ফাঁসি না দিলে মুঈনুদ্দীনকে ফেরত দেবে যুক্তরাজ্য

Moin Uddinমুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে দেয়া মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনা না করলে তাকে ফেরত দেবে না যুক্তরাজ্য। তারা বাংলাদেশকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখিতভাবে আশ্বাস প্রদান করতে হবে, প্রত্যাবাসনের পরে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে না। বিষয়টি জানিয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে বাংলাদেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক রায় আদায়ের জন্য কূটনৈতিক প্রয়াসের পাশাপাশি বিশেষায়িত আইনি পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। এমতাবস্থায় প্রত্যার্পণের বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে যুক্তরাজ্যে স্বনামধন্য কোনো আইনি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে। প্রত্যার্পণের পুরো প্রক্রিয়াটি প্রশাসনিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি বলেও মন্তব্য করা হয় চিঠিতে।
গত বছরের ৩ নভেম্বর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরই মুঈনুদ্দীন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এরপর থেকে নাগরিকত্ব নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যেই আছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যার্পণের অনুরোধ জানিয়ে ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এফসিও, স্বরাষ্ট্র দফতর ও ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের (সিপিএস) সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে যোগাযোগও করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরের মতামতের সারসংক্ষেপ উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের প্রত্যার্পণের অনুরোধপত্র স্থানীয় আদালতে উপস্থাপনের আগে বাংলাদেশ সরকারের কাছে সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য জানতে চাইতে পারে যুক্তরাজ্য। মামলা পরিচালনার স্বার্থে অনুরোধপত্রের সঙ্গে প্রেরিত আইনি দলিলগুলোর মূল বা সার্টিফায়েড কপির অফিসিয়াল ইংরেজি অনুবাদ প্রেরণ করা প্রয়োজন। এসব দলিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তা দ্রুত মিশনে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
লিখিত আশ্বাস প্রদানের বিষয়টি জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়, অন্যথায় প্রত্যার্পণের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ যুক্তরাজ্যের আদালত নাকচ করে দিতে পারেন বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র দপ্তর অবহিত করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের মতামত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা যেতে পারে বলেও চিঠিতে মন্তব্য করা হয়।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামিদের সাজা কার্যকর কার্যক্রম মনিটরিং সেল গঠিত হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সেলের প্রথম বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। বিদেশী নাগরিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকায় তাদের ফেরতও আনা যাচ্ছে না। ওইসব দেশে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য বা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে সোচ্চার সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের দ্বারা মামলা করাতে হবে। এর ফলে নাগরিকত্ব গ্রহণকালে তারা নিজ দেশে কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেনি বলে যে অঙ্গীকারনামা দিয়েছিল তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। এ কারণে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হলে দুই আসামিকেই দেশে ফেরত এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button