বিধ্বস্ত গাজা এবং বিশ্ববাসীর করণীয়

Gazaইসরাইলী সামরিক হামলায় বিধ্বস্ত গাজা সম্প্রতি দেখতে গিয়েছিলেন বিশ্বব্যাংকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলজুড়ে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক কর্মকৌশল তৈরি করা ও তার বাস্তবায়ন সরেজমিন যাচাই করে দেখাই হচ্ছে তার দায়িত্ব। ইংগার এন্ডারসন নামের এই ভদ্র মহিলা বলেন। যুদ্ধকবলিত অন্যান্য বহু এলাকা তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু বিনাশ-বিশৃঙ্খলা ও মানবিক দুর্দশা ও হতাশার যে দৃশ্য গাজায় তিনি দেখেছেন, তেমন করুণ ও বীভৎস অভিজ্ঞতা অন্য কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল ঘুরে তার সঞ্চয়ে আসেনি। তিনি বলেন, নিজেদের দুঃখ-দুরবস্থায় বাকরুদ্ধ ফিলিস্তিনী জনগণের দিকে সাহায্য সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সমস্ত বিশ্ববাসীর মানবিক ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব। তিনি আহ্বান জানান, মিসাইল নিক্ষেপ, বোমাবর্ষণ, আগ্রাসন ও বারংবার যুদ্ধ-সংঘাতের দুষ্টচক্রের পৌনঃপুনিক পুনরাবর্তন মধ্যপ্রাচ্যে চিরকালের মতো বন্ধ করার বিষয়টিকে বিশ্ব সম্প্রদায়কে তাদের নিজেদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব ভেবে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।
গাজায় ও পশ্চিম তীরে তথা ইসরাইল প্রশ্নে এমন এক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ফিলিস্তিনীরা অবাধে আমদানি করতে পারেন এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনীদের স্বাধীন বিচরণ কোনোভাবেই যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনীদের অপরিমেয় দুর্দশা লাঘবে ত্বরিত তৎপরতায় এগিয়ে আসাই হচ্ছে, এ সময়ের সবচেয়ে বড় তাগিদ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের জরুরি দায়িত্ব। ফিলিস্তিনী অর্থনীতি বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছে। এর পুনর্নির্মাণে বিশ্বের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
পুরো ফিলিস্তিনী অঞ্চল আর্থিক মন্দায় আক্রান্ত রয়েছে ২০১৪-এর প্রথম চতুথাংশ থেকেই। দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনীদের জন্য অনুদান রাশি ক্রমে হ্রাস পেয়ে চলেছে। দাতাদের অনুদান রাশি ২০১৩ সালের তুলনায় ২শ মিলিয়ন ডলারের বেশি কমে এসেছে ২০১৪ সালের প্রথমার্ধে।
পশ্চিম তীরে ৬ জনে একজন বেকার। গাজার অবস্থা আরও শোচনীয়। প্রতি ২ জনের মধ্যে একজন সেখানে রোজগারবিহীন। দারিদ্র্য গড়ে ২৬ শতাংশ বেড়েছে। পশ্চিম তীরের তুলনায় দারিদ্র্যের অনুপাত গাজায় হচ্ছে দ্বিগুণ।
অবরোধ শিথিল হলে প্রবৃদ্ধি গতি পায়। বিশ্বব্যাংকের গত বছরের রিপোর্টে বলা হয়, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আনাগোনায় বিধিনিষেধ এবং আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার দরুণ ফিলিস্তিনী অর্থনীতি প্রাণ ফিরে পেতে পারছে না। ব্যাংক বলছে পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ এলঅখঅয় বিধিনিষেধ আরোপিত থাকায় প্রতিবছর তিন বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফিলিস্তিনীরা। অসলো সমঝোতার পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক ফিলিস্তিনীদের এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রাশি সাহায্য দিয়েছে। আরো চার গুণ অর্থ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ব্যাংকের। ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস ফিলিস্তিনীদের আরো অতিরিক্ত অর্থরাশি দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। বাজেট সাহায্য হিসেবে এবং পানি, বিদ্যুৎ ও মিউনিসিপ্যাল সেবা খাতে বিনিয়োগ হিসেবে ৬২ মিলিয়ন ডলার জরুরি অনুদান দেয়া হবে ফিলিস্তিনীদের। পিএর অর্থমন্ত্রী শুকরি বিশারার মতে বিশ্ব সাহায্য ছাড়া ফিলিস্তিনী বাজেট প্রণয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একসঙ্গে পুনর্নির্মাণ ও সেবাখাতের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ফিলিস্তিনীদের। টেকসই অর্থনীতি গড়ার পথে পা বাড়ানো তা না হলে সম্ভব হবে না। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে সাহায্য পৌঁছাতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে বেসরকারি খাতগুলোই সবসময় সবদেশে।
বার বার বিধ্বস্ত হওয়া ও বারবার পুননির্মাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে কোনো দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তি খুঁজে পেতে পারে না। গাজায় বিনাশের চিত্র আঁকতে গিয়ে বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা লিখেছেন, গাজার সুবাইয়া এলাকার বিশাল পানির আধারটি থেকে আশপাশের আড়াই লাখ মানুষকে পানি পৌঁছানো হতো।
সেই ট্যাংকিটিকে ইসরাইলী বোমা এমনভাবে বিধ্বস্ত করেছে যে, সেটির আর মেরামত সম্ভব হবে মনে হয় না। একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের অবস্থান স্থলটির বর্ণনায় কর্মকর্তা লিখেছেন মনে হতে লাগলো চন্দ্র পৃষ্ঠের কোনো এক অংশ আমি যেন অবলোকন করছি। শিফা হাসপাতালে ডাক্তাররা জানালেন, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের নিদারুণ অভাবে আহত অসুস্থ লোকদের প্রয়োজনীয় কোনো চিকিৎসাই তারা দিতে পারছেন না। ৬০ হাজার ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রায় এক লাখের মতো মানুষ গৃহহীন হয়েছে। আল-জাজিরা

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button