জাতিসংঘে বাংলাদেশের পাওনা ৮০০ কোটি টাকা

UNজাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। শান্তিরক্ষী পাঠানোর মাধ্যমে বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স আয় করে বাংলাদেশ। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পারিশ্রমিক বকেয়া রাখছে জাতিসংঘ। বর্তমানে সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশের পাওনা প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। পিটিআই সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। জাতিসংঘের কাছে পাওনাদারের খাতায় শুধু বাংলাদেশ নয়, ইথিওপিয়া, ভারত ও পাকিস্তানের নামও রয়েছে। সংস্থাটির কাছে ইথিওপিয়ার ১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার, পাকিস্তানের প্রায় ১০ কোটি ৯০ লাখ ও ভারতের ১১ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে। চলতি বছরের ৩ অক্টোবর পর্যন্ত জাতিসংঘের কাছে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো জাতিসংঘের কাছে শান্তিরক্ষী ও সমরাস্ত্র বাবদ ১৩০ কোটি ডলার দাবি করছে। এর মধ্যে রয়েছে চলতি মিশনগুলোর জন্য ৬০ কোটি ২ লাখ এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া মিশনগুলোর জন্য ৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর পাওনা প্রসঙ্গে এক সংবাদ মাধ্যমকে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ইউকিও তাকাসু বলেন, শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর পাওনা অর্থ চলতি মাসের মধ্যেই ছাড় শুরু হবে। চলতি বছরের মধ্যেই দেশগুলোর পাওনা অর্ধেক পরিশোধের আশা করছে জাতিসংঘ। জানা গেছে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় বরাদ্দ কমিয়েছে জাতিসংঘ। আগে সংস্থাটি এ কাজে যেখানে ৮০০ কোটি ডলারের উপরে খরচ করতো, বর্তমানে তা ৭০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সদস্য দেশগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর শান্তিরক্ষী বাহিনীর বেতন ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়িয়েছে বিশ্ব সংস্থাটি। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব পালনকারীদের বেতন আরো ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। যদিও তা অন্যান্য দফতরে বেতন বৃদ্ধির তুলনায় খুবই কম। দীর্ঘ সময়ে মুদ্রাস্ফীতির কারণে জাতিসংঘের কর্মীদের বেতন-ভাতা শতকরা ৫৭ ভাগ বাড়লেও ১৯৯২ সালের পর শান্তিরক্ষীদের বেতন-ভাতা বাড়েনি। ২০১১ সালে পাঁচটি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা জি-৭৭-এ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব তোলেন। প্রস্তাবটি সমর্থনও পায়। একই বছরের ৩০ জুন শান্তিরক্ষীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণ না করায় বাজেট পাস বন্ধ করে দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) শান্তিরক্ষীদের জন্য ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়া হয়।
শান্তিরক্ষা মিশনে বর্তমানে ৮ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী কর্মরত। এ অবস্থায় জাতিসংঘে দক্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণে এরই মধ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবগত। জাতিসংঘ একদিকে শান্তিরক্ষায় তাদের বাজেট কমিয়েছে, অন্যদিকে দীর্ঘ ২১ বছর পর শান্তিরক্ষী বাহিনীর বেতন বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে জাতিসংঘ পরিচালিত মিশনগুলোয় যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার মতো বাহিনীর দরকার বেশি। বিশ্বে যে দেশগুলো এত বছর যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছিল, তারা নিজেদের বাহিনীকে গুটিয়ে নিয়ে আসছে। এখন বিশ্ব অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। নজরদারির জন্য এখন মানুষের পরিবর্তে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এখন মিশনগুলোয় যাদের পাঠানো হয়, তাদের অবশ্যই প্রযুক্তিবান্ধব এবং ভাষাগত দক্ষতা থাকতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button