‘দেশে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক সাংবাদিক লেখকেরা ভাগ হয়ে যাচ্ছে’
শহীদুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র থেকে: নিউইয়র্কে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংবাদপত্র’ শীর্ষক এক সেমিনারে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেছেন, একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক দুজনেই বিবেক নিয়ে কাজ করেন। তারা সমাজ তথা রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজ করেন। তাই সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য থাকলে তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, দেশে আজ মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, লেখক-সাহিত্যকেরা ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং কাম্য নয়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকাটা জরুরি।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত এই সেমিনারে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইমদাদুল হক মিলন। সেমিনারে অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও টিভি টক-শো আলোচক নঈম নিজাম।
প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক দর্পণ কবীর ও যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদের সঞ্চালনে সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন লেখক বেলাল বেগ, সাংবাদিক আনোয়ার হোসাইন মঞ্জু, মঈনুদ্দিন নাসের, লাবলু আনসার, কাজী শামসুল হক, আহমেদ মূসা, শরীফ শাহাবুদ্দিন, মুজাহিদ আনসারী, মীর শিবলী, তাওহীদুল ইসলাম, সনজীবন কুমার, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাঈদ রহমান মান্নান ও তারেক হাসান। সেমিনারে ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার মনজুর কাদের।
সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে পড়ছে বলে বাংলা সাহিত্যও আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্র সম্পর্কে বক্তারা বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। যে কোন আইনের খড়গ ‘মুক্ত সাংবাদিকতা’কে বাধা গ্রস্থ করে। দেশের সাংবাদিক সমাজকেও রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে। সাংবাদিকরাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে দেশ তথা সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেন।
সেমিনারে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘‘আমি যখন কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হলাম তখন অনেকে ভয় পেয়ে গেলেন মনে করলেন আমার সাহিত্য শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অনেক বড় সাহিত্যিক সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক ছিলেন। আনন্দ বাজার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সন্তোষ কুমার ঘোষ সাহিত্যের এবং সাংবাদিকার ভাষাকে এক করে দিয়েছেন। তিনি সাহিত্যের সঙ্গে সাংবাদিকতা ভাষাকে অন্য এক মাত্রা এনে দেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিকরা সমাজের বিবেক তবে এখন তা অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। যখন মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাহিত্যক-সাংবাদিকদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ছায়া তলে বিভিক্ত হয়ে যেতে দেখি তখন আমি বুঝি আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। আজকের দিনে সেই সাহসী সাংবাদিকতা আর পাই না।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘একটি বিচিত্র সমাজে আমরা সববাস করছি। বাংলাদেশকে বদলে দেবার জন্য আমাদের কিছু সৃজনশীল কিছু সাহসী মানুষ দরকার। সেই কাজটি করতে পারে আমাদের সাংবাদিকরা।’’
নঈম নিজাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সাহিত্য এবং সাংবাদিকতা দুটি বিষয় গভীরভাবে জড়িত। নানান মত এবং পথ থাকবে কিন্তু দেশের সংবিধানের এবং চেতনার সঙ্গে কোনো বিরোধ থকবে না। আমেরিকা যখন ইরাক বা আফগানিস্তানে যুদ্ধে যায় তখন এখানকার মূল পত্রিকাগুলো সে দেশের নিরীহ মানুষের কথা বিস্তরভাবে লিখতে পারে না।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন যারা উইনিয়ন সাংবাদিকতা তথা নেতৃত্ব করেন তাদের অনেকে কখনোই সাংবাদিকতা করেন নাই। কেউ কেউ অখ্যাত পত্রিকার সাংবাদিক। তাদের জন্য আমাদের ঐক্য হচ্ছে না। তারা ইউনিয়নের নেতা হয়ে বিরোধ জিইয়ে রাখেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘লতিফ সিদ্দিকীর মতো মানুষের বিরোধীতা করা এবং আমাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সকল সাংবাদিকদের এক হতে হবে। সব সাংবাদিকদের ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রথিতযশা ফটো সাংবাদিক আজিজুর রহিম পিউ’র অকাল মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।