নারী সমাজ, বর্তমান প্রেক্ষাপট
মমতাজ আকতার সুরমা: ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। (সূরা নিসা-১)
একজন নারী হয় মা, স্ত্রী, বোন, শাশুড়ি। একজন সৎ নারী পারে একটি পরিবার, একটি সমাজ, একটি ক্লাস, একটি অঞ্চল সব জায়গায় আলো ছড়াতে। দূর করতে পারে অপবিত্রতার দুর্গন্ধ। আর একজন অসৎ নারী পারে একটি পরিবার, একটি সমাজ, ক্লাস, ক্লাব-সব জায়গা কে অন্ধকার করে দিতে। ধ্বংস করতে পারে একটি সুন্দর পরিবারকে, সমাজকে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন: ‘একজন সৎ নারী ৭০ জন সৎ পুরুষ থেকে উত্তম, একজন অসৎ নারী ৭০ জন অসৎ পুরুষ থেকে নিকৃষ্ট।’
তার জ্বলন্ত অনেক প্রমাণ রয়েছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। আমি এত দূর যাব না। বর্তমানের দুটি উদাহরণ তুলে ধরতে চাই, মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টির মহাসচিব মোহাম্মদ আল-বেলতাগি। কায়রোর রাবা স্কয়ারে সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী অবস্থান কর্মসূচিতে নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে শহীদ হন তার ১৭ বছর বয়সী মেয়ে আসমা আল-বেলতাগি। তিনি তার মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে চিঠি লিখেন, আমি কিছু লাইন তুলে ধরছি, তিনি বলেছেন: ‘আমার প্রিয় মা, সম্মানিত শিক্ষক আসমা আল-বেলতাগি! আমি তোমাকে বিদায় বলবো না। আমি বলবো-শিগগিরই আমাদের দেখা হবে..।
মা আমার স্বৈরতন্ত্র আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে তুমি বেঁচেছিলে তোমার শির উঁচু করে এবং তুমি ভালবাসতে মুক্ত জীবন। নতুন উচ্চতায় জাতি গঠন এবং জাতিকে সভ্য জগতে স্থান করে দিতে তুমি ছিলে এক নীরব বিপ্লবী।
স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে উঁচু শির নিয়ে তুমি ঊর্ধ্বলোকে চলে গেছো। স্বৈরাচারের বুলেট তোমার বক্ষকে বিদ্ধ করেছে, যে আত্মা অত্যন্ত দৃঢ় এবং পুণ্যময়। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, তুমি তোমার স্রষ্টার প্রতি সৎ এবং আমাদের মধ্য থেকে তিনি তোমাকে সম্মানিত করতে শাহাদাতের জন্য মনোনীত করেছেন।
সুতরাং এতে বুঝা যায়, একজন সৎ ও পুণ্যময় মেয়েকে, আল্লাহপাক কিভাবে সম্মানিত করেন।
আর বিপরীত দিকে, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইন্সপেক্টর মো. মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের একমাত্র মেয়ে ঐশী এত উচ্ছৃঙ্খল ও অসৎ হল যে, সে মাদক সেবন, ব্যবসায়, দৈহিক সম্পর্ক এত জঘন্য খারাপ কাজ করতে তার বুক কেঁপে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত নিজের পিতামাতাকে খুন করেছে। অথচ যে পিতামাতার কারণে মেয়েটি দুনিয়াতে আসতে পেরেছে, যাদের সম্মান আল্লাহর পর স্থান দেয়া হয়েছে। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত বলে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছে। সেই পিতা মাতাকে ধমক দেয়ার সাহসটুকু একজন সৎ ও ধর্মিক মেয়েদের কখনও সাহস হয় না। এই ঐশী মেয়েটি কিন্তু একজন সৎ সাহসী হতে পারতো। তার এই সত্যের আলো ছড়িয়ে দিতে পারতো কিন্তু তার বদলে সে ব্যবসার মাধ্যমে মাদকাসক্তির মতো নেশার বীজ কত জায়গায় ছড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে তার কোন হদিস নেই।
আপনি একটু চিন্তা করে দেখেন যেই মেয়েরা এই সত্যের আলো সন্ধান করে, নিজেকে সৎ ও পবিত্র করতে চায়, এই আলো প্রত্যেক মেয়ের জীবনে ছড়িয়ে দিতে চায়, তারা নিজেদের অবয়ব পর্দার মাধ্যমে পবিত্র রাখতে চায়। সেই মেয়েদেরকে বরিশালের মুলাদী গাছুয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রাম থেকে ৬৪ ধারা জারি করে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। এত জঘন্যতম কাজ একজন সৎ বিবেকবান মানুষ কখনও করতে পারে না। এতবড় অসম্মানী কাজ কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে কখনও করা সম্ভব নয়।
আল্লাহপাক এই মেয়েদেরকে অনেক সম্মানিত করেছেন। কোন ঘরে মেয়ের জন্ম হলে কত যে সওয়াব তা আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন। এই মেয়েকে সৎ ও চরিত্রবান করে গড়ে তুললে মেয়ের পিতা-মাতার জন্য জান্নাত তৈরি করা হয়। এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কি হতে পারে।
আজকের বর্তমান সমাজ, উচ্চ শ্রেণীর মানুষ ও প্রভাবশালী মানুষরা পর্দা, লজ্জা, সভ্যতাকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এতে যত শক্তি ব্যয় করছে অন্য কিছুতেই এত ব্যয় করে না।
মুম্বাইয়ে নারী ফটোসাংবাদিককে গণধর্ষণের ঘটনায় যখন ভারতজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে তখন দেশটির মধ্য-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ঝাড়খন্ড থেকে এক নারী পুলিশ সদস্যকে গণধর্ষণের খবর এলো। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মাওবাদী জঙ্গিদের হামলায় নিহত ভগ্নিপতির মরদেহ নিয়ে তিনি আত্মীয়ের সঙ্গে রাঁচি থেকে লাতেহারে ফেরার পথে রাস্তা অবরোধ করে ওই নারী পুলিশ সদস্যকে জোর করে ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালায় তিন পাষন্ড।
কি আশ্চর্য ধরনের ঘটনা একজন পুলিশ হয়েও তিনি তার ইজ্জত রক্ষা করতে পারলেন না। যেখানে আল্লাহপাক মেয়েদের সম্মানিত করেন, সেখানে মেয়েদের নিয়ে তামাশা করছে বর্তমান প্রভাবশালী সমাজ। এখন নারীদের চলাফেরার জন্য ক্রমেই হুমকি হয়ে উঠেছে বর্তমান বিশ্ব।
বর্তমানে এই মেয়েদেরকে মুখোশধারী মানুষরা ছলেবলে-কৌশলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিক্রি করছে সমাজের উঁচুতলার মুখোশধারী মানুষের কাছে। আজ যদি এই মেয়েগুলো পর্দানশীন ও ধার্মিক হতো, তাহলে এত প্রতারিত হতে পারতো না। মাথা উঁচু করে সমাজে চলতে পারতো। আপনি একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেন, যে ময়েদেরকে অপবাদ, অপমান করা হচ্ছে এর জন্য দায়ী কে? আমাদের চিন্তাশক্তি ধীরে ধীরে অপসংস্কৃতির রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পথযাত্রী হয়ে সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এর জন্য দায়ী কে? আপনার চিন্তাশক্তিকে যখন প্রসারিত করবেন, আপনি নিজেই উত্তর পাবেন।
সবশেষে বলতে চাই সূরা নূর-এর ২১ নাম্বার আয়াত : হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না; কেউ শয়তানের পদাংক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়, আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো পবিত্র হতে পারতে না; তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করে থাকেন এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।