ব্রিটেনে দাতব্য প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে বিল পাসের উদ্যোগ
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন দেশের দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়ার লক্ষ্যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে বৃটেনের মুসলমানরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। কারণ মুসলমানদের পরিচালিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই এই অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
লন্ডন ভিত্তিক ইসলামিক মানবাধিকার কমিশন (আইএএইচআরসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, এর ফলে নির্দোষ ও আইন মেনে চলা মুসলিম দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়ন্ত্রক কমিশন আরও বেশি করে দাঁত বসাতে সক্ষম হবে। এ বিবৃতিটি অন ইসলাম নেটের হাতে এসেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেহেতু সরকার উগ্রপন্থার সংজ্ঞার মধ্যে উদারপন্থার ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় আচার আচরণকে অঙ্গীভূত করে নিচ্ছে সেহেতু নিয়ন্ত্রক কমিশন শুধুমাত্র ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে।
বুধবার সকালের দিকে ক্যামেরন দাতব্য প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রক কমিশনকে অতিরিক্ত ক্ষমতা ও ৮০ লাখ পাউন্ড প্রদানের প্রস্তাবের কথা বলেছেন। চরমপন্থী প্রবণতা মোকাবিলা করার প্রচেষ্টার লক্ষ্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
নতুন প্রস্তাবে দাতব্য প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সরকারি কমিশনকে চরমপন্থার সঙ্গে জড়িত কোন ব্যক্তি বা কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কোন ট্রাস্টি অর্থ পাচারের মত অপরাধে জড়িত থাকলে তাদের শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিলে যদি কোন ট্রাস্টি প্রার্থী হওয়ার মত যোগ্য না হয় তাহলে তাকে অযোগ্য ঘোষণা এবং অব্যবস্থাপনার জন্য তদন্তাধীন কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিতে পারবে কমিশন। এছাড়া কম অপরাধের জন্য সরকারিভাবে এসব প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দেয়ার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে কমিশনকে।
এইচএসবিসি ব্যাংক ফিনসবারী পার্ক মসজিদ এবং ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট চ্যারিটি, দি উম্মাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও থিংক ট্যাংক কর্ডোভা ফাউন্ডেশনের মত কয়েকটি মুসলিম প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার পর এই নতুন বিল পাসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও দাতব্য কমিশন কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তদন্ত চালায়নি, তথাপি কয়েকটি মুসলিম গ্রুপ ব্যাংকের বাইরে রয়েছে বলে বলা হচ্ছে।
তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিষয় ভুলভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সঠিক চিত্র তুলে ধরে প্রচারণা চালানোর জন্য সংস্থা ‘কেজ’ একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মুখপাত্র বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ মুসলিম দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দানের ব্যাপারে আবারও সংশয়ের সৃষ্টি করবে। এতে মুসলমানদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়বে। সম্প্রতি দাতব্য কমিশনের বোর্ডে সন্ত্রাস দমনে সংস্থার সাবেক প্রধান পিটার ক্লার্ককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইএইচআরসির মতে, তার এই মনোনয়ন বৃটিশ মুসলমানদের উপর নির্যাতনের আরেক আগাম বার্তা।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য দাতব্য কমিশনের প্রধান উইলিয়াম শক্রসকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। শক্রস ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সমর্থক ছিলেন এবং বিচার বহির্ভূতভাবে কিউবার গুয়ান্তানামো বে কারাগারে বন্দিদের আটক রাখার পক্ষে ওকালতি করেন।
গত ২০১১ সালে শক্রস হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মনোনীত হন। এটা একটা দাতব্য প্রতিষ্ঠান হলেও মুসলিম বিদ্বেষী হিসাবে পরিচিত। ইসলামের পক্ষে কথা বলায় শক্রস ২০১০ সালে লেবার পার্টির সমালোচনা করেন।
হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির সদস্যরা মুসলিম বিরোধী কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে বলে জানানো হয়েছে। শক্রসের মত লোক দাতব্য কমিশনের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে বলে কেজের মুখপাত্র জানান।
তিনি আরও বলেন, দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ অত্যন্ত আতঙ্কজনক ব্যাপার। এ কমিশনকে যদি আরো ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে মুসলিম বিরোধী সুশীল সমাজকে আরও উস্কে দেয়ার পথ খুলে যাবে। বৃটেনে প্রায় ২৭ লাখ মুসলমান বাস করে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক জরিপে দেখা গেছে, বৃটিশরা মুসলিম সম্পর্কে সবচেয়ে সন্দেহবাদী জাতি।