লন্ডনে ঈদুল ফিতর উদযাপিত
সৈয়দ আনাস পাশা: যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ উদ্দীপনায় বৃহস্পতিবার লন্ডনে পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমান সম্প্রাদায়ের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করে উপভোগ করেছেন বহুজাতিক সংস্কৃতির দেশ যুক্তরাজ্যের জনগণ।
সুন্দর আবহাওয়া থাকায় মসজিদ ছাড়াও লন্ডনসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরের বড় বড় পার্কগুলোতেও অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের জামাত। লন্ডনের ভ্যালেন্টাইন পার্কের জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে শরিক হয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদের এই জামাত দেখতে ভিন্ন বর্ণের অনেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন ভ্যালেন্টাইন পার্কে।
বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার ব্রিকলেন জামে মসজিদ ও ইস্ট লন্ডন মসজিদসহ লন্ডনে প্রায় সব মসজিদেই অনুষ্ঠিত হয় ঈদের জামাত। যুক্তরাজ্যেু নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে আদায় করেন ঈদের নামাজ। প্রতিটি জামাতেই মুসলিম বিশ্বসহ পৃথিবীর সব মানুষের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পরিচালিত হয় বিশেষ মোনাজাত।
লন্ডনের বাইরে বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, লিডস, নিউক্যাসেল, সান্ডারল্যান্ড ও কার্ডিফসহ বিভিন্ন শহরের মসজিদ ও বড় বড় পার্কগুলোতে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের জামাত। জামাত শেষে একে অন্যের সাথে কোলাকুলির চিরচেনা আমেজ সৃষ্টি হয় যুক্তরাজ্যে।
এদিকে, ঈদ উপলক্ষে বাঙালিসহ মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সৃষ্টি হয়েছিল এক বিশেষ আমেজ। নতুন কাপড় পড়ে ছোট্ট ছেলেমেয়েদের জটলা ভিন্ন বর্ণের মানুষদের আকৃষ্ট করেছিল ব্যাপকভাবে। বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোসহ ব্রিটেনের বাংলা সংবাদ মাধ্যম ঈদ উপলক্ষে প্রচার করে বিশেষ সংখ্যা ও অনুষ্ঠান।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ফরেন সেক্রেটারি উইলিয়াম হেগ, সিনিয়র মিনিস্টার ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সী, শ্যাডো ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট মিনিস্টার রোশনারা আলী এমপি, হাউস অব লর্ডসের বাঙালি সদস্য ব্যারোনেস পলা উদ্দিন, লন্ডন এসেম্বলি মেম্বার মোরাদ কোরেশীসহ বিশিষ্টজনরা ব্রিটেনের মুসলমান সম্প্রদায়সহ সর্বস্তরের জনগণকে ঈদ শুভেচ্ছা জানান।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাঁর ঈদ শুভেচ্ছায় বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে যুক্তরাজ্য এবং গোটা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা রইল। গ্রীষ্মের দীর্ঘ দিবসে রোজা পালন ও প্রার্থনা শেষে এবং অনেক অবধারিত কাজ দূরে সরিয়ে রেখে আনন্দময় এ আয়োজনকে উপভোগ করতে মুসলমানরা পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে একত্রিত হবে। আমি আপনাদের সকলকে ঈদ মুবারক জানাই।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ ঈদ শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, ‘যুক্তরাজ্য এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানে ঈদুল ফিতর উদযাপনরত প্রত্যেক মুসলমানকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে পেরে আমি আনন্দিত।’ তিনি বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান প্রার্থনা, ধ্যানমগ্ন থাকা, পরোপকার কিংবা ভালোলাগা মানুষদের সঙ্গে সময় কাটাতে নিজেকে উৎসর্গ করেন। প্রতিবেশীর সঙ্গে ইফতার ভাগাভাগি করা বা অভাবীদের মধ্যে জাকাত বিতরণের মতো নানা কাজের মাধ্যমে মুসলমানরা ইসলামের প্রকৃত আধ্যাত্মিক শক্তির প্রকাশ ঘটান’।
হেগ তার বার্তায় আরও বলেন, ‘এসময় আমরা সিরিয়াতে সহিংসতার অবসান এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির আশাবাদ অব্যাহত রাখছি। আপনাদের জন্য আনন্দময় ও শান্তিময় ঈদ প্রত্যাশা করি। ঈদ মুবারক।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের সিনিয়র মন্ত্রী ব্যারোনেস ওয়ার্সী বিশ্বের সকল মুসলমানের প্রতি ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘এই রমজান আমার কাছে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ, যুক্তরাজ্য প্রথমবারের মতো বসনিয়ার বাইরে সেব্রেনিয়া মেমোরিয়াল ডে আয়োজন করেছে। যা ১৯৯৫ সালে সংগঠিত গণহত্যায় নিহত ৮ হাজার মানুষের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছে। এই আয়োজন থেকে আমরা ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতার ফল সম্পর্কে সজাগ হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পবিত্র মাসে আমরা ভাগ্যহত মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে ভাবার সুযোগ পেয়েছি, তাদের বিশ্বাস যাই হোক না কেন। আমি প্রত্যাশা করি পবিত্র রমজানের অন্তর্নিহিত দর্শনের শিক্ষা, যাতে আছে ক্ষমার উদারতা, পরদুঃখকাতরতা ও পরোপকার এবং ভালো কাজে ব্যাপৃত হওয়া, যা গোটা বছর আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত থাকবে। ঈদ মুবারক।’