ফিলিস্তিনকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি ইউকের

কায়রোয় দাতা দেশগুলো একটি সম্মেলন করলো গত ১২ অক্টোবর। ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার গাজায় পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য তারা দেবে বলে অঙ্গীকার করলো দাতারা। বিধ্বস্ত গাজার পুনর্নির্মাণে এর আগেও কয়েকবার অর্থ সাহায্য দেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আবার হয়তো দিতে হবে- উল্লেখ করে দাতাদের বেশকিছু প্রতিনিধি মূল সমস্যা সমাধানের প্রতি শরিক পক্ষগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তারা ইসরাইলী হামলায় গাজা আবারও বিধ্বস্ত হতে পারে এবং গাজার পুনর্গঠনে দাতা দেশগুলোকে আবারও সাহায্যে এগিয়ে আসতে হতে পারে। তাই তাদের মতে, অবস্থার এই পুনরাবৃত্তি আর চলতে দেয়া যায় না।
গাজায় ইসরাইলী দখলদারি এবারে ৪৮ বছরে পা দিল। এটিই হচ্ছে গাজার জন্য মূল সমস্যা। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উদ্যোগী হতে দেখা গেলো গ্রেট বৃটেনকে। বৃটিশ হাউস অব কমন্স ২৭৪-১২ ভোটে যে প্রস্তাবটি পাশ করে তাতে বলা হয়, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ইউকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেবে। বলা হয়, তাদের গৃহীত প্রস্তাব সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রিক মীমাংসা খুঁজে পেতে সহায়ক হবে। গাজায় ইসরাইলী দখলদারি বহাল রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রস্তাব পাশের আগে ইসরাইলের অনুমতি নেয়ার ইউকে প্রয়োজন বোধ করেনি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার সুইডেনের নতুন প্রধানমন্ত্রীও আগ্রহ প্রকাশ করেন গত ৩ অক্টোবর। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবার আগ্রহ ১৩৪টি জাতিসংঘ সদস্য দেশ ইতোমধ্যেই ব্যক্ত করেছে। এই লক্ষ্যে ইইউ হয়তো আরও বেশি এগিয়ে যেতে পারে। হয়তো দেখা যাবে ২০ সদস্য সম্বলিত পুরো ইইউ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে দিচ্ছে এবং তারপর ঘোষণা দিচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে ও জাতিসংঘ প্রস্তাব মোতাবেক একটি সুনির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে ইসরাইল নিজেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার যদি না করে তাহলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা আর্থিক অবরোধ আরোপ করবে এবং ইসরাইলী অবাধ্যতা অব্যাহত থাকলে অবরোধ আরও কঠোর করা হবে। উল্লেখ্য, ইইউ এখনও পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি।
ইসরাইলের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে ইউরোপ। ইসরাইলীদের সাংস্কৃতিক বাস্তুভূমিও বলা হয় ইউরোপকে। বহু ইসরাইলী মনে করেন, ইউরোপ হচ্ছে ইসরাইলের বাইরে তাদের নিজস্ব নির্জন নিবাসগৃহ।
আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ প্রস্তাব ইসরাইল অমান্য করার অজুহাতে দেশটির বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধ আরোপে ইইউ প্রকৃতই যদি এগিয়ে আসে, তহলে ফিলিস্তিনে ইসরাইলী দখলদারীর সমাপ্তি এবং আন্তর্জাতিক প্রস্তাব অনুযায়ী দুই রাষ্ট্রভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার নিষ্পত্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে দেখা দেবেÑ নিশ্চিত বলা যায়। কোন সময়টিতে তা ঘটবে- বাকি থেকে যাবে কেবল এই প্রশ্নটির উত্তর।
ইউরোপের উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যে এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবেÑ অনেকেই মানতে রাজি নন। ইসরাইল ও আমেরিকার সঙ্গে এযাবত বরাবর সরল ও নির্বিরোধ সম্পর্ক ইউরোপ বহাল রেখে এসেছে। সহমর্মিতা বা অনুগমন যাই বলা হোক- ইউরোপের ঘোষিত মূল্যবোধ ও ইউরোপের স্বার্থ এর ফলে পরিপুষ্ট হয়নি। পক্ষান্তরে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ইউরোপের সত্যভাভিত্তিক যুদ্ধ সংঘাত এর ফলে আজকাল বিকট চেহারা নিয়ে দেখা দিয়েছে। এর তুলনায় আনুপাতিক ন্যায় চেতনার ভিত্তিতে ইসরাইলী ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্যেই নিজেদের কল্যাণ খুঁজে নিতে চাইতে পারে ইউরোপ- এটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। সেই সামর্থ্য ইউরোপের নেই- যারা মনে করেন, তদের ধারণা ভুল।
ফিলিস্তিনী-ইসরাইলী সমস্যার সমাধান প্রস্তাবকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন অনেকে। ১৯৬৭ যুদ্ধে দখলকৃত ফিলিস্তিনের পুরোটাই বর্তমানে রয়েছে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে। ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অবশিষ্ট অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ১৯৬৭ যুদ্ধভিত্তিক পরিবর্তিত এই গঠন বিন্যাসটিকেই দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত বলে চিহ্নিত দেখতে চান। কিন্তু এই অবস্থা শুধু ফিলিস্তিনীরা নন, বহু আরব দেশই মেনে নিতে অপ্রস্তুত। ১৯৬৭ যুদ্ধ পরবর্তী পরিবর্তিত ভূবিন্যাসের ওপর বর্তমানে ভিত্তিশীল ফিলিস্তিনকে ইসরাইলের সঙ্গে কালো এক ধরনের সংলাপভিত্তিক শান্তি সমঝোতায় বসাতে আগ্রহীদের ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিন না জবাব দিয়েছে।
মিলিত ফিলিস্তিনী ইসরাইলী একক রাষ্ট্রে গঠন প্রস্তাব ইসরাইল মানবে না কারণ সে অবস্থায় ইসরাইলীরা নিজেরাই সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে। সমস্যা ও সমস্যার নিষ্পত্তি তাই এতো বছর পরেও যথাপূর্ব অবস্থানে বিরাজমান দেখা যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে সমস্যার যথার্থ মীমাংসা কেবল তখনই বেরিয়ে আসবে যখন ফিলিস্তিনে তার দখলদারীর অবসান ঘটাতে ইসরাইল প্রস্তুত হবে। এই লক্ষ্যে এগোনোর ইসরাইলী নেতৃত্বের মধ্যে আগ্রহ জন্ম দিতে ইসরাইলের তথাকথিত বন্ধুরা এ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথবা তাদের ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্যে সমস্যার ন্যায়ভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত মীমাংসার পথে ইসরাইলকে এগিয়ে নেয়ার কোনো প্রয়োজন বোধ তারা করেনি।
ইউকের দৃষ্টান্ত অনুসরণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা ও সাহসিকতায় সঞ্জীবিত ইউরোপীয় নেতৃত্ব সমস্যার ন্যায্য নিষ্পত্তির পথে এগিয়ে আসতে ইসরাইলকে বাধ্য করবেন- এমন প্রত্যাশা করা অনেকের ধারণা বাস্তবতাবর্জিত হবে না। আরব নিউজ

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button