অর্থমন্ত্রীর ‘ঘুষ’ বৈধ করা সংক্রান্ত বক্তব্যে তোলপাড়
ঘুষকে বৈধ করা সংক্রান্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের আলেমসমাজ ও বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। তারা অবিলম্বে অর্থমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে। গতকাল বুধবার বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।
দেশের শীর্ষ ইসলামী নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে ঘুষকে বৈধ ঘোষণা দেয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিতকে ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়ে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
শীর্ষ আলেমগণ বলেন, সরকারের ছত্র-ছায়ায় ও গোপন পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে নিত্য-নতুন মুরতাদ তৈরী হচ্ছে। মহান আল্লাহ তায়ালা, মহানবী (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও পবিত্র ইসলাম নিয়ে কটূক্তিকারী মুরতাদ নরপশুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া দেশী বিদেশী ইসলাম বিদ্বেষী চক্রের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে।
উল্লেখ্য যে, গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিজিএমইএ-র সমঝোতা স্মারক সই উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সুস্পষ্ট হারাম “ঘুষ”কে বৈধ ঘোষণা দিয়ে তিনি নব্য মুরতাদদের কাতারে শামিল হয়েছেন। এজন্য তাকে রদ্দে কুফর পড়ে নতুন মুসলমান হতে হবে। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে “আগে ঋণ পেতে অনেক টাকা খরচ করতে হত। আমাদের দেশে এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স করতেও অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। আমি ৪০ বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেছি। সে সময় আমাকেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। তবে এটাকে আমি অবৈধ বলতে রাজি না।” তিনি আরো বলেন, “আমি মনে করি কাজ দ্রুত করায় যদি কেউ কাউকে উপহার হিসেবে কিছু (ঘুষ) দেয় তবে তা অবৈধ নয়। উন্নত দেশে এটার বৈধতা দেওয়া হয়েছে ভিন্ন নামে। তারা এটার নাম দিয়েছে ¯প্রীড মানি।” এটা ইসলামী বিধানের সাথে চরম উপহাসের শামিল।
অথচ হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট এসেছে “ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামী”। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে “ঘুষ দাতা ঘুষ গ্রহীতা আল্লাহর তায়ালার চির অভিশপ্ত।” আবু দাউদ, তিরমিযীসহ সহীহ হাদীসের কিতাব সমূহ। ৯৫ ভাগ মুসলমানের এদেশে কাদের খুশি করার জন্য কিসের লোভে আবুল মাল আবুল মুহিত একজন মুসলিম হওয়ার পরও কান্ডজ্ঞানহীনভাবে ইসলাম বিদ্বেষী শয়তানী উক্তি করেছেন? যে ঘুষকে দুনিয়ার কোন কাফের বেঈমানরাও বৈধ বলার দুঃসাহস দেখায়নি! ইতোপূর্বেও তিনি ইসলামী দল ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে “রাবিশ” উক্তি করে বাতিলের পক্ষ নিয়েছিলেন। সরকার যদি এখনি এসমস্ত ধর্মদ্রোহী মুরতাদদের শায়েস্তা না করে তাহলে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী কটূক্তি করতেই থাকবে তারা ।
শীর্ষ ইসলামী নেতৃবৃন্দ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, অবিলম্বে নব্য মুরতাদ আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করে তাকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। তাকে এবং কুলাঙ্গার মুরতাদ আ. লতিফ সিদ্দিকীসহ সকল মুরতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন। মুরতাদদের কঠোর শাস্তি সম্বলিত বিশেষ আইন প্রণয়ন করুন। যাতে আর কোনো ধর্মদ্রোহী নরপশু, কুলাঙ্গাররা ইসলাম ও ইসলামী বিধি বিধান নিয়ে তামাশা করার দুঃসাহস দেখাতে না পারে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- শাইখ মাওলানা আবদুল মোমিন, রাবেতা আলম আল-ইসলামীর স্থায়ী সদস্য ও সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপিত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রধান আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ, খেলাফত মজলিশের আমীর মাওলানা মোহাম্মাদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের আমীর মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, হাফেজ্জে হুজুরের সাহেবজাদা হাফেজ মাওলানা আতাউল্লাহ, অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, ইসলামীক পার্টির চেয়ারম্যান এড. আবদুল মোবিন, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, শাহতলীর পীর ও হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদের আমীর মাওলানা আবুল বাশার, ফরায়েজী আন্দোলনের আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ হাসান, মাওলানা তাহের জাবেরী আল-মাদানী, জামেয়া এমদাদিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মুফতি আবদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি হাফেজ নুর হোসাইন কাসেমী, শর্ষীনার পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল¬াহ সিদ্দীকি, মীরের সরাইর পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল মোমেন নাছেরী, টেকের হাটের পীর সাহেব মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মুফাস্িসরে কুরআন মাওলানা লুৎফুর রহমান, মুফতি নুর হোসেন নুরানী, মাওলানা আজিজুল হক আজিজ, হুফ্ফাজ পরিষদ সভাপতি হাফেজ লেয়াকত হোসাইন কাসেমী ও সেক্রেটারি মুফতি মাহবুবুর রহমান কাসেমী, ইমাম মুয়াজ্জিন পরিষদ সভাপতি মাওলানা সালেহ সিদ্দিকী ও সেক্রেটারি মুফতি জুবায়ের আহমদ, ইসলামী অন লাইন এ্যাক্টিভিটস সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা আবদুস সামাদ ও মহাসচিব মুফতি আবু আনাস প্রমুখ।
পীর সাহেব চরমোনাই
“ঘুষ দেয়া-নেয়া অবৈধ নয়” সরকারের প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত-এর এ ধরনের নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত বক্তব্যে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, মহান রব্বুল আলামিন সুদ-ঘুষকে হারাম ঘোষণা করেছেন। কেননা ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে সামাজিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। মন্ত্রী বলেছেন, ঘুষ নাকি কাজের গতি আনে। আমরা মনে করি ঘুষের কারণেই দেশে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সুদ-ঘুষ, মদ-জুয়া সামাজিক চেইন অব কমান্ডকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। মন্ত্রীর এহেন বক্তব্যে দেশে ঘুষ প্রথাকে আরো জোরদার করা হলো। রাসূল সা. হাদীস শরীফে ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়কে জাহান্নামী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ৯২ শতাংশ মুসলিম দেশের অর্থমন্ত্রী ঘুষকে বৈধ মনে করেন না। তার কথায় তিনি ঘুষকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সুরা তাওবায় বর্ণিত আছে, “মহান রব্বুল আলামিন যে বস্তু হারাম করেছেন, সেটা কেউ হারাম হিসেবে না জেনে হালাল স্বীকৃতি দিলে তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কথা বলেছেন” মন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মুসলিম প্রধান দেশের মন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। ঘুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে নামেই চালু থাকুক কেন, কোন মুসলমান ঘুষকে হালাল বা বৈধ বলার এখতিয়ার নেই। মহান আল্লাহ যে বস্তুকে হারাম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন তা হালাল করার শক্তি কারো নেই। কাজেই রাবিশ অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে তওবা করতে হবে।
গতকাল বুধবার খুলনা বিভাগে সপ্তাহব্যাপী সফরকালে মেহেরপুর সদর কলেজ ময়দানে আয়োজিত বিশাল ইসলামী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাদেরসহ জেলা নেতৃবৃন্দ ও উলামায়ে কেরাম।
খেলাফত মজলিস
বাংলাদেশে সরকারের অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিতের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ঘুষ আদান- প্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ বিষয়। প্রচলিত আইনেও ঘুষ নিষিদ্ধ। ঘুষ হচ্ছে এক ধরনের ডাকাতি। ঘুষ- দুর্নীতি হচ্ছে অর্থনীতির ক্যান্সার। কিন্তু সরকারের অর্থমন্ত্রী যেভাবে ঘুষের গুণকীর্তন করেছেন তা খুবই আশ্চর্যের বিষয়। যে দেশের সরকারের অর্থমন্ত্রী ঘুষকে বৈধ বলে সেদেশে দুর্নীতি থাকবে না কোথায় থাকবে। তার বক্তব্যে দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত দেশে ঘুষ- দুর্নীতির প্রতিযোগিতা শুরু হবে।
বিবৃতিতে তিনি অনতিবিলম্বে অর্থমন্ত্রীকে তার ‘ঘুষ দেয়া-নেয়া অবৈধ নয়’ বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। তা না হলে দেশের জনগণ ঘুষ- দুনীর্তি ও এর প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলবে। সাথে সাথে তিনি দেশের সচেতন জনতাকে অবৈধ ঘুষ- দুনীর্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলন
ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অপসারণ দাবি করেছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, ঘুষ লেন-দেন ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। হাদীস শরীফে আছে ঘুষ দাতা ও গ্রহিতা উভয়েই জাহান্নামী। অথর্ব অর্থমন্ত্রী ঘুষ লেন- দেন অবৈধ নয় বলে চরম অপরাধ করেছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে মন্ত্রীর অপসারণ দাবি করেন ।
গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন। বিবৃতি দিয়েছেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মাওলানা মুহাম্মদ এনামুল হক আজাদ, জয়েন্ট সেক্রেটারি মোস্তফা তারেকুল হাসান, মহানগরী আমীর মোস্তফা বশীরুল হাসান, নায়েবে আমির মওলানা ফারুক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হুসাইন।