লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির বিষয়ে কোন ছাড় নয় : শফী
আবুল বাশার, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম): ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম পবিত্র হজ্ব, বিশ্বমানবতার মুক্তিরদূত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে চরম সীমালংঘনকারী বক্তব্য ও বেয়াদবীর দায়ে অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে অবিলম্বে গ্রেফতার এবং ধর্মঅবমাননার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে কঠোর আইন প্রণয়ের দাবীতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সোমবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ এবং বুধবারের মধ্যে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকিকে গ্রেফতার করা না হলে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। হেফাজতে ইসলামের আমীর পীরে কামেল আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র সভাপতিত্বে সোমবার বেলা ১১টায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির এক জরুরী বৈঠকে এ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
আমীরের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর আল্লামা তাজুল ইসলাম, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী, মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সাহিত্য সম্পাদক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, আমীরের প্রেস সবিচ মাওলানা মুনির আহমদ, অর্থ-সম্পাদক মাওলানা কাতেব ইলিয়াস ওসমানী, মাওলানা মীর ইদরীস, মাওলানা হাফেজ মুজাম্মেল হক, মাওলানা শফিউল আলম প্রমুখ।
বৈঠকে হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, মুরতাদ আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তি ও ধর্মঅবমাননা বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের দাবীতে আজ পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ। সরকার ইতিপূর্বে তাকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ করে বলেছে, দেশে আসলেই তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। অথচ প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই সে বহাল তবিয়তে দেশে ঢুকে পড়েছে। তিনি বলেন, মুরতাদ আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী একের পর এক যে দুঃসাহস দেখাচ্ছে, তার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে অন্যান্য ইসলাম বিদ্বেষীরাও এতে উৎসাহ পাবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পবিত্র ধর্ম ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, সার্বজনীনতা ও শৃঙ্খলার নীতি অনুসরণ করে ধর্মদ্রোহী এই মুরতাদের বিচারের দাবীতে গড়ে উঠা শান্তিপূর্ণ এই প্রতিবাদি আন্দোলন আরো জোরদার করতে হবে। এই জালেমের বিচার হতে হবে। তিনি দেশবাসীর প্রতি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর অবিলম্বে গ্রেফতার এবং ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবীতে হেফাজতের ঘোষিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে জোরদারভাবে শরীক হওয়ার আহ্বান জানান।
সুশাসন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সম বিধান কায়েম ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য মানুষ কেয়ামত পর্যন্ত লড়াই-সংগ্রাম করবে, ইসলামের এই শিার প্রতি ঈমানদারদের মনোযোগী হওয়ার আহবান জানিয়ে হেফাজত আমীর বলেন, আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাই না। নিজেরা কারো শিরচ্ছেদ করব না, করতেও চাই না। আমরা চাই, অবিলম্বে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাশ করা হোক এবং সে আইনের আওতায় এই মুরতাদকে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক। এই দাবী বাস্তবায়নে উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতা কোন ছাড় দিবে না।
হেফাজত আমীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে দেশে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর অবমাননার জন্য ৭-১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা আর্থিক জরিমানার আইন করে তা কার্যকরও করা হচ্ছে, অথচ কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয়ের স্পন্দন মহানবী ও ইসলামের অবমাননাকারীর দৃশ্যতঃ কোনই শাস্তি হয় না।
বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী পবিত্র হজ্ব, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাবলীগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করায় পদচ্যুত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মুরতদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির দাবীতে হাজার-হাজার মানুষের রাজপথে নেমে এসে প্রতিবাদী হওয়ার ঘটনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ঈমানী দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ এই প্রতিবাদ আরো জোরদার করতে হবে। ধর্মদ্রোহী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী মানুষ রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ না করা পর্যন্ত তার শত শত কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের তথ্য কেন দেশবাসীর দৃষ্টির অগোচরে রাখা হয়েছিল এই প্রশ্ন তুলে তিনি জানতে চেয়েছেন, দেশের সংবাদ মাধ্যম কতটা স্বাধীন? কোথায় ছিল দূর্নীতি দমন কমিশন? মজলুমের হক মেরে খাওয়া এই হারামখোরকে তার অবাধ লুটতরাজ ও সন্ত্রাস ছড়ানোর অপরাধে যদি রাষ্ট্র যথাসময়ে বিচারের আওতায় আনতো, তাহলে সে বেপরোয়া হয়ে ধর্মদ্রোহের মতো অঘটন ঘটানোর সুযোগ পেতো না। হেফাজত মহাসচিব সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্রুত এই মুরতাদকে গ্রেফতার করুন এবং ধর্ম অবমাননা বিরোধী কঠোর আইন পাশ করে সেই আইনের আওতায় তার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করুন। দাবী আদায়ের আগ পর্যন্ত তৌহিদী জনতা ঘরে ফিরে যাবে না, একের পর এক কর্মসূচী চলতে থাকবে।
হেফাজত মহাসচিব আরো বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে এক শ্রেণীর লোকজন যে হারে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও অবমাননাকে একটা ফ্যাশনে পরিণত করেছে, বিশ্বের কোথাও সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে এমন ঘটনা দেখা যায় না। ইসলাম ও মুসলিম জাতিসত্তার পক্ষে কেউ কথা বললেই তাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে চিহ্ণিত করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। মুক্তমনা ও সাংস্কৃতি চর্চার নামে কার্যতঃ ইসলাম ও মুসলমানদেরকে টার্গেটে পরিণত করে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে অহরহ। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এমনটা কখনোই চলতে পারে না, চলতে দেয়া যায় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, এদেশকে স্বাধীন করা হয়েছে জুলুম-অত্যাচার ও নিপীড়নের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে, ইসলাম ও মুসলমানদের উপর আঘাত হানার জন্য নয়। ইসলাম ও মুসলিম চেতনার বিপক্ষে যারা কথা বলে, তারা দেশ ও জাতির দুশমন।
হাটহাজারীতে হেফাজতের বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশঃ এদিকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার বিকালে হাটহাজারী পৌরসভায় এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আসর হাটহাজারী ডাকবাংলো চত্বরে পৌরসভা সভাপতি মাওলানা মীর ইদ্রিসের সভাপতিত্বে প্রথমে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা সেক্রেটারী মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি, মাওলানা হাফেজ মুজাম্মেল হক, মাওলানা শফিউল আলম, পৌর সেক্রেটারী মাওলানা জাহাঙ্গীর মেহদী সহ নেতৃবৃন্দ। পরে মীর ইদ্রিসের নেতৃত্বে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল পৌরসভার গুরুত্বপুর্ণ সড়ক অতিক্রম করে হেফাজতের কেন্দ্রিীয় কার্যালয় হাটহাজারী মাদরাসার সামনে গিয়ে শেষ হয়।