জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের ভিন্ন রায়ের সম্ভাবনা কম
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে সুপ্রিমকোর্টও সেই রায়ই বহাল রাখা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।
বুধবার ‘বাংলাদেশ’স পলিটিক্স: ডিসপেনসাবল অ্যালাইস’ শিরোনামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে পূর্বাভাস দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বলে যে শোরগোল তুলছে তা অন্তঃসারশূণ্য। যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও শেখ হাসিনা চাইবেন ফাঁসির রায় যতটা কম কার্যকর করা যায়।
বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে দেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থি দল জামায়াতের ইসলামীর ‘ইসলামী’ গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক অভিযোগ করে এক বিভক্ত রায়ে গত ১ আগস্ট এর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
ইকোনমিস্টের নিবন্ধে বলা হয়, ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পরে যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থি বুদ্ধিজীবীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এখন ছোট দল হলেও জামায়াত একদিন বাংলাদেশের সেক্যুলার ট্রেডিশন ধ্বংস করে দিয়ে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে। তবে বিপ্লবের মাধ্যমে নয়, সেটা তারা করবে ব্যালটের মাধ্যমে।
আগে এটাকে কিছুটা অদ্ভূত মনে হলেও গত সপ্তাহে এটাকে একেবারেই অর্থহীন মনে হয়েছে। ঢাকার হাইকোর্ট বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এবং বৃহত্তম ইসলাপমপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীকে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। রায়টি স্থগিত চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে করা আবেদন ৫ আগস্ট খারিজ করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।
এই আইনি লড়াইয়ের পরিণতি হলো সুপ্রিমকোর্ট ভিন্ন কোনো অবস্থান না নিলে বাংলাদেশে তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে সুপ্রিমকোর্টের ভিন্ন অবস্থান নেয়ার সম্ভাবনা কম। অন্য একটি উপায় হচ্ছে জামায়াতের গঠনতন্ত্রের মৌলিক পরিবর্তন, যেটাও প্রায় অসম্ভব।
রায়টি বহাল থাকলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তার দীর্ঘদিনের মিত্রকে হারাল। বিএনপির জন্য এটা তাদের বড় ইস্যু। গত কয়েক বছরে ধরে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য অপিরিহার্য।
তবে বিএনপি জানে এখন সময় তাদের। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা চরমভাবে ভালো করেছে। বাংলাদেশে কোনো দলই পরপর দুই মেয়াদে সরকার গঠন করতে পারেনি। এ অবস্থায় জামায়াতের সঙ্গে জোট তাদের আরো বাড়তি সুবিধা দেবে।
নিবন্ধে বলা হয়, ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বলে শোরগোল তুলছে। তবে এই হুমকি অন্তঃসারশূণ্য। সহিংস প্রতিরোধের আশঙ্কা রয়েছে সরকারের। তাছাড়া সরকার ভালো করেই জানে যে সৌদি আরবের সমর্থনপুষ্ট তার রাজনৈতিক শত্রুকে আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঠানো যাবে না।
এদিকে, জনঅসন্তোষ দমন করতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, শুধু গত ফেব্রুয়ারি থেকেই অন্তত ১৫০ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা এবং ২০০০ জনকে আহত করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
গত সপ্তাহান্তে আওয়ামী লীগ কূটনীতিক এবং দাতাদের আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করেছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে চায় না।
নিবন্ধে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় এবং আপিল নিয়ে সামনের মাসগুলোতে লড়াই আরো তীব্র হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও এখন তিনি চাইবেন ফাঁসির রায় যতটা কম কার্যকর করা যায়।
১৯৯১ সালের পর থেকে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া ষষ্ঠবারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই প্রথম এই নির্বাচনে খ্যাতনামা ইসলামপন্থি রাজনীতিকদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। নির্বাচনের আগে বড় বড় রাজনীতিকরা মহান সুফী সাধক হযরত শাহজালালের (রা.) মাজার জিয়ারত করবেন, যে কাজটি জামায়াত করত না।
ভারত চাইবে শেখ হাসিনা পূর্বেকার নজির উপেক্ষা করে (পরপর দুইবার ক্ষমতায় না আসা) পুননির্বাচিত হউক। নির্বাচিত হলে তিনি হবেন এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী। হাসিনা হেরে গেলে এই রেকর্ডটি অর্জন করবেন খালেদা জিয়া।
আশার কথা হলো, শেখ হাসিনা যদি পরাজিত হন তাহলে পেন্ডুলাম ঘুরে যাবে। ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি তার অপদস্থ মিত্রকে পুনর্বাসিত করবে এবং যুদ্ধাপরাধের রায় বাতিল করবে।