গরিব দেশে ঈদ উদযাপন
কানিজ ফাতেমা: ঈদ প্রতিবছর সবার জন্য খুশির বারতা নিয়ে আসে। ধনী দেশের সচ্ছল পরিবারগুলো যেভাবে মনের মতো করে ঈদ উদযাপন করে, গরিব দেশের দরিদ্ররা সেভাবে দুই হাতে ব্যয় করে কেনাকাটা সারতে পারে না। তাদের আকাঙ্ক্ষা আর প্রাপ্তির মধ্যে থাকে অনেক ফারাক। এর পরও সাধ্যমতো নিজ নিয়ম ও রীতিতে ঈদ উদযাপন করে তারা।
সোমালিয়া
বিশ্বের অন্য সব দেশের মুসলমানদের মতো সোমালিয়ায়ও ঈদের দিন সকালে জামাতে গিয়ে নামাজ আদায় করা হয়। সাধারণত পুরুষেরাই জামাতে অংশ নেন। ঈদ উপলক্ষে সাধ্যমতো যে যাঁর নতুন পোশাক কেনেন। ঈদের দিন অতিথি আপ্যায়নের জন্য নানা জাতের খাবার রান্না করা হয়। অতিথিদের সোমালিয়ায় ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের হালুয়া তৈরি করা হয়। এই হালুয়াকে বলা হয় ‘যালয়ো’। ভুট্টা, এলাচ ও জায়ফল গুঁড়া, চিনি, বাদাম ও ঘি দিয়ে এই যালয়ো তৈরি করা হয়।
সুদান
সুদানে ঈদ উপলক্ষে বাড়িঘর রং করা হয়ে থাকে। ঈদের দিন শিশুদের সালামি হিসেবে টাকা বা খেলনা দেওয়া হয়। অতিথি আপ্যায়নে সুদানে চিনি বা ক্রিমের পুর দিয়ে তৈরি করা বিস্কুট ও পিঠা। নারীরা হাতে-পায়ে মেহেদি লাগান। তিন দিন ধরে ঈদ উদযাপন চলে। এ সময় আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবেরা পরস্পরের বাড়িতে বেড়াতে যান।
নাইজেরিয়া
নাইজেরিয়ায় ঈদকে স্থানীয়ভাবে ‘স্মল সাল্লাহ’ বলা হয়ে থাকে। ঈদের দিন দেশটির ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা একে-অপরকে ‘বারকা দা সাল্লা’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, যার অর্থ ‘ঈদের শুভেচ্ছা’। পুরুষেরা ঈদের জামাতে অংশ নেন। নারীরা বাড়িতে থেকে মজাদার খাবার তৈরি করে স্বজন ও অতিথিদের আপ্যায়ন করেন। সরকারিভাবে ঈদের ছুটি দুই দিন।
ইথিওপিয়া
ইথিওপিয়ায় সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজের জামাত হয় রাজধানী আদ্দিস আবাবার জাতীয় স্টেডিয়ামে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে ঈদের জন্য বিশেষভাবে রান্না করা খাবার খান এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি বেড়াতে যান।
আফগানিস্তান
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানবাসী সব ধর্মীয় উত্সবই যথাযথ মর্যাদার মধ্য দিয়ে পালন করে। এর মধ্যে বিশেষ করে দুই ঈদ। ঈদুল ফিতর বেশ ঘটা করে উদযাপন করেন তাঁরা। ওই দিন শিশুরা নতুন জামাকাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে থাকে তারা। আফগানিস্তানে ঈদে আগে কখনো উপহার বিনিময়ের প্রথা না থাকলেও সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে ঈদকার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময়ের বেশ প্রচলন দেখা যায়। ঈদের দিন চা, মিষ্টি, মিষ্টি বাদাম দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। এ ছাড়া তৈরি করা হয় বিশেষ বিশেষ মিষ্টি, পেস্ট্রি, হালুয়া-ই সোনাক, শির পেয়ারা, গোস-ই ফিলসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার।
মিয়ানমার
মিয়ানমারের মুসলমানেরা ঈদকে ‘ঈদ নেই’ বা ‘ঈদ কা লে’ বলে থাকে। ঈদের দিন নারকেল, কাজু বাদাম, দুধ ও চিনি দিয়ে সেমাই রান্না করে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। এজন্য ঈদুল ফিতরকে তারা ‘সেমাই ঈদ’ বলা হয়। দেশটিতে ‘জাগো’ নামের পরিচিত তরুণদের দল রমজানে সেহেরির সময় গান গেয়ে মুসল্লিদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে।
ঈদের দিন তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। তাদের মুখরোচক খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে স্থানীয় লোকজন। এ ছাড়া তাদের ‘দুইত রায়া’ বা ঈদ সালামিও দেওয়া হয়। মিয়ানমার মুসলিম দেশ না হওয়ায় ঈদ উপলক্ষে সেখানে সরকারিভাবে ছুটি দেওয়া হয় না। এমন কি মুসলিম কোনো সংস্থা না থাকায় ঈদের চাঁদ দেখা গেছে কিনা, এ ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারেন না দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানেরা। এ কারণে ছোট ছোট শহর ও গ্রামে ভিন্ন ভিন্ন দিন ঈদ উদ্যাপিত হতে দেখা যায়।
-বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবলম্বনে