ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ঘটছেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ঘটছেই। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, তারা গত এক বছরে ২০টির মতো যৌন হয়রানি অভিযোগ পেয়েছে। কিন্তু বিবিসি বাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, হয়রানির শিকার হবার পরেও লোকলজ্জার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থীই চুপ থেকে অভিযোগ করেন না। যেসব ঘটনা নিয়ে হয়রানির শিকার নারী শিক্ষার্থীরা মুখ খোলেন কেবল সেগুলোই লোক জানাজানি হয়; প্রতিবাদ হয়, সেসব ক্ষেত্রেই ব্যাবস্থা নেয়া হয় অভিযুক্ত শিক্ষক ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র বা টিএসসিতে কথা হচ্ছিলো এক নারী শিক্ষার্থীর সাথে। তার অভিযোগ, বিভাগের এক শিক্ষক তার সাথে যৌন সম্পর্ক গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেও পৌঁছেছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিবিসিকে তিনি হয়রানির সেই ঘটনা বলতে রাজি হন।
‘বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে স্যার যে আচরণ করছিলেন তা আমি মানতে পারিনি, আমি চলে এসেছি। চলে আসার সময় তিনি জিজ্ঞেস করছিলেন, তাহলে পরীক্ষার খাতার কী হবে? আমি বলেছি স্যার আপনার যা ইচ্ছা তাই দিয়েন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মিস্টার আমজাদ বলেন, গত এক বছরে বিশটির মতো অভিযোগ তার কাছে এসেছে। তিনি আরো জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালযয়ের আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে।
এখানকার শিক্ষক বা ছাত্র শুধু নয়; বহিরাগতদের কাছেও হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সমাজকল্যাণ বিভাগের তেমনই এক শিক্ষার্থী তাপসী রাবেয়া বলেন যে বাইরের এক লোক বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে এসে উত্যক্ত করতো।
তিনি বলছিলেন, ‘আমি হল থেকে কাসের দিকে আসার সময় একটা ছেলে আমার পিছু নিত। ক্যাম্পাসে ঘুরতে বের হলেও পিছু নিতো। পরে সে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এসে, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এসে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিত।’
হয়রানির শিকার অনেক নারী শিক্ষার্থী লোকলজ্জার ভয়ে চুপ থেকে যান ও অভিযোগ করেন না।
তাপসী রাবেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেননি। তিনি বলছিলেন, সেই লোক তার আত্মীয় হওয়ায় তিনি কিছু বলতে পারেননি।
হয়রানির শিকার এসব শিক্ষার্থীর সবাই যে অভিযোগ করছেন, এমনটা নয়। অনেকেই এসব ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছেন। সেই হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর কতজন শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হন তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।
কিন্তু, তারা কেন অভিযোগ করেন না? হয়রানির শিকার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী বলছিলেন, অভিযোগের যথাযথ পদ্ধতি তিনি জানেন না।
বাংলাদেশের সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন বা অন্যান্য হয়রানির মতো ঘটনা কেন ঘটছে?
বিশ্ববিদ্যালয়টির উইম্যান অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ শেখ ইমতিয়াজ বলছিলেন, ‘যখনই আমরা নারী স্বাধীনতার জন্য কোনো উদ্যোগ নিতে যাই তখনই একটি প্রতিক্রিয়াশীল অংশ প্রচন্ডভাবে সেটার বিরোধিতা করে এবং আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিভাগে নারীদের অধিকার বা নারী-পুরুষের সমতা বিষয়ে কোনো কোর্স নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে জেন্ডার বিষয়ে পড়াশোনার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আর হয়রানির ঘটনার পর দোষীদের সাময়িক বরখাস্তও করা হচ্ছে।
তারপরও, কর্তৃপক্ষের নেয়া এসব পদক্ষেপ কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।