প্রাণভিক্ষা চাইবেন না কামারুজ্জামান
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে জানিয়েছেন তার বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন তিনি।
হাসান ইকবাল বলেন, “সরকার আমাদের প্রতি যদি ভদ্র আচরণ করতো, তবে হয়তো প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে আবেদন করার একটা রাস্তা থাকত। তা ছাড়া, বড় কথা হলো বাবা রাষ্ট্রপতির কাছে কোনোভাবেই প্রাণভিক্ষা চাইবেন না।”
ওয়ামী বলেন, “সরকার যেখানে রায়ের রিভিউ আবেদনের সুযোগ দিচ্ছে না, পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করার অপেক্ষা রাখছে না। সেখানে কীভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন তিনি।”
হাসান ইকবাল বলেন, “মঙ্গলবার সকালে বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য গাজীপুর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়। এ সময় কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, আজ ছুটির দিন, তাই দেখা করার কোনো বিধান নেই। এর কিছুক্ষণ পর জানতে পারি, বাবাকে গাজীপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “সরকার তড়িঘড়ি করে আমার বাবাকে হত্যা করতে চাইছে।”
উল্লেখ্য, গত ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া বাকি দুটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে তাকে খালাস দেয়া হয়।
এরপর ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন কামারুজ্জামান। গত সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর বিকেলে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করতে রায়ের সার্টিফাইড কপি চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষ।
একই সঙ্গে রিভিউ করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এই মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন এ আবেদন করেন।
তবে সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রিভিউ অর্থাৎ রায় পর্যালোচনার সুযোগ নেই বলে মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এটি্ একটি বিশেষ আইন, এখানে রিভিউ করার কোনো সুযোগ নেই।”
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলছেন রিভিউ করা যাবে। তিনি বলেন, “সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমাদের রিভিউ করার সুযোগ রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেলে আমরা রিভিউ আবেদন করব।”
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন, কামারুজ্জামানের রিভিউ (পুনঃবিবেচনা) আবেদন করার সুযোগ থাকা উচিত।
গত বছর কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরও সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রিভিউ’র সুযোগ নেই। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন এবং তা করেছিলেনও। শেষ পর্যন্ত আবেদনটি খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।