১০ বছরের কম শিশুদের জন্য হজে যেতে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব
১০ বছরের কম শিশুদের জন্য আগামী বছর থেকে হজে যেতে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। সৌদি আরবের আল-ওয়াতান পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, হজ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও হজ মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার এক সাম্প্রতিক বৈঠকে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবটি নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। এটা শুধু আলোচনার একটি বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়।
বার্ষিক হজের সময় উচ্চ তাপমাত্রা আর অনেক বেশি সংখ্যক লোক সমাগম শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও শিশুদের নানা রোগে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব ইস্যুতে এমন প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এ বছর হজেও শ’ শ’ শিশুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শয়তানকে পাথর বর্ষণের জন্য জামরাত ব্রিজ পার হওয়ার সময়ও অনেক পিতা-মাতা সন্তানকে সঙ্গে রেখেছেন। সাধারণত হজের এ আচারটি দুপুরের দিকে অনুষ্ঠিত হয়। সক্ষম হজযাত্রীদের জন্য এটা অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করা হয়। হজ মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের দলগুলো নজরে পড়েছে উপস্থিত শ’ শ’ শিশুদের দুই-তৃতীয়াংশের বয়সই ছয়ের নিচে। মন্ত্রণালয়ের আনুমানিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিশুদের উপস্থিতি ছিল ৫ হাজার থেকে ৭ হাজারের মধ্যে। এদের মধ্যে অনেক শিশু ক্লান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভারতের হজ মিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় হজযাত্রীদের মধ্যে ১০-এর নিচে বয়স ছিল ১৪৪ জনের। এছাড়াও নবজাতকের সংখ্যা ছিল ৫২। এর আগে ভারতে নবজাতকদের কোন হজ ভিসা প্রয়োজন হতো না। তাদেরকে কোটায় গণনা করা হতো না। এ বছর থেকে অবশ্য তাদেরকেও হজযাত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কূটনীতিকরা মনে করছেন এ প্রস্তাবের যথার্থতা রয়েছে।
এক কূটনীতিক বলেন, হজ পালন পরিশ্রান্তিকর আর শিশুদের ঝুঁকির মুখে ফেলা উচিত নয়। সৌদি আরবের স্থানীয় অনেক পিতা-মাতা বলছেন, বাড়িতে তাদের সন্তানদের দেখভাল করার মতো কেউ নেই। কাজেই তারা বাচ্চাদের নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। পক্ষান্তরে পশ্চিমা হজযাত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গিটা ভিন্ন।
তারা বলছেন, শিশুদের সঙ্গে করে নিয়ে না আসলে তারা ইসলামের মহিমা উপলব্ধি করতে পারবে না।
বৃটিশ নাগরিক রাফি পাটেল বললেন, এ বছর লন্ডন থেকে আমার বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি যেন তারা নিজেরা ইসলামের সত্যিকার সৌন্দর্য দেখতে ও উপলব্ধি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা হয়তো আমাদের সন্তানদের এটা বলতে পারি ইসলামের দৃষ্টিতে সবাই সমান। কিন্তু শুধুমাত্র হজেই এ চর্চাটি দেখা সম্ভব। আর শিশুদের মনে এর কি যে প্রভাব পড়ে সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
১০ বছরের কম শিশুদের হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের পক্ষে রয়েছে তুরস্ক, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার হজযাত্রী স্থাপনার প্রধান তারেক আঙ্গাবি।
তিনি বলেন, এ বছর আসা বিদেশী হজ পালনকারীদের মধ্যে নিজ সন্তান সঙ্গে নিয়ে আসা বেশির ভাগ ছিল বৃটিশ পরিবার। তবে এ সংখ্যা সীমিত ছিল বলে তিনি উল্লেখ করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্তান সঙ্গে করে নিয়ে আসার কারণ দেশে তাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদেরে দলগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। আমরা বড় তাঁবুর নিচে দক্ষ সহকর্মীদের অধীনে বাচ্চাদের রেখে হজের নানা আচার পালন করতে যাই।’ প্রস্তাবটির অনুমোদন হলে তা সিনিয়র স্কলারদের কাউন্সিলে বিবেচনার জন্য দাখিল করা হবে।