বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড ও দোস্ত কালচারে তরুণসমাজ

Womenঅবক্ষয়ে উৎকণ্ঠায় অভিভাবক।
কোথাও দেখা যায় ছাত্রছাত্রী মিলে সিগারেট টানছে, খেলছে তাস।
লজ্জা ও নৈতিকতার বাধন শিথিল হচ্ছে।
মেহেদী হাসান :

রাজধানীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের দৃশ্য। ছাত্রছাত্রীরা দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কথার ছলে এক ছাত্রী আরেক ছাত্রের পিঠ চাপড়াল। জবাবে ছাত্রটি বেশ জমিয়ে একটি লাথি মারল ছাত্রীর পায়ে। না, এগুলো সিরিয়াস কোনো মারামারি নয়। সবই চলছে হাসিঠাট্টার ছলে। কোথাও দেখা যায় ছাত্রী হয়তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে কোনো ছাত্রের গায়ে; ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে একে অপরকে। কোথাও দেখা যায় স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী দোস্ত বলে সম্বোধন করছে কোনো সহপাঠীকে। আবার কোথাও দেখা যায় ছাত্রছাত্রী মিলে সিগারেট টানছে, তাস খেলছে। এসবই হচ্ছে প্রকাশ্যে। বিপরীতও অনেক চিত্র আছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অবাধ মেলামেশার সংস্কৃতি যেভাবে দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন অনেকে।
প্রযুক্তির প্রসার ও সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন মাধ্যমের কারণে তরুণসমাজে খুব দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড ও দোস্ত কালচার। পর্নোগ্রাফির বিস্তার ও সংস্পর্শে আসার কারণে লজ্জা এবং নৈতিকতার বাঁধন ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে ছড়িয়ে পড়ছে লজ্জাহীনতা, খোলামেলা ও অবাধ মেলামেশার পরিবেশ। একসময় মা-বাবার উদ্বেগ ছিল ছেলেমেয়েদের মোবাইলে কথা বলা এবং এসএমএস বিনিময়ে সময় ব্যয় করা নিয়ে। কিন্তু এখন ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্কাইপ, ওয়েবক্যামের কারণে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি এবং কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি অবারিত হয়েছে। পর্নো প্রসারের ফলে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবাধ মেলামেশার পরিবেশ চালু হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বেগজনক চিত্রের কথা জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াতের খবরও বের হচ্ছে। গত সাত সেপ্টেম্বর দৌলতদিয়া নিষিদ্ধ পল্লীতে খুন হয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ বছরের এক শিক্ষার্থী। রাজধানীর পুরান ঢাকায় পর্নো ভিডিওতে অভিনয়ের সময় ধরা পড়েন দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া কয়েক দিন আগে পুরান ঢাকায় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রী খুন হওয়ার পর জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী এক বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাসা ভাড়া নিয়ে লিভটুগেদার করতেন। নিহত ছাত্রীর মা-বাবা জানতেন তিনি কলেজের হোস্টেলে থাকেন।
সামাজিক যোগাযোগ, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, দোস্ত কালচারের বিস্তৃতি, পর্নো আগ্রাসন, অবাধ মেলামেশার ফলে তরুণসমাজ জড়িয়ে পড়ছে প্রেম-ধর্ষণ-পরকীয়ার মতো অনেক ঘটনায়। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন ত্রিমুখী, চতুর্মুখী সম্পর্কে। এ নিয়ে বন্ধুবান্ধবের মধ্যেও অনেক সময় ঘটছে সঙ্ঘাত হানাহানির ঘটনা। এসবের রেশ ধরে ঘটছে নানা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ঘটছে আত্মহত্যা ও খুনের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অনাকাঙ্খিত এসব ঘটনার খবরে প্রায়ই বিস্ময়ে হতবাক হচ্ছে গোটা দেশবাসী।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে সম্প্রতি এ ধরনের একটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে। দুই সন্তানের জননী লাভলীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক হয় নৌবাহিনী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র তানভির আহমেদের। তাদের ওই সম্পর্কের কথা লাভলীর স্বামী গিয়াসউদ্দিন জানার পর এ নিয়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে লাভলী তানভিরকে দিয়ে স্বামীকে খুন করান। লাভলীর স্বামীকে খুনকে করতে তানভিরকে সহায়তা করেন তার অপর দুই বন্ধু সাদমান ও জিসান। সাদমান ঢাকা কমার্স কলেজে আর জিসান সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। ১৯ অক্টোবর রাতে লাভলীর বাসায় তারই সহায়তায় তানভির এবং তার ওই দুই বন্ধু মিলে হত্যা করেন গিয়াসউদ্দিনকে।
তারা এখন সবাই খুনের মামলার আসামি। কলেজের একাদশ শ্রেণীর তিন ছাত্র খুনের মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় যেমন বিস্মিয়ে হতবাক ওই তিনটি পরিবার তেমনি এ ঘটনা জেনে বিস্ময়ে হতবাক দেশবাসী।
রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, অনেক সময় কাস ফাঁকি দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা রেস্টুরেন্টে বা অন্য কোথাও গিয়ে আডডা দিচ্ছে। কোনো কোনো এলাকার রেস্টুরেন্টে রয়েছে খুবই খারাপ পরিবেশ। অবাধ মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে অনেক স্থানে। তা ছাড়া রাজধানীর কোনো কোনো স্কুল-কলেজের সামনের রাস্তা, চত্বর এবং আশপাশের রেস্টুরেন্টে ঘুরলে যে চিত্র এখন দেখা যায়, তা কয়েক বছর আগে চিন্তা করতে পারতেন না অভিভাবকেরা। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক অভিভাবক। কোনো কোনো অভিভাবক আবার অন্য অভিভাবকদের দায়ী করে বলছেন, অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে না এবং এটা তাদের কাছে দুশ্চিন্তারও কোনো কারণ নয়। এদের সংস্পর্শে এসে প্রভাবিত হচ্ছে অন্যরা। তাই পরিবারকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button