খালেদাকে ফের আদালতে হাজিরের নির্দেশ
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ অভিযুক্ত সকলকে আগামি ১ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওইদিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতেও মামলার উভয় পক্ষকে বলা হয়েছে। সোমবার ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় এই আদেশ দেন।
এর আগে সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একই মামলায় চার্জ গঠন ও চার্জ আমলে নেয়ার বৈধতা প্রশ্নে বেগম জিয়ার করা দুটি লিভ টু আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। পরে আপিল বিভাগের একই বেঞ্চে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় চার্জ গঠনের বৈধতা প্রশ্নে খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল আবেদনের উপর শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে কাল মঙ্গলবার আদেশ দেবেন আদালত।
আপিল বিভাগে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এছাড়া বিচারিক আদালতে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তাদের সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূইয়া ও ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান। এ সময় এসব আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট তাহেরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সিদিকউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতে চার্জ আমলে নেয়া হয় ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। চার্জ আমলে নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করা হলে হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর একটি রুল জারি করেন। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ওই রুল খারিজ হয়ে যায়। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করা হয় ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। কয়েকদিন শুনানির পর সোমবার আদালত তা খারিজ করে দেন।
জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয় গত ১৯ মার্চ। এই অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা দুটি রিট আবেদন গত ২৩ এপ্রিল হাইকোর্টে খারিজ হয়। এর বিরুদ্ধে গত ৭ জুলাই তিনি লিভ টু আপিল করেন। এই দুটি আবেদনের মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিষয়ে করা আবেদনটি গতকাল খারিজ করে দেয়া হয়। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা সংক্রান্ত আবেদনটির উপর সোমবার শুনানি শেষ করা হয়। মঙ্গলবার আদেশের জন্য রাখা হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় করা দুটি লিভ টু আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে- এমন সংবাদ অবহিত করে বিশেষ আদালতের কাছে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের আর্জি জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তার সেই আর্জির বিরোধিতা করেন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে এই আদালতের প্রতি (বিচারক বাসুদেব রায়) অনাস্থা জানিয়েছি। তাছাড়া আপিল বিভাগ আমাদের আবেদনগুলো খারিজ করেছেন, কিন্তু আমরা তার কোনো কপি এখনো হাতে পাইনি। তাই সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি করা হোক।
বিশেষ আদালতে শুনানির সময় ব্যারিস্টার খোকন আরো বলেন, আমরা এই আদালতে মামলা চালাতে চাইনা। কিভাবে ১৯ মার্চ চার্জ গঠন করা হয়েছে, তা সবাই দেখেছে। দেশের মানুষ কথা বলতে পারছে না পুলিশের কারণে। যারা বিচার বিভাগে হাত দেয়, তারা কখনো টিকে থাকে না। মইন উ আহমেদ ভেবেছিলেন, তারা ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। কিন্তু ২ বছরেই তারা চলে যেতে বাধ্য হয়। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, হাইকোর্ট আমাদের (কোর্ট পরিবর্তনের) আবেদনে সাড়া দেবেন।
উভয় পক্ষকে শুনে বিশেষ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় বলেন, আগামি তারিখে সাক্ষীর জন্য প্রস্তুতি রাখবেন। ওইদিন সবাইকে আদালতে হাজির করবেন। আজকের মতো মুলতবি করছি। এইটুকু আদেশ দিয়ে বিচারক চলে যান। কিছুক্ষণ পর আদালতের একজন স্টাফ এসে জানালেন যে, পরবর্তী তারিখ ১ ডিসেম্বর। এছাড়া অনাস্থা আবেদনের বিষয়ে আদালত বলেন, এই বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে আদেশ আনতে হবে।