নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কোনো প্রশ্ন নেই : প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির সাথে সংলাপের সম্ভাবনা আবারো নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বারবার ওই খুনীদের সাথে বসার জন্য এতো আকুলি বিকুলি কেন? বিএনপি কি দিয়েছে? প্রতিদিন বোমার আওয়াজ আর অস্ত্রের ঝনঝনানি না শুনলে আপনাদের ভালো লাগে না, নাকি শান্তিতে থাকতে ভালো লাগে না। যারা রাজনীতির আস্তাকুড়ে চলে গেছে তাদের জন্য আপনাদের এতো দরদ কেন?
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফর নিয়ে বৃহষ্পতিবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বিএনপি জোটের সম্ভাব্য আন্দোলনের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান ছিলাম তাই অনেক কিছু করতে পারিনি। এখন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আছে। এবার দেশের মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক, দেশের একটা মানুষের ক্ষতি করলে খবর আছে। যে যেখানে পারেন সেখানেই তাদের প্রতিরোধ করবেন। আমরা আপনাদের সাথে আছি।
আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা ও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দাবিতে রোববার ইসলামী দলগুলোর হরতালের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই মামলার (খালেদার) তারিখ পড়ে তখনই হুমকি ধামকি আর হরতালের ঘোষণা আসে। তিনি যেহেতু দুর্ণীতি করেছেন, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন তাই মামলার হাজিরা থেকে বাঁচার জন্য হরতাল ডাকা হয়। না হলে মামলার মোকাবেলা করতে ভয় কিসের?
লতিফ সিদ্দিকী সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেইনি তা ঠিক নয়। যারা তা বলছে, তারা মিথ্যা বলছে। আমরা তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকেও বাদ দিয়েছি। তাকে শোকজ করেছি। তিনি জবাবও দিয়েছেন। আগামীকাল দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাই যারা তাকে গ্রেফতারের দাবি করছে তাদের বলবো আপনারা পারলে তাকে ধরিয়ে দিন। তিনি কোথায় আছে বলুন। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি আরো নেবো। তার জন্য হরতালের প্রয়োজন নেই। নতুন নতুন ইস্যু বানালেই হবে না। মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোনো মানে হয় না।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কোনো প্রশ্ন নেই দাবি করে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশী-বিদেশী যারাই সমালোচনা করছে তাদের দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। হ্যাঁ বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা কেউ কেউ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছে ঠিক, কিন্তু তাদের প্রধানরা প্রশ্ন না করে আমাকে প্রত্যেকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাহলে বিষয়টা কোথায় ভেবে দেখা উচিত। আসলে যারা নির্বাচন নিয়ে এখনো প্রশ্ন তুলছে তারা কূপমণ্ডকতা বা বিশেষ উদ্দেশ নিয়েই করছে।
বিএনপিজোটের অবস্থান ও তাদের আন্দোলন নিয়ে বহির্বিশ্বে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কোনো দল কি করছে তা নিয়ে তারা কোনো কথা বলছে না। এ ছাড়া বর্তমান বিরোধী দল (জাতীয় পার্টি) সংসদের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখছে। এখন সংসদে কোনো ফাইল ছোড়াছুড়ি বা খিস্তিখেউড় নেই। আর যারা নির্বাচনই করেনি তাদের ব্যাপারে প্রশ্ন উঠবে কেন?
সাম্প্রতিক সময়ে আইপিইউ ও সিপিএতে বাংলাদেশের বিজয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এতেই প্রমাণ হয় নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্বে কোনো প্রশ্ন নেই। তারা সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে মেনে নিয়েছে।
বর্তমানে মিডিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, টিভি খুললেই দেখা যায়, পত্রিকা খুললইে পড়া যায় সেখানে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। আমরা মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি। বর্তমানে ২৭ টি চ্যানেল চলছে, আরো অনেকগুলো অনমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিএনপির সাথে সংলাপের সম্ভবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, কেউ যদি আপনাকে খুন করার চেষ্টা করে অথবা আপনার কোনো আত্মীয়কে খুন করে তবে আপনি কি আরোচনা করে সমাধান করতে চাইবেন? তাহলে কেন আলোচনার কথা বলেন? বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে জিয়াউর রহমান। খুনীদের তিনি বিদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় খালেদার ছেলে তারেক জড়িত। তাদের সাথে বসাতে আপনাদের এতো চেষ্টা কেন? খুনীদের সাথে যদি আপনাদের এতই ভালো সম্পর্ক তাহলে থাকুন তাদের নিয়ে। কাটা ঘায়ে আর লবনের ছিটা দিবেন না। একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইবেন অন্যদিকে বিএনপির সাথে আলোচনায় বসার জন্য আকুলি বিকুিল করবেন তা হতে পারে না। বিএনপির জন্য আপনাদের এতো দরদ কেন?
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা আসেমের দশম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গত ১৫ অক্টোবর ইতালির মিলানে পৌঁছান এবং ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন। সফরকালে তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেরো রেনজি, গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী এন্তিনিউয়াস সামারাস, ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট ও সুইজারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লোফভিনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী ইতালির প্রেসিডেন্টের দেয়া ভোজসভায় অংশ নেন। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গোলা মার্কেলের সাথেও সাক্ষাত করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশীদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।