হাউস অব কমন্সে সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকের সেমিনার
মঙ্গলবার ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে পোর্টকলিস হাউজে ‘সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকে’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘মানবাধিকার ও গণতন্ত্র : সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে গত ৫ জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে জনগনের ইচ্ছার সঙ্গে তামাশা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্য সরকার। তাই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহনমুলক নির্বাচন দেয়া জরুরী।
সেমিনারে বৃটিশ এমপি সায়মন ডানসাক বলেছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়া ও অর্ধেকের চেয়ে বেশী আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি, যা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়।
তিনি বলেন, ভোটারবিহীন এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার সাথে তামাশা করা হয়েছে। তাই এই নির্বাচন বৃটেনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
ডানসাক বলেন, বৃটেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো মনে করে-যত দ্রুত সম্ভব সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে খুবই জরুরী।
বৃটিশ লর্ড সভার সদস্য লর্ড আহমেদ নাজিরের সভাপতিত্বে ও শিক্ষাবিদ মামনুন মোর্শেদের পরিচালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকের আহ্বায়ক এম এ মালেক। সেমিনারে মুল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার ও ড. তুহিন মালিক।
সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকের কার্যক্রম তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন আইনজীবি আহমেদ শামস মালিক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লর্ড নাজির, লর্ড কোরবান হোসেন, ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দিন, জিম ফিজ পেট্রিক এমপি, ডেভিড ওয়ার্ড এমপি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মাজহার ও ড.তুহিন মালিক।
লর্ড নাজির আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করে বলেন, ১৯৭১ সালে যারা যুদ্ধপরাধ করেছে তাদের বিচার আমরাও চাই কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি গণতন্ত্রে কাম্য নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে ছিলেন তখন বৃটিশ পার্লামেন্টের মাধ্যমে তার দেশে যাওয়া নিশ্চিত করেছিলাম। গণতন্ত্রের স্বার্থে যাকে বাংলাদেশে যেতে সহযোগিতা করেছিলাম আজ তার অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপে আমি স্তম্ভিত।
লর্ড কোরবান বিএনপি নেতা এম ইলিয়াছ আলী গুম হবার আগে তার সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, একজন জলজ্যান্ত মানুষ এভাবে গুম হয়ে যাবে তা কল্পনাই করা যায় না।
বাংলাদেশে এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, মানুষকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, আর পরবর্তীতে যেকোন স্থানে তার লাশ পাওয়া যায়।
লর্ড কোরবান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশে দ্রুত একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর জোর দেন।
ফরহাদ মাজহার বলেন, গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে বাংলাদেশের গণমানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ইচ্ছাকে অস্বীকার করা হয়েছে ফলে এর কোন নৈতিক ও সংবিধানিক বৈধতা নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অবশ্যই জরুরী, কিন্ত নির্বাচন হলেই যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধান হবে না। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণায় যে ধরণের রাষ্ট্র গঠন করার প্রতিশ্রুতি ছিলো, তা রক্ষা হয়নি।
ফরহাজ মজহার বলেন, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নিয়ে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিলো আওয়ামীলীগ সরকার স্বাধীনতার অব্যাহতি পর পরই সেই গড়ে উঠা ঐক্য বিনষ্ট করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এই তিন নীতির ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, আওয়ামী লীগের কর্মসুচীর ভিত্তিতে নয়।
ড. তুহিন মালিক বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশোধিত সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকার বিধান করেছেন, এটাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ। এর ফলে জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্খা, গণতন্ত্রের মুল ভিত্তি, গণমানুষের ভোটের অধিকার আইনী ও দলীয় রাজনৈতিক কলাকৌশলের কাছে পরাস্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, জনগণের পছন্দমাফিক সরকার গঠনের প্রয়োজনে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের অন্য কোন পথ নেই।
তুহিন মালিক বলেন, বিনা ভোটে অনির্বাচিত অবৈধ এই সরকার শুধু গণতন্ত্রকেই হত্যা করেনি বরং যে আকাঙ্খা ও সংগ্রামের প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো সেটাকে শেখ হাসিনা নিজের হাতেই চিরতরে সলিল সমাধি দিয়েছেন। তাই কার্যকর গণতন্ত্রের স্বার্থে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে আর সকল দলের অংশগ্রহনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অতীব জরুরী।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ নেয়া জরুরী বলেও উল্লেখ করে তুহিন মালিক।
ড. তুহিন মালিক বলেন, সংশোধিত সংবিধানের ৭বি এবং ১৫২ অনুচ্ছেদের ৫২টি অনুচ্ছেদ যা কখনো সংশোধন করা যাবেনা বলে বিধান রাখা হয়েছে, আর এই সংশোধনীগুলো সহ সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক করে দিয়েছে- যার ফলে সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে।
তিনি সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকাকালে পার্লামেন্ট না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ১০-১৫ জন অসাংবিধানিক ও অনির্বাচিত উপদেষ্টা নিয়োগের মাধ্যমে দেশে তার শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে পারবেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, কমিউনিটি নেতা মুফতি শাহ সদরুদ্দিন, অধ্যাপক সালেহ আহমেদ, মানবাধিকার সংগঠক ব্যারিষ্টার নজরুল ইসলাম, মাওলানা সুয়াইব আহমেদ, ব্যারিষ্টার এম এ সালাম, গবেষক মাহদী আমিন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাহ আক্তার হোসেন টুটুল, আখতার হোসেন, সমাজসেবক আশিকুর রহমান আশিক, কবির আহমেদ (আয়ারল্যান্ড) জাহিদ মুবিন চৌধুরী ((আয়ারল্যান্ড), লকিয়ত উল্লাহ, (ইটালী) আবুল হোসেন জসিম, (ইটালী) জালাল খান, (স্পেন) মাসুদ খান, (স্পেন) শরীফ আহমেদ (হলান্ড), জাকির আহমেদ,( সুইজারল্যান্ড) রিপন আহমেদ (সুইডেন), সাবেক ছাত্রনেতা শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন, প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন, নাসিম আহমেদ চৌধুরী, গোলাম জাকারিয়া, শামসুর রহমান মাতাব, ড, মুজিবুর রহমান, জাফর আলী লিলু, আমিনুর রহমান আকরাম, আবেদ রাজা, কামাল উদ্দিন, নাজমুল হোসেন চৌধুরী, এমদাদুর রহমান এমাদ, রহিম উদ্দিন, ব্যারিষ্টার তমিজ উদ্দিন, ব্যারিষ্টার হামিদুল হক লিটন আফিন্দি, ব্যারিষ্টার আলিমুল হক লিটন, ব্যারিষ্টার ইকবাল হোসেন জুনিয়র, ব্যারিষ্টার আবু ইলিয়াছ, ব্যারিষ্টার সোহরাব হোসেন সোহেল, সলিসিটর নাসের খান অপু, মুফিদ আহমেদ, মাসুম আহমেদ, কে আর জসিম, সেলিম আহমেদ, শেহনাজ আহমেদ শাহনাজ, ফাহমিদা মজিদ, রাজিব আহমেদ খান, আমিনুল ইসলাম, সৈয়দ মুহিবুর রহমানর রিপন, সাইফুল ইসলাম মিরাজ, ইমতিয়াজ এনাম তানিম, নুরুজ্জামান রাজন, মনির আহমেদ, জাহিদ হাসান গাজী, আশিক ইসলাম, জুল আফরোজ মজুমদার, আসাদুজ্জামান মুকুল, শাকিল চৌধুরী, আতিকুল ইসলাম আতিক, এম ইলিয়াছ রিপন, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।