পাশ্চাত্যের তরুণীরা আইএসের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে
ইরাক ও সিরিয়ার একাংশে দখলদারিত্ব বজায় রাখা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে পাশ্চাত্যের তরুণীরা। ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম এবং স্পেন থেকে তরুণীরা ইরাক এবং সিরিয়ায় আইএসের পক্ষে যুদ্ধের জন্য যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব তরুণীরা আইএসের খেলাফত প্রতিষ্ঠার অংশিদার হওয়ার আগ্রহ নিয়েই যাচ্ছে। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
মুসলিম তরুণীদের মধ্যে কেউ কেউ আইএসের যোদ্ধাদের স্ত্রী হয়ে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। এদের সংখ্যা কত হতে পারে সেই বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিছু বলতে পারছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আইএস’র পক্ষে যতো মানুষ গেছে তার শতকরা ১০ শতাংশ হবে তরুণী। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তারা আইএসের বিভিন্ন কর্মকান্ড দেখে উত্সাহিত হচ্ছে।
গত বুধবার ব্রিটিশ পুলিশ সন্দেহভাজন এক তরুণীকে আটক করে। ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণী সিরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গত সপ্তাহে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে তিন তরুণীকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের মধ্যে দুই তরুণী সোমালিয়া বংশোদভুত। তারা সিরিয়া যাচ্ছিল।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বার্ণার্ড হোগান হাউ জানান, এই সপ্তাহে ব্রিটেন থেকে ৫ জন তরুণ-তরুণী আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় গেছে। সেই হিসেবে বছরে এখান থেকে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ সিরিয়ায় গেছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের মিলিটারি স্টাডিজের শিক্ষক ক্যাথেরিন ব্রাউন জানান, আইএস তরুণীদের আকৃষ্ট করতে নানা পন্থা অবলম্বন করছে। তারা তরুণীদের অলীক স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এই স্বপ্নের লোভে পড়ে জিহাদে অংশ নিচ্ছে তারা। তারা ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক রাষ্ট্র সৃষ্টির অংশিদার হতে চায়।
ক্যাথেরিন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত নারীদের রান্না, চ্যাটিং ও শিশু লালন-পালনের ছবি দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তরুণীদের রাইফেল হাতে এবং সুইসাইড বেল্ট পরিহিত অবস্থার ছবিও দেয়া হচ্ছে। এমনকি শিরশ্ছেদ করা মানুষের ছবিও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে আইএস সমন্বিত কর্মজজ্ঞের চিত্র দেখাচ্ছে। ক্যাথেরিন জানান, সংখ্যায় এখন পর্যন্ত খুব বেশি নয়। কারণ ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, চেচেন যোদ্ধাদের এবং তামিল টাইগারের শতকরা ২৫ ভাগ নারী সদস্য।
তিনি জানান, গত দুই বছর ধরে ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে সর্বোচ্চ ২শত তরুণী ইরাক এবং সিরিয়ায় ভ্রমণের জন্য গেছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ তরুণী তাদের পরিবারের সঙ্গে গেছে যাদের শতকরা ৬০ ভাগ ব্রিটিশ এবং ৭০ শতাংশের বেশি ফরাসি। তরুণীদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির সাংস্কৃতিক মনোবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এবং মুসলিম তরুণীদের মৌলবাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সম্পর্কিত গবেষক কমলদ্বীপ ভূই লন্ডনের সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে জানান, মুসলিম তরুণীদের ধর্মীয় মৌলবাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। এসব তরুণীদের এক বিরাট অংশ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং হতাশাগ্রস্ত। অনেকে আবার খুব গরীব এবং তারা বাড়িতে ভাল অবস্থায় নেই।
ফরাসি মনোবিজ্ঞানী দৌনিয়া বৌজার বলেন, তরুণীদের সবাই ধর্মীয় পরিবারের নয়। অনেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আকৃষ্ট হচ্ছে।
বৌজার জানান, তরণীরা মনে করে, এই পৃথিবী মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারা মনে করে, ইসলামই মূল শক্তি। অনেকে খুব ভাল ছাত্রী। তাদের অনেকেরই ডাক্তার কিংবা শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্খা আছে। তারা সিরিয়ায় যায়। কারণ তারা একজন সত্যিকারের মুসলমানকে বিয়ে করতে চায়। কেউ আবার যায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অংশ নিতে।