সত্য বললেই স্বাধীনতাবিরোধী বলা হচ্ছে : শারমিন আহমদ
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশে সত্য কথা বলতে না দেয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। সত্য কথা কারো মতের বিপক্ষে গেলেই স্বাধীনতাবিরোধী বা মত মেনে না নিলেই কাউকে রাজাকার, আল-বদর বলার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এ প্রবণতা দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
গত শনিবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটের জুইস সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্রে প্রগ্রেসিভ ফোরাম নামে একটি সংগঠনের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমিন এসব কথা বলেন।
শারমিন আহমদ আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু আর তাজউদ্দীন একে অন্যের পরিপূরক। তাজউদ্দীনের কথা বললে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয় না। বঙ্গবন্ধুকে আমি একজন মানুষ হিসেবে দেখতে চাই, দেবতা হিসেবে নয়। অজানা ভীতির কারণে বাংলাদেশে সত্য উচ্চারণ করতে না দেয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে বলেও মত দেন তিনি। তাজউদ্দীন-কন্যা বলেন, দেশে কারো মতের বিপক্ষে কথা বললেই তাকে স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যা দেয়া হয়। এই প্রবণতা ভয়াবহ। এটা রোধ করতে সাহসী ভূমিকা নিয়ে দেশপ্রেমিক চিন্তাশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
প্রবাসী এই গবেষক বলেন, কোনো দেশে যদি মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার অবাধ সুযোগ না থাকে, তাহলে সেদেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কখনই টেকসই হবে না। বাংলাদেশে সরকার বদল হচ্ছে, সাথে সাথে ইতিহাস বদলে যাচ্ছে। এর মূল কারণ আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা দলীয় হয়ে যাচ্ছেন। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হলেও নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়নি। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে খ-িত ইতিহাস উপস্থাপন করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশে নতুন প্রজন্মকে সত্যিকার ইতিহাস জানতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের অখ- ইতিহাস জানার সুযোগ এবং সত্য উচ্চারণের সুযোগ সৃষ্টি করা সবচেয়ে জরুরি।
জেলহত্যার বিচার নিয়ে নিজের অসন্তোষ ও হতাশা ব্যক্ত করে আলোচিত এই ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা-পিতা’ বলেন, ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার সঙ্গে পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জেলহত্যার কথিত বিচারে এমন কয়েক ব্যক্তিকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো, যারা দেশেই থাকেন না।
অনুষ্ঠানে শারমিন আহমদ বক্তব্যের শুরুতে নিজের লেখা ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’ বই সম্পর্কে সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বইটি না পড়েই ঢালাও সমালোচনা করা হলো। খোদ মন্ত্রী পর্যায় থেকে বলা হলো-একে খন্দকারের বই ও শারমিন আহমদের বই একই জায়গা থেকে লেখা হয়েছে। অথচ আমি কেবল অনালোচিত ও গবেষণালব্ধ সত্যি ইতিহাসগুলোই গ্রন্থটিতে তুলে ধরেছি।