খাতের রিপোর্টে বলা হয়েছে, অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু করায় শ্রমিকের যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তাতে শতকরা ৩৬ ভাগ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড বিলম্বিত হয়েছে। যে সব কোম্পানিতে শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে এমন কিছু কোম্পানিতে ও কিছু নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সরবরাহ দেবে ১৮টি নিয়োগকারী কোম্পানি। এর ফলে এসব কোম্পানির সঙ্কট কিছুটা সমাধান হতে পারে।