এমএফএ জামান মুসলিম এইডের সেরা ভলান্টিয়ার নির্বাচিত
অন্যের ব্যথায় সমব্যথী হওয়া এবং পরের বিপদে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়া একজন মুসলিমের মহৎগুণ। ইসলাম মানবসেবা, মানবকল্যাণ এবং জনহিতকর কাজকে গুরুত্ব দিয়েছে। শুধু গুরুত্ব প্রদানই নয়; বরং এসব কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে। ইসলামে মানবসেবা, পরোপকার একজন মুসলিমের সর্বোত্তম গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আর এই মানবসেবায় অনন্য অবদানের জন্য এমএফএ জামান এবার আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা মুসলিম এইডের সেরা ভলান্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবক) নির্বাচিত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা মুসলিম এইড ১৯৮৫ সাল থেকে বিশ্বের দুর্যোগপূর্ণ ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোতে আর্তমানবতার সেবায় সাফ্যলের সাথে কাজ করে আসছে। আর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে মুসলিম এইডের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভলান্টিয়ার টিম অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবক দল। এই ভলান্টিয়াররা নিজেদের অতিরিক্ত সময়, জ্ঞান ব্যয় করছেন মানবতার সেবায়। আর এই ভলান্টিয়ারদের উৎসাহ এবং কাজের স্বীকৃতি দিতে মুসলিম এইড ইউকে আয়োজন করে ভলান্টিয়ার চ্যারটি ডিনার নাইট। পূর্ব লন্ডনের শর্ডইচ টাউন হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুসলিম এইডের লন্ডন, বামিংহাম, ম্যানচেষ্টার, ব্রাডফোর্ড সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় তিন শতাধিক ভলান্টিয়ার এবং ষ্টাফগণ উপস্থিত ছিলেন। পবিত্র কোরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে এবং মুসলিম এইড ইউকের ভলান্টিয়ার অফিসার ফরিদুল ইসলাম এবং ফান্ডরাইজিং অফিসার আলী গোলামের যৌথ উপস্থাপনায় শুরু হয়।
এই অনুষ্ঠানে মুসলিম এইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-সিইও জনাব হামিদ আজাদ তার বক্তব্যে বলেন, মুসলিম এইড ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজগুলোকে সম্পন্ন করতে আমাদের দাতাগণ আর্থিকভাবে সবসময় সাহায্য করে যাচ্ছেন। আমরা যখনই তাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি; তারা সবসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা বিশ্বের প্রায় ৪০ টিরও বেশি দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এই প্রতিটি পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের ভলান্টিয়াররা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক ভলান্টিয়াররা পরিবার, পড়ালেখা, চাকুরীসহ বিভিন্ন ব্যস্ততার পরও মুসলিম এইডের ফান্ড রাইজিং, ইভেন্ট সহ বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের অবসর সময়টুকু দিচ্ছেন। যা সত্যিই প্রশংসনীয়। আর একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভলান্টিয়ার টিম একটি চ্যারিটির সাফল্যকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
মুসলিম এইডের ভলান্টিয়ার চ্যারটি ডিনার নাইটে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুসলিম এইডের চেয়ারম্যান ড. মানজির আহসান এমবিই, ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুস সালাম, সেক্রেটারী ড. মোহাম্মদ আব্দুল বারী এমবিই, কমিউনিটি লিয়াজো অফিসার মোহাম্মাদ ওলায়েত খোকার এমবিই, ইক্বরা ইসলামিক অক্সফোর্ডের ডাইরক্টের ড. শেখ রামজি, লন্ডন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ফায়ার সেইফটি অফিসার পল ডাউসন, বিপিপি ফুড এন্ড ক্লথ্স ড্রাইভ চ্যারিটির চেয়ারম্যান জেমস এডিলেক, মুসলিম এইড ইউকের ফান্ড রাইজিং ম্যানেজার জুনায়েদ আহমদ, ফান্ড রাইজিং অফিসার সুলতান আহমদ, জাহাঙ্গির আহমদ, আহমেদ তালাদিয়া, সাঈদ হোসেন, তাবরিজ খান, এবং মুসলিম এইড বার্মিংহাম ও ম্যানচেষ্টারের কর্মকর্তাগণ। এছাড়া অন্যান্য চ্যারিটির কর্মকর্তাগণ ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ে আরো ভলাান্টিয়ারদেরকে পদক প্রদান করা হয়। মুসলিম এইডের চেয়ারম্যান ড. মানজির আহসান এমবিই কাছ থেকে এমএফএ জামান তার বিশেষ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা মুসলিম এইডের সেরা ভলান্টিয়ার এমএফএ জামান বলেন, আমাদের প্রিয় নবী বলেছেন, তোমাদের মাঝে যারা প্রতিবেশীকে উপোস রেখে খাবার গ্রহণ করে, সে আমার অনুসারী নয়। ইসলাম ও নবী মুহাম্মদ (স) এভাবেই মানবসেবাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই আমি একজন মুসলমান হিসেবে নিজেকে মানবকল্যাণমূলক কাজে জড়িত থাকা এবং মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখাকে আমার নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করি। নবী মুহাম্মদ (স) তার গোটা জীবনকে মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেছেন। তিনি শুধু নিজ জাতি কিংবা মুসলমানদের ব্যাপারে নয়: বরং ভিন্নধর্ম-বর্ণের মানুষের সেবার ক্ষেত্রে উজ্জল দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য রেখে গেছেন। আর মুসলিম এইডের মাধ্যমে আমি মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এছাড়া আমি মুসলিম এইড কর্মকর্তা এবং ভলান্টিয়ারদেরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই কারণ তাদের আন্তরিক সহযোগী ছাড়া আজকে আমার বিশেষ পুরষ্কার অর্জন করা কখনই সম্ভব হতো না। আর আমি এই মহৎ কাজকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই এজন্য আমার প্রয়োজন সবার আন্তরিক সাহায্য এবং দোয়া।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ আমাকে সুস্থ শরীর দান করেছেন; এটি একটি বড় নিয়ামত। আল্লাহ সূরা আর-রাহমানে বলেছেন, অতএব তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? তাই আমি মনে করি আমার এই সুস্থ শরীর দ্বারা বঞ্চিত-নিপিড়িত মানুষের সেবা করা উচিত; হোক সে কালো কিংবা সাদা অথবা মুসলিম কিংবা অমুসলিম। দৈহিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য কাজ সবোর্ত্তম উপকরণ আর ভালো কাজ মানুষকে সবসময় খারাপ কাজ-চিন্তা থেকে দূরে রাখে। একজন মানুষের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে এই কর্মপ্রচেষ্টা। আমাদের নবী (স) নব্ওুয়াত প্রাক্কালে হিলফুল ফুযুল নামক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি কিছু সংখ্যক যুবককে নিয়ে এই মর্মে অঙ্গিকারাবদ্ধ হন, আমরা নিঃস্ব ও অসহায় দুর্গতদের সেবা করবো, অত্যাচারীকে প্রাণপণে বাধা দিবো, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করবো এবং বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সাম্য-সম্প্রীতি স্থাপনে সচেষ্ট হবো।
এছাড়া নবী মুহাম্মদ (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ লাঘবে তাকে সাহায্য করবে; আল্লাহ তার কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দিবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কষ্ট থেকে ছাড় দিবেন (মুসলিম)।
মুসলিম এইডের একজন ভলান্টিয়ার হিসেবে আমি বলতে পারি, মানবসেবায় নিজেকে জড়িত করতে মুসলিম এইড একটি অনন্য সুযোগ। তাই আমাদের তরুণ ভাই-বোন এবং যাদের হাতে অবসর সময় আছে তাদের সবাইকে মুসলিম এইডের একজন গর্বিত ভলান্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবক) হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ গ্রহণের অনুরোধ রইলো।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত এমএফএ জামান মুসলিম এইড ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার সাথে জড়িত। তিনি ভলান্টিয়ার সেন্টার লুইসামের একজন ট্রাস্টি হিসেবে গত ৩ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া লন্ডন অলিম্পিক ২০১২ এ তিনি লন্ডন এম্বেসেডর হিসেবেও কাজ করেছেন এবং টিম লন্ডন, নিউহাম ক্রিকেট ক্লাব, ইউনিভার্সেল পিস ফেডারেশন, নিয়ার নেইবার্স, সেন্ট জোনস এম্বুলেন্স এবং বারটস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের একজন সদস্য। তিনি আগামী লন্ডন ম্যারাথন ২০১৫ তে পঙ্গু শিশুদের সাহাযার্থে ফান্ড রাইজিংয়ের জন্য দৌড়াবেন। তিনি বাংলাদেশ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতি সিলেটের প্রতিষ্ঠিতা চেয়ারম্যান, বিয়ানীবাজার নিবাসী মরহুম আলহাজ্ব আমির আলীর নাতি ও সিলেটের বন্দর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ন্যাশনাল ফামের্সীর স্বত্তাধিকারী বদরুজ্জামানের পুত্র। সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল, প্রখ্যাত আলেম আলহাজ্ব মাওলানা মছদ্দর আলী তার নানা এবং সিলেট জজ কোর্টের এপিপি আলী মোস্তফা মিশকাতুন নূর তার মামা।