কামারুজ্জামানকে সব আইনি সুযোগ দিতে হবে : লর্ড কার্লাইল
খ্যাতনামা ব্রিটিশ আইনজীবী এবং হাউজ অব লর্ডসের সদস্য লর্ড কার্লাইল কিউসি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না হলে কিংবা আইনি সুযোগগুলো না দিয়ে তার ফাঁসি কার্যকর করা হলে তা হবে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শামিল।
শুক্রবার ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. আবদুল হান্নানকে লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।
চিঠিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তিনটি রায় প্রদান করেছে। জামায়াতের দুই সিনিয়র নেতাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি-জেনাজেলের দণ্ড সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রেখেছে। এই রায়গুলোর সবই আসলে ত্রুটিপূর্ণ বিচারিকপ্রক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশেষ করে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, তার ফাঁসি কার্যকর ‘এখন সময়ের ব্যপার মাত্র।’ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত দেশীয় আইন অনুসারে কামারুজ্জামানকে ওই রায় ‘রিভিউ’ করার এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার অধিকার দিতে চাচ্ছে না।
লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘বিচারিকপ্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়ে না যাওয়ায় শাস্তি কার্যকর করার যেকোনো পদক্ষেপ অবশ্যই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এটা করতে ব্যর্থ হলে এবং কামারুজ্জামানকে তার অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে ব্যর্থ হলে তা হবে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সামিল।
তিনি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া এবং আপিলপ্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। বিপুলসংখ্যক আন্তর্জাতিক আইনি ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ বিচারের মান এবং বিশেষভাবে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার খর্ব করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনও বারবার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার আলোকে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা করতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের গোটা প্রক্রিয়ায় আসামিপক্ষের সুযোগ খর্ব করা হয়েছে। আসামিপক্ষকে প্রমাণ জমা দেয়া, প্রস্তুতির সময় এবং সাক্ষীর সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে।
লর্ড কার্লাইল আরো বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির পূর্ববর্তী প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দুর্ভাগ্যজনক ইতিহাস রয়েছে। তবে এই ট্রাইব্যুনাল সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ নজির গড়েছে। দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপট একটি প্রজন্মের জন্য মেরুকরণ এবং বিষাক্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো : আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে এবং তদারকিতে অবিলম্বে নতুন করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা, ট্রাইব্যুরনালের সব দণ্ডাদেশ স্থগিত করা, আইসিটির বিরাজমান বিচারগুলো নিয়ে পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ তদন্ত করা, এবং উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব বিচার স্থগিত করা। লর্ড কার্লাইল বলেন, বাংলাদেশ যদি বর্তমান পথে চলতে থাকে, তবে আরেকটি রাজনৈতিক ডামাডোল শুরু হতে পারে। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের আন্তর্জাতিক চাপ, মানবাধিকার ও নিরপেক্ষতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হলেই কেবল বাংলাদেশ অতীতের বিরোধ মিটিয়ে ফেলে জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিচার বিভাগ, বাংলাদেশ সরকারকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করতে এবং কামারুজ্জামানকে রিভিউ করার অধিকার মঞ্জুর করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি সব মৃত্যুদণ্ডাদেশ (নীতিগত কারণে এর বিরোধী) অবিলম্বে হ্রাস করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদন করছি।