জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনাসভায় তারেক রহমান
৭ নভেম্বরের চেতনায় গণতন্ত্র উদ্ধারে এগিয়ে আসুন
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা সরকার গণতন্ত্রকে হরণ করেছেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। জনগণের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত করতে হলে ৭ নভেম্বরের চেতনায় দেশপ্রেমিক সকল শ্রেণি পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক দল ও নেতা-কর্মীরা জনগণকে সংগঠিত করতে পারে। তা-ই গণতন্ত্র উদ্ধারে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সবাইকে নিজের দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেম থেকে এগিয়ে আসতে হবে।
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার সম্মিলিত বিপ্লবের স্মরণে এই আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। য্ক্তুরাজ্য বিএনপির উদ্যোগে পূর্ব লন্ডনের দ্যা আর্টিয়াম ভবনের অডিটরিয়ামে বুধবার সন্ধ্যায় এই আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি সায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভপতিত্বে আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য ও তারেক রহমানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান। আলোচনা মঞ্চে যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র সাবেক ও বর্তমান সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির বিভিন্ন অংগ সংগঠন এবং বিভিন্ন জোনের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ।
দীর্ঘ দেড় ঘন্টার বক্তব্যে তারেক রহমান ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তারেক বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কখনো ক্ষমতালোভী ছিলেন না। জনগণের প্রয়োজন ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার তাগিদে সিপাহি জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে তাঁকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্ত করে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৭৭ সালের ২০ এপ্রিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিচারপতি এ এস এম সায়েম পদত্যাগ করেন। ২১ এপ্রিল নিয়ম অনুযায়ী উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। সম্প্রতি জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর দিবাগত ভোর রাতে জেলখানায় নিহত ৪ নেতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর জবাবে তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করেছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। ওই দিন খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থান হয়েছিল। এই অভ্যুত্থানে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে ৩ নভেম্বর চার নেতা যখন নিহত হন, খালেদ মোশাররফ তখন বঙ্গভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে লিপ্ত ছিলেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন গৃহবন্দি। এই ইতিহাস সবারই জানা রয়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বরাবরের মতোই এই বিষয়ে অসত্য বক্তব্য দিচ্ছেন।
তারেক রহমান বলেন, শেখ মুুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বাকশালের চার নম্বর সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। খন্দকার মোশতাকের শপথ অনুষ্ঠানে কর্নেল তাহের এবং তার সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহি জনতার বিপ্লবকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো তারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তাদের উস্কানিতে সেদিন বহু সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের অবশ্যই সঠিক ইতিহাস জানার অধিকার রয়েছে। তাদের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে বিপদের মধ্যে রেখে নিজে পাকিস্তান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। মানুষের এই দুঃসময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে বিদ্রোহ করেন জিয়াউর রহমান। তিনি শুধু বিদ্রোহই করেননি দেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়ে পালিয়ে যাননি বা অন্য দেশের আশ্রয়ে চলে যাননি। তিনি নিজে রণাঙ্গনে উপস্থিত থেকে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁকে কেন্দ্র করে সর্বপ্রথম গঠন করা হয় জেড ফোর্স। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর আলোকে তিনি ২৫টি পয়েন্টে ব্যাখ্যা করেন। এই সব পয়েন্টে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ইতিহাস এবং জিয়াউর রহমানের অবস্থান বর্ণনা করা হয়। এছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সময় সেনা প্রধান জেনারেল শফিউল্লাহর ভূমিকা, চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান, সামরিক আইন জারি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র উঠে এসেছে ২৫টি পয়েন্টে।
আলোচনাসভার শুরুতে জিয়াউর রহমানের কর্ম ও জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। শহীদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে তৈরি একটি গান পরিবেশন করে যুক্তরাজ্য জাসাস। এছাড়া জিয়াউ রহমানকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃতি করেন ফেরদৌসী রহমান।