ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছেন ল্যাটিন আমেরিকানরা

Latinনিজ ভূমি থেকে অনেক দূরে অবস্থানকারী ল্যাটিন আমেরিকানরা নিজেদের পরিচিতির সন্ধান করতে গিয়ে ক্রমবর্ধমান হারে ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে। ইসলামের শিক্ষা ও দিক-নির্দেশনা জীবনে তারা পেয়েছে।
ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী ও ল্যাটিন আমেরিকানদের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে একটি বইয়ের লেখিকা স্টেফানি লন্ডনে গত ১৮ অক্টোবর ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কোনটা অনুমোদিত বা হালাল এবং কোনটা নিষিদ্ধ বা হারাম ইসলামে তা পরিষ্কারভাবে বলা আছে। সুতরাং তারা সঠিকভাবে জানে কি করতে হবে। পবিত্র কুরআন হচ্ছে একটি দিক-নির্দেশনামূলক পুস্তক। এতে পরিষ্কার বলা আছে কি খেতে হবে, কি পরতে হবে, কিভাবে হাত-পা ধুইতে হবে, কিভাবে মানুষের সাথে আচরণ করতে এবং কিভাবে প্রার্থনা করতে হবে।
গত কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান হারে ল্যাটিন আমেরিকানরা ইসলাম গ্রহণ করছে।
‘হোয়াই ইসলাম’ নামে একটি সংস্থার হিসাব অনুসারে আমেরিকান মুসলমানদের ৬ শতাংশ হচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকান। ল্যাটিন আমেরিকান মুসলমানদের উন্নয়নে গঠিত ল্যাটিনো দাওয়া নামক একটি সংস্থার হিসাবেও একই ধরনের সংখ্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংস্থা আরও জানিয়েছে, যারা ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে নারী। যদিও সরকারি কোন হিসাব নেই, তবে মনে করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ থেকে ৮০ লাখ মুসলমান বাস করে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলমানদের ৬ শতাংশ হচ্ছে হিস্পানিক। দেশটিতে জন্মগ্রহণকারী ইসলামে ধর্মান্তরিত প্রতি ১০ জনের একজন হচ্ছে হিস্পানিক। দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে।
আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল ২০০৬ সালে হিসাব দিয়ে জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাটিন আমেরিকান মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ।  নিউইয়র্ক, শিকাগো, লসএঞ্জেলস ও মিয়ামীর মতো জায়গায় ল্যাটিন আমেরিকান মুসলমানদের বেশিরভাগের বাস। কারণ এসব স্থানে ল্যাটিন আমেরিকানদের বেশিরভাগ বসবাস করে। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে অধিকাংশ ল্যাটিন আমেরিকান মুসলমানদের বসবাস। কোন কোন ল্যাটিন আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার পর তাদের নিজেদের পরিচিতি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে।
গ্রেইসা তোরেম নামক মহিলা কিউবা থেকে ৪ বছর আগে এখানে আসেন। তিনি জানান, ৪ বছর আগে তিনি তার এখানে আসার মধ্য দিয়ে নিজের পরিচিত হারিয়ে ফেলেন এবং ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর মধ্যে তা খুঁজে পেয়েছেন। কিউবান এই মহিলা সবাইকে ছেড়ে শুধুমাত্র তার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে এখানে আসেন। ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছেন। তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তার দ্বিতীয় ছেলে মাহদি গর্ভে ছিল। তোরেস বলেন, প্রথমে যখন এখানে আসি তখন খুব একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ি। কারণ এখানে কাউকে চিনতাম না। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে আমার পরিবার। এমন একটি কঠিন অবস্থায় আমার সন্তান মাহদি ভূমিষ্ঠ হবে। এ কারণেই আমি ইসলামে দীক্ষিত হই। কারণ এটা হচ্ছে একটা পবিত্র ধর্ম। নারীবাদী মুসলমানরা হয়তো হিজাব পরিহার করবে তবে অনেক ল্যাটিন আমেরিকান তা গ্রহণ করছে।
এ প্রসঙ্গে তোরেস বলেন, যখন মানুষ আপনাকে দেখবে তখন প্রথম দৃষ্টিতেই তারা আপনার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে। দ্বিতীয়: এটা একটা আবেগ অনুভূতির বিষয়। কারণ আপনি ভিন্ন একটা কিছুতে বিশ্বাস করেন। এটা একটা খুব মজার বিষয়।
তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষের ধারণা, সব আরব মুসলিম এবং সব হিস্পানিক ক্যাথলিক খৃস্টান। আপনি যখন হিজাব পরে রাস্তায় বের হবেন তখন এই ঐতিহ্যবাহী ও গৎবাঁধা ধারণা ভেঙ্গে যাবে। ইসলামে হিজাব হচ্ছে বাধ্যতামূলক পোশাক, এটা কোন ধর্মীয় প্রতীক নয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button