অধ্যাপক গোলাম আযমের ইন্তেকাল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর বিশ্বনন্দিত ইসলামী চিন্তাবিদ, ভাষা আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক জিএস, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার অধ্যাপক গোলাম আযম আর নেই। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার পরিবার ও আইনজীবী সূত্রে এ খবর জানা গেছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিনি ৬ ছেলে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিয়াক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অধ্যাপক গোলাম আযমের রক্তচাপ সকালে আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। দুর্বলতার কারণে কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। রক্তচাপ অনেক কমে যাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) হওয়ায় তার দেহের নিচের অংশ নাড়াচাড়া করতে পারছিলেন না।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম টাইমনিউজবিডিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, মগবাজার কাজী অফিস লেনে পারিবারিক গোরস্থানেই তাকে সমাহিত করা হবে। তিনি বলেন, আমরা মোট ৬ ভাই। এছাড়া আমাদের সন্তান রয়েছে ২০ জন। আমি ছাড়া বাকি ৫ ভাই সপরিবারে বিদেশে থাকেন। তাদেরকে জানানো হয়েছে। সবাই আসলে পারিবারিকভাবে আলোচনা করেই বাবার দাফনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অধ্যাপক গোলাম আযমের অসিয়ত : টাইমনিউজবিডিকে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, তার বাবা অসিয়ত করেছেন এই বলে যে, যেহেতু তিনি জামায়াতের রুকন, তাই মৃত্যুর পরে যেন তার নামাযে জানাযা আমীরে জামায়াত মতিউর রহমান নিজামী পড়ান।
এ পর্যায়ে আযমী বলেন, তিনি বাবাকে বলেছেন, নামাযে জানাযা নিয়ে তার চিন্তার দরকার নেই, আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিলে তার নামাযে জানাযা পড়ানোর জন্য হাজার হাজার লোক এগিয়ে আসবেন। মৃত্যুর পরে অধ্যাপক গোলাম আযমকে কোথায় সমাহিত করা হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে আযমী বলেন, মগবাজার কাজী অফিস লেনে পারিবারিক গোরস্থানেই তাকে সমাহিত করা হবে।
এর আগে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ থেকে তিনি কার্ডিয়াক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। গতকাল সকাল থেকে তার রক্তচাপ কমে যাচ্ছিল। তার নাড়ির স্পন্দন উঠা-নামা করছিল। অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন।
ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ বিকেলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, অধ্যাপক গোলাম আযম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার রক্তচাপ বিপজ্জনক স্তরে নেমে এসেছে। তার শরীরের পেছনের অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে এবং নি¤œাংশ অবশ হয়ে গিয়েছে। তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলে মাথা নেড়ে এবং চোখের ইশারায় সাড়া দিতে পারছেন। তার হাতে ভেইন (শিরা) পাওয়া যায়নি বলে তার ঘাড়ে স্যালাইন পুশ করা হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ কমে গেছে। সকালে রক্তচাপ ছিল ৬০/৪০। রাত ৮টার দিকে তার রক্তচাপ ৭৫-৪৫ ছিল বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (সাবেক) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। উল্লেখ্য, একজন স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ ১২০/৮০’র মধ্যে থাকে।
২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে রয়েছেন। ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে।