সমঝোতার অভাবে বাংলাদেশে অস্থিরতা বাড়তে পারে

তাইসির মাহমুদ: শুধু সমঝোতার অভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে, যা আরো বাড়তে পারে। জনগণের মৌলিক অধিকারের তোয়াক্কা না করে সরকার মতায় টিকে থাকার চিন্তায় মগ্ন থাকায় বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। দেশের স্বার্থে ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যত দ্রুত সম্ভব আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে উভয় দলকে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে মতৈক্যে পৌঁছা উচিত। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে সামনে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ব্রিটেনের হাউজ অব লর্ডসে ওভারসিজ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ‘বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইউকে’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যর্থতা ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সোমবার হাউজ অব লর্ডসে ব্রিটিশ লর্ড আহমদের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইউকের চেয়ারপারসন আতা উল্যাহ ফারুকের সঞ্চালনায় সেমিনারে হাউজ অব লর্ডের লর্ডস আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশে প্রবেশে বাধার সম্মুখীন হন তখন আমিসহ ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সদস্যরা তাকে দেশে প্রবেশে সহযোগিতা করেছি, বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। কিন্তু মর্মান্তিক বিষয় সেই শেখ হাসিনা এখন গণতন্ত্র ধ্বংস করে যাচ্ছেন।
ভিপিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর কার্লস লাইগু বাংলাদেশের সরকারকে উদার হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তরুণরা গণতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
এমপি জন হ্যামিং বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছেÑ যেটা গণতান্ত্রিক দেশের জন্য সুখকর নয়। মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য যত দ্রুত সম্ভব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দেয়া জরুরি। আর তা না হলে বাংলাদেশ ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দণি এশিয়ার প্রধান আব্বাস ফায়েজ বলেন, হিউমান রাইটসকে সম্মান করা যথেষ্ট নয়, এটাকে রক্ষা করাই হচ্ছে সরকারের দায়িত্ব। বাংলাদেশে গুম, হত্যা, ক্রসফায়ার, রাজনৈতিক হয়রানি বেড়েই চলেছে, যা বাংলাদেশকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলছে বিশ্ব রাজনীতিতে। মিড়িয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে বলা বা লেখার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী এমপি সাইমন ডানসাক বলেন, বাংলাদেশ দণি এশিয়ার একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। স্বাধীন হওয়ার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশটিতে এখনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে রাজনৈতিক আস্থার অভাবে পরিস্থতি জটিল আকার ধারণ করেছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো মনে করে অতি দ্রুত সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে খুবই জরুরি। সরকারের আন্তরিকতার অভাবে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যকে দোষারোপ করছে। ক্রসফায়ারের কারণে অভিযুক্তরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছেÑ যেটা গণতান্ত্রিক দেশের জন্য সুখকর নয়। তিনি আরো বলেন, ডেভিড ক্যামরুনের সাথে শেখ হাসিনার সাক্ষাতে আমরা বিব্রত। যার সরকারের ১৫৩টি এমপি জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচিত এবং বাকি ১৪৭টি কোথাও কোথাও কোনো ভোটার উপস্থিত হয়নি। সেই নির্বাচন কিভাবে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্ব গ্রহণ করবে।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জন হ্যামিং এমপি, জিম ফিট প্রেট্রিক এমপি, ভিপিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কার্লস লাইগু, বিএনপির সিনিয়র ভাইসচেয়ার তারেক রহমানের শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক উপদেষ্টা ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাহাদী আমিন, আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান, বাথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. পলাশ কামরুজ্জামান, কমিউনিটি ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, আইনজীবী, ও সাংবাদিক সুশীল সমাজের প্রতিনিধি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button