কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড বহাল
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একটি অভিযোগে (সোহাগপুর গণহত্যা) তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এই অভিযোগে তাকে সর্বসম্মতভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে। গোলাম মোস্তফা হত্যাকান্ডে সর্বসম্মত ভাবে মৃত্যুদন্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়েছে। আপিল বিভাগের এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পেলে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দন্ডাদেশ রিভিউ করা, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন প্রক্রিয়া শেষে রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। যদিও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের পক্ষে রায়ের পরপরই আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের নোটিশ সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়েছে। আপিলের এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদিন এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। একই সাথে তিনি রিভিউ আবেদন দায়েরের জন্য আপিল বিভাগের রায়ের অনুলিপির জন্য আবেদন করেছেন।
রায়ে তাকে তৃতীয় অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গণহত্যার অভিযোগে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করলেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে। চতুর্থ অভিযোগে গোলাম মোস্তফাকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ। দ্বিতীয় ও সপ্তম অভিযোগে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া দন্ড সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে বহাল রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় অভিযোগে এক শিক্ষককে নির্যাতনের ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিল। আর সপ্তম অভিযোগে গোলাপজান গ্রামের পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড। দুটি সাজাই বহাল থাকবে। প্রথম অভিযোগে শেরপুরের কালীনগর গ্রামের বদিউজ্জামানকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদ- দিলেও আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছে। এর মধ্যে ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে অব্যাহতি দিয়েছিল। এই দুটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেনি। আপিল না করায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
গতকাল সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দেন। বিচারপতি এস কে সিনহা রায় ঘোষণা করেন। এই বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
রায়ের জন্য আপিলটি সুপ্রিম কোর্টের গতকাল সোমবারের কার্যতালিকায় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বনাম দি চীফ প্রসিকিউটর, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা, বাংলাদেশ-ক্রিমিনাল আপিল নং ৬২/২০১৩ হিসেবে এক নম্বর ক্রমিকে ছিল। সকাল ৯ টা ১০ মিনিটে রায় দেয়া শুরু করে। মাত্র তিন মিনিটে রায় দেয়া শেষ করে আদালত এজলাস ছাড়েন।
রায়ের পর মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এই রায়ে মর্মাহত। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ন্যায়বিচার পাননি। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন করবো। এই রিভিউর আবেদন করার অধিকার সংবিধান তাকে দিয়েছে। এটা অলঙ্ঘনীয়। যতদিন সংবিধান বলবৎ রয়েছে ততদিন তাকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পেলেই রিভিউ করা হবে। অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, যারা বলছেন রিভিউ করার সুযোগ নেই তারা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এটা বলছেন। সবাইকে সংবিধান মানতে হবে। এটা সবাই মানতে বাধ্য। রিভিউর অধিকার পাশ কাটিয়ে রায় কার্যকর করার সুযোগ নেই।
সরকারের এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। সোহাগপুরের যে বিধবারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালে এসে কেঁদেছেন তারা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। এটা আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়। মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃতুদন্ডের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ নেই। কারণ বিশেষ আইনে এ বিচার করা হয়েছে। এ আইনে রিভিউর কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
রায় কখন কার্যকর করা হবে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-এই মূহূর্তে তা বলা যাবে না। এটি সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের বিষয়। সরকারের সিদ্ধান্ত ও আদালতের লিখিত আদেশ পাওয়া সাপেক্ষে কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রায় কার্যকরে ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে না। এখনো বলছি, কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও রিভিউ প্রযোজ্য হবে না।