রেলমন্ত্রীর বিয়ে সম্পন্ন
শত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৬৭ বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক। শুক্রবার বিকাল ৩টা ১ মিনিটে গাঁয়ে গোলাপী সেরওয়ানী মাথায় সোনালী পাগড়ী ও পায়ে রাজকীয় নাগরা পড়ে বিকাল ৩ টায় প্রায় ৭শ বরযাত্রী নিয়ে কনে রিক্তার পিত্রালয় চান্দিনার মিরাখলা গ্রামে পৌঁছেন বরবেশে মন্ত্রী মুজিবুল হক। কনের পক্ষের লোকজন গেইটে মিষ্টিমুখ করায় ১ লক্ষ ১ টাকা গেইট ফি পরিশোধ করে বিবাহ আসরে প্রবেশ করে বর পক্ষ।
বিকাল ৪টায় কাবিন রেজিস্ট্রি বইতে স্বাক্ষর শেষে ৫ লক্ষ ১টা দেনমোহর পরিষোধ শেষে পৌনে ৫টায় কবুল বললেন বর ও কনে। দোয়া মোনাজাত শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে সকলের দোয়া নিয়ে কনের পিত্রালয় ত্যাগ করলেন তারা।
বিয়েতে বরের নিজ নির্বাচনী এলাকা চৌদ্দগ্রামের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসেম উকিল হন। এছাড়া স্থানীয় কাবিন রেজিস্ট্রার কাজী ছিদ্দিকুর রহমান বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন ও স্থানীয় তালতলা বাজার জামে মসজিদের ঈমাম ক্বারী আব্দুল লতিফ বিয়ে পড়ান।
সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে সকলের দোয়া নিয়ে বিবাহ আসর ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন নব যুগল। নববধুকে নিয়ে ঢাকা বেইলী রোডের মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে উঠবেন মন্ত্রী মুজিবুল হক। এ সময় কনের মা জোত্স্না বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের চোখে পানি দেখা যায়।
কনের পরিবারের পক্ষে কনের খালাতো ভাই লুত্ফুর রেজা খোকন জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ বহুল আলোচিত মুজিবুল ও রিক্তার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। নব দম্পত্তিও সকলের দোয়া কামনা করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে বর বেশে রওয়ানা করে কুমিল্লার দাউদকান্দি ঈদগাহ মাঠে শুক্রবারের জুম্মার নামাজ আদায় শেষে কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় বর ও বরযাত্রী। পৌঁনে ৩টায় স্থানীয় তালতলা বাজারে পৌঁছার পর বরযাত্রীদের সকল গাড়ি পার্কিং করে শুধুমাত্র বর তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে পৌঁছেন মিরাখলা গ্রামে কনের পিত্রালয়ে। বিকাল ৩টায় গাড়ি নিয়ে সরাসরি পৌঁছেন কনের পিত্রালয়ে। এসময় প্রায় ৫০টির ও বেশি বিভিন্ন মডেলের গাড়িতে আসেন বরযাত্রী। কনের পক্ষের ফুল ছড়ানীতে ফুলেল বৃষ্টিতে পরিণত হয় বিয়ে বিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক। এসময় ব্যাপক আনন্দে সরগরম হয়ে উঠে গোটা এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমসীম খেতে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ বাহিনীসহ পরিবারের সদস্যদের।
এদিকে বর বেশে মন্ত্রী’র সাথে বর্তমান মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এড. আব্দুল মতিন খসরু এমপি, সাবেক ডেপুটি ষ্পীকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপিসহ কয়েকজন মন্ত্রী, বর্তমান কয়েকজন সাংসদ, পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি সফিকুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল, জেলা পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ অতিথিরা প্রবেশ করার পর চলে পকেটমারদের উপদ্রব।
এরমধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী এড. আব্দুল মতিন খসরু এমপি’র ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা, বাংলাভিশন টেলিভিশন চ্যানেলের কুমিল্লা প্রতিনিধি সাঈদ মাহমুদ পারভেজসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তির মোবাইল ফোন, নগদ টাকা নিয়ে যায় পকেটমার।
কর্তব্যরত উপ-পরিদর্শক (এস.আই) জয়নাল আবেদীন জানান, এতো লোকের ভীড়ে কে ভাল আর কে খারাপ খোঁজা সম্ভব নয়। তবে অনেকের মোবাইল ফোন, টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে তা সত্য।
তবে পুলিশের গোয়ান্দা সূত্রে জানাযায়, আমাদের কাছে ৪৪টি মোবাইল ফোন ও প্রায় একশত মানিব্যাগ চুরি হয়েছে।
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) গোলাম মোর্সেদ জানান, চুরির দায়ে এ পর্যন্ত দুই জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অপরদিকে, উপস্থিত অতিথিদের তুলনায় আয়োজন অপ্রতুল হওয়ায় অধিকাংশ ভিআইপি অতিথিই খাওয়ার টেবিলে বসেও খাওয়া না পেয়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখাগেছে।
বাবুর্চিদের সূত্রে জানাযায়, ওই বিয়েতে মাত্র ১২শ লোকের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু লোক সমাগম হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি। এনিয়ে তুমুল সমালোচনায় পড়ে কনে পক্ষ।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সন্তান ৬৭ বছর বয়সী রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নিজ জেলা চান্দিনার মিরাখলা গ্রামের মরহুম হাবিব উল্লাহ মুন্সির কনিষ্ঠ কন্যাকে বিবাহ করেন।