ভারতে কারাবন্দীর ২০ শতাংশই মুসলমান
ভারতে মুসলমান, দলিত ও আদিবাসীরা সবচেয়ে নাজুক সম্প্রদায়। এই তিন সম্প্রদায় মোট জনসংখ্যার ৩৯ শতাংশ হলেও কারাগারগুলোতে আটক লোকদের ৫৩ শতাংশই তারা। ভারতের প্রভাবশালী টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় সোমবার এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে ভারতে মোট ৪.২ লাখ কারাবন্দি ছিল। এদের প্রায় ২০ শতাংশ মুসলমান। অর্থাৎ কারাবন্দি লোকদের প্রতি পাঁচ জনের একজনই মুসলমান। অথচ ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ হলো মুসলমান। আর দলিতরা মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ হলেও বন্দিদের ২২ শতাংশ তারা। আর কারাগারে বন্দিদের ১১ শতাংশ আদিবাসী। অথচ তারা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ।
বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এটা খারাপ প্রবণতা। এসব সম্প্রদায়ের সদস্যা বেশি অপরাধপ্রবণ, এমন কারণে কিন্তু তাদের বেশি বেশি সদস্য কারাবন্দি নয়। বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে তারা পিছিয়ে থাকায় তারা ব্যয়বহুল আইনিপ্রক্রিয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে না পারায় তাদেরকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। এমনকি তারা জামিনের বহন করতে না পারায় তাদের জেলেই থাকতে হচ্ছে। এছাড়া অনেকে মনে করছেন, এসব সম্প্রদায়ের সদস্যদের মিথ্যা মামলায় ফাসানো হয়।
২০০৬ সালে ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী দিল্লি হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি রাজেন্দর সাচার উল্লেখ করেছেন, অনেক মুসলিম যুবকই অনেক বছর কারাগারে থাকার পর নির্দোষ হিসেবে মুক্তি পেয়েছেন।
মানবাধিকার কর্মী কলিন গনসালভেস বলেন, এই তিন সম্প্রদায়ে দারিদ্র ব্যাপকভাবে বিরাজ করছে। এ কারণে তারা আইনি ব্যবস্থার সুযোগ নিতে পারে না।
তিনি বলেন, ভারতে পুলিশ ও বিচার বিভাগে এই তিন সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যা অনেক কম হওয়ার কারণেও তারা সমস্যার পড়ছে।
সাচার কমিশনের সদস্য আবু সালেহ শরিফ বলেন, ৬৮ শতাংশ বন্দি বিচারাধীন। আর মুসলমানরা বিচার বিভাগের বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারার কারণে তাদেরকে জেলেই থাকতে হয়।
তিনি বলেন, সতর্কতামূলক আইনে যাদের বন্দি করা হয়, তাদের প্রায় অর্ধেকই মুসলমান। সরকারের উচিত, বিষয়টি বিবেচনা করা।
ন্যাশনাল দলিত মুভমেন্ট ফর জাস্টিজ রমেশ নাথান অভিযোগ করেন, দলিতদের ভীতি প্রদর্শন করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এ কারণেই তাদের বিপুলসংখ্যক সদস্য কারাগারে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৫ বছর থেকে মুসলমান, দলিত ও আদিবাসীদের অবস্থা একই রকম হয়ে আছে।