বাংলাদেশে আরেক নারীর ইতিহাস সৃষ্টি
বিমানবাহিনীর পাইলট অফিসার তামান্না-ই-লূৎফী দেশের প্রথম সামরিক নারী বৈমানিক হিসেবে সফলভাবে একক উড্ডয়ন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বৃহস্পতিবার যশোরে বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে তিনি তার প্রথম উড্ডয়নে সফল হন।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়ে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনীতে নারী কর্মকর্তা নিয়োগের পাশাপাশি, জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীর অবদান এবং দৈনন্দিন জীবনে নারীদের নিরলস পরিশ্রম ও নিষ্ঠার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রথমবারের মতো জিডি (পাইলট) ব্রাঞ্চে নারী বৈমানিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বেসামরিক ক্ষেত্রে নারী বৈমানিক থাকলেও সামরিক জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং বৈমানিক পেশায় বাংলাদেশে এই প্রথম নারী বৈমানিক নিয়োগের মাইলফলক স্থাপন করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।
চলতি বছরের ২৩শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ স্কোয়াড্রনে প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন দুজন নারী বৈমানিক ফাইং অফিসার নাইমা হক ও পাইলট অফিসার তামান্না-ই-লূত্ফী।
বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্সের জন্য নির্বাচিত হওয়া এই দুই নারী কর্মকর্তা বর্তমানে ১৮ স্কোয়াড্রনের অধীনে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের প্রথম ধাপ হিসেবে বৃহস্পতিবার তামান্না-ই-লূত্ফী বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে প্রথম সফলভাবে একক উড্ডয়নে সক্ষমতা অর্জন করেন। নারী অগ্রযাত্রার এই অভিযান তাদের সাফল্য বাংলাদেশ বিমানবাহিনী তথা সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য এক নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে বলে জানায় আইএসপিআর।
উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন নারী বৈমানিক বেসামরিক বিমান চালানোর অনুমতি পান। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে বিমান চালানোর অনুমতি পান সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা। ১৯৮৪ সালে বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া খারাপ থাকায় বর্তমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফকার বিমান অবতরণ করাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পাইলট কানিজসহ ওই বিমানের ৪৫ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু।
এছাড়া এই বছরেই আরো ১৩ নারী ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। গত ২০শে সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ১৩ জন নারী নাবিক কাজ শুরু করেন। তারা সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি পান। ইতিহাস গড়া এ দেশের এই নারী মেরিন ক্যাডেটরা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজে যোগ দিয়েছেন। আর বাংলাদেশের নারীরা এখন ট্রেনও চালাচ্ছেন। পুলিশ, সামরিক বাহিনীসহ সব ধরণের পেশায় রয়েছে তাদের অংশগ্রহণ। তারা পর্বত আরোহণ থেকে শুরু করে ডুবুরি সবখানেই সফল।
নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশের প্রথম সামরিক নারী বৈমানিকের এই সফল উড্ডয়ন বাংলাদেশে নারীদের এগিয়ে যাওয়ায় নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করল, যা নারীদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। তিনি প্রমাণ করলেন যে, নারীরা মেধা ও যোগ্যতায় কারো থেকে পিছিয়ে নেই। সুযোগ পেলে তাদের মেধা এবং কাজের প্রমাণ রাখতে সক্ষম। তবে তিনি বলেন, নারীদের আরো অনেক পথ পেরোতে হবে। আর কর্মক্ষেত্র হতে হবে নারীবান্ধব।