লতিফ সিদ্দিকীর ফেরা নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

লতিফ সিদ্দিকীর দেশ ফেরা নিয়ে আজ সন্ধ্যায় সংসদে সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা। ২২ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা সত্ত্বেও তাকে বিমানবন্দরে নামতে দেয়া এবং বিমানবন্দর থেকে নিরাপত্তা অন্যত্র যাওয়া ও সেখানে ইচ্ছা চলাচল করতে পারার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন সংসদ সদস্যরা। তারা দ্রুত লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বলেন, এর সুযোগ নিয়ে যাতে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
তবে সরকারি দলের সিনিযর সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত তার দেশে ফেরার বিষয়ে বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়নি। তিনি বৈধ কাগজপত্র নিয়ে বিদেশ গিয়েছেন এবং এসেছেন। তাবে দেশ ফিরতে বাধা দেয়ার অধিকার সরকারের নেই। তাকে গ্রেফতারি পরোয়ানা  কার্যকর করার দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারি সংস্থার। কিন্তু তাদের হাতে কাগজপত্র না আসলে তাদেরও করার কিছু নেই। এখন আমরা আদালতের দিকে চেয়ে আছি। আদালত যেটা বলবে সরকার তা কার্যকর করবে।
মাগরিবের বিরতির পর ৭১ বিধির নোটিশের আলোচনার পর পয়েন্ট অব অর্ডারে লতিফ সিদ্দিকী প্রসঙ্গে সংসদে উত্তেজনা দেখা দেয়। জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলু ফোর নিয়ে প্রসঙ্গের সুচনা করেন। এরপর স্বতন্ত্র সদসস্য হাজী মো: সেলিম,  রুস্তম আলী ফরাজী, বিএনএফের চেয়ারম্যান এ কে এম আবুল কালাম আজাদ ও  সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত  বক্তব্য রাখেন।
জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, লতিফ সিদ্দিকী ধর্মের ওপর আঘাত করেছেন। আমারা কোনো ধর্মের ওপর আঘাত দেয়াকে সমর্থন করি না। লতিফ সিদ্দিকী ধর্মের ওপর আঘাত করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওয়ারেন্ট হয়েছে। তারপরও তিনি কিভাবে দেশে প্রবেশ করলেন? প্রধানমন্ত্রী যেখানে দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিস্কার করলেন সেখানে তিনি কিভাবে দেশে দেশে আসেন। কিভাবে যেখানে ইচ্ছা যেতে পারছেন। তাকে কেন আইনের আওতায় আনা হলো না। তাকে নিয়ে যাতে মৌলবাদীরা রাজনীতি করতে না পারে তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত। গ্রেফতার করা উচিত।  লতিফ সিদ্দিকী মৌলবাদীদের পক্ষে কাজ করেছেন। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এরপর হাজী সেলিম বলেন, বিমানবন্দরে ৭/৮টি গোয়েন্দা সংস্থা থাকতে এত লোক থাকতে লতিফ সিদ্দিকী কিভাবে সুন্দর করে বের হয়ে গেলেন? গোয়েন্দারা কেন দেখতে পাায় না। মানুষ বলছে সরকারের গ্রিন সিগন্যাল আছে। কিন্তু তার প্রশ্নই আসে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী তাকে দল ও মন্ত্রিসভা থেকে  বহিস্কার করেছেন।  লতিফ সিদ্দিকী কিভাবে বের হলেন তা তদন্ত করে বের করা উচিত।
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, লতিফ সিদ্দিকী বিদেশে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে বিপদে ফেলেছেন। দেশে অরাজকতা  সৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।  তিনি কোন সাহসে দেশে ফিরে এলেন? তিনি  দেশে ফিরে নৈরাজ্য ফিরিয়ে আনতে চান। তার দেশে ফেরায় মৌলবাদীরা, হেফাজত আল্টিমেটাম দেবে। তার বিরুদ্ধে ২২টা ওয়ারেন্ট আছে। যেকোনো মামলায় তাকে গ্রেফতার করা যায়। তিনি এমপি আাছেন কিনা স্পিকারকে জানাতে হবে। সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, ধর্ম অবমানননার আইন প্রয়োজনে ব্লাসফেমি আইন পাস করতে হবে। বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখলে চলবে না।
এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে যেন সংসদ নেতা একটি বক্তব্য দেন। তারপর স্পিকার এ ব্যাপারে তার মতামত দিতে পারবে না।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সর্বশেষ ফোর নিয়ে বলেন, সংবিধান স্পিকারকে এমন কোনো ক্ষমতা দেয়নি যে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। ফৌজদারী অভিযোগে আইন শৃৃঙ্খলা বাহিনী একজন সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করতে পারেন। গ্রেফতারের পর সেটা স্পিকারকে জানাতে হবে।
তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকী যে কথা বলে আঘাত করেছেন সংসদের প্রতিটি সদস্য এমনটি আওয়ামী লীগের তৃণমুল পর্যন্ত সবাই সমভাবে ব্যথিত ও সংবেদনশীল। প্রশ্ন এসেছে তিনি দেশে এসেছেন।  দেশ সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। লতিফ সিদ্দিকীকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়নি। তিনি বৈধ কাগজপত্র নিয়ে বিদেশে গেছেন এবং বিদেশ থেকে ফিরেছেন। এতে বাধা দেয়ার অধিকার সরকারের নেই। গ্রেফতাারি পারোয়ানা কার্যকর করার দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার।  তাদের হাতে পরোয়ানা না আসলে তাদের করার কিছুই নেই। আমরা এখন আদালতের দিকে চেয়ে আছি। যে আদেশ আসে সরকার সেটা কার্যকর করবো। আইন নিজসস্ব গতিতে চলবে। যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইলে সে অবস্থা থেকে আমাদের দুরে  থাকতে হবে।
স্পিকার এ  বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে দিনের অন্য কর্মসুচীতে চলে যান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button