ট্রজান হর্সের খোঁজে টাওয়ার হ্যামলেটসে অফস্ট্যাড
টাওয়ার হ্যামলেটসের ছয়টি স্কুলের সিলেবাসে ইসলামিক শিক্ষা অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করছে-এমন উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ার পর আকস্মিকভাবে এসব স্কুল পরিদর্শন করেছে অফস্ট্যাড পরিদর্শক দল। ট্রজান হর্স ষড়যন্ত্র নামে তথাকথিত যে প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ইসলামীকরণ করে ফেলা হচ্ছে মর্মে আশঙ্কা বিরাজ করছে, তা মোকাবেলার উদ্দেশ্যেই ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থানে অফস্ট্যাড তাদের ততপরতা বৃদ্ধি করেছে। এরই অংশ হিশাবে টাওয়ার হ্যামলেটসের ভালো ফলাফল করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও হানা দিচ্ছে ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন। টাওয়ার হ্যামলেটসের যে ছয়টি স্কুলে অফস্ট্যাড আকস্মিকভাবে পরিদর্শনে এসেছিল তাদের মধ্যে পাঁচটিই বেসরকারি স্কুল; একটি ছিল চার্চ অফ ইংল্যান্ড প্রাইমারি স্কুল।
যে সকল স্কুল পরিদর্শন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ইস্ট লন্ডন মসজিদের পরিচালনাধীন ছেলেদের জুনিয়র স্কুল লন্ডন ইস্ট একাডেমি ও আল মিজান একাডেমি। আরো পরিদর্শন করা হয়েছে জামিয়াতুল উম্মা সেকেন্ডারি ও স্যার জন কাস এন্ড রেড কোট চার্চ অফ ইংল্যান্ড সেকেন্ডারি স্কুল। অন্য দুটি স্কুলের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, লন্ডন ইস্ট একাডেমি ও আল মিজান প্রাইমারি এই দুটি স্কুল শিক্ষা ও শিক্ষাদানের গুণগত মানের জন্য ২০১১ সালে অফস্ট্যাড কর্তৃক গুড রেইট লাভ করে। আর ছাত্রদের আতি“ক, নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগ্রতির জন্য এই দুটি স্কুল আউটস্ট্যান্ডিং রেইট লাভ করে। সরকারের একটি সূত্র সানডে টাইমসকে বলেছেন, কয়েকটি স্কুলের কারিকুলাম নিয়ে সুনির্দিষ্ট উদ্বেগ ছিল। এই সকল স্কুলের বিষয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার পর এই ছয়টি স্কুল পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় অবস্থিত মারনার প্রাইমারি স্কুলেও ট্রজান হর্স ষড়যন্ত্রের সন্দেহে সেখানেও বিশেষ ব্যবস্থা নেয় অফস্ট্যাড। তবে বার্মিংহামের কয়েকটি স্কুলের মতো একই কায়দায় টাওয়ার হ্যামলেটসের মারনার স্কুলে ট্রজান হর্স উপাদান থাকার সন্দেহ নাকচ করে দিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি পরিদশর্ক দল এ ধরনের কোন কিছু পায়নি।
উল্লেখ্য, বার্মিংহামের যে কয়টি স্কুলে ট্রজান হর্স প্লট বাস্তবায়িত হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছিল, তাদের মধ্যে তিনটিতে ওই অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। বার্মিংহামের অভিযুক্ত স্কুলগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে, সেখানে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষ ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথকভাবে বসানো হতো এবং কারিকুলামে ইসলাম সম্পর্কে উগ্রপন্থী শিক্ষা সন্নিবেশিত করা হয়েছিল।
টাওয়ার হ্যামলেটসের ছয়টি স্কুলে অফস্ট্যাড প্রতিনিধি দলের সাম্প্রতিক পরিদর্শন সম্পর্কে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, বেসরকারি স্কুলগুলোর পরিচালনা ও তাদের পারফরমেন্স তদারকি করার ক্ষমতা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নেই। এটি অফস্ট্যাড ও অন্যান্য এজেন্সির দায়িত্ব।
সানডে টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, কেবল সেপ্টেম্বর মাসেই ট্রজান হর্স ততপরতা প্রতিরোধ করতে ইংল্যান্ডের ৪০টি স্কুল পরিদর্শন করেছিল অফস্ট্যাড। টাওয়ার হ্যামলেটসের শেডওয়েল এলাকায় অবস্থিত সিদ্দিক একাডেমি নামের একটি টিউশন সেন্টারেও গত মাসে অভিযান চালায় পুলিশ। স্থানীয় কাউন্সিলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। টাওয়ার হ্যামলেটসের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনকে জানানো হয়েছিলো যে, কাউন্সিলের প্ল্যানিং পারমিশন ছাড়াই ওই টিউশন সেন্টারের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
অথচ ওই ঘটনার কাছাকাছি সময়ে খোদ হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে বার্মিংহামে দলের কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ও এর মেয়র লুতফুর রহমানকে জড়িয়ে অযাচিত বক্তব্য দেন। মেয়রকে বিভাজিত রাজনীতির জন্য দায়ী করে তিনি বার্মিংহামের মতো টাওয়ার হ্যামলেটসেও ইসলামিক চরমপন্থা বিস্তার লাভ করছে বলে ইঙ্গিত করেন। হোম সেক্রেটারির ওই বক্তব্য ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে। সরকারের কোন মন্ত্রীর এ ধরনের কোন বক্তব্য নজীরবিহিন।
মেয়র লুতফুর রহমান তাঁর এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে হোম সেক্রেটারির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।