আমেরিকা জুড়ে গণবিক্ষোভ : নিরাপত্তা জোরদার

America Demostrationযুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পুলিশের গুলিতে এক কৃষ্ণাঙ্গ বালক নিহত হওয়ার জের ধরে দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদ। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরে নিরস্ত্র এক কৃষাঙ্গ কিশোরকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত না করার সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে তীব্র গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছে। হাজার হাজার লোক গ্র্যান্ড জুরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে রাস্তায় নেমে এসেছে।
তবে নিউইয়র্ক থেকে সিয়াটল জুড়ে এ গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে অনেকটাই শান্তিপূর্ণভাবে। নানা রঙের প্ল্যাকার্ড বহনকারী বিক্ষুদ্ধ জনগণ রায়ের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে। তারা বলছে, ‘আমরা থামবো না।’
সোমবার সেন্ট লুইস কাউন্টি প্রসিকিউটর রবার্ট ম্যাককুলচ সাংবাদিকদের গ্র্যাান্ড জুরির রায়ের কথা জানিয়ে বলেন, আগস্টের হত্যাকান্ড নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সম্ভাব্য কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এর পরপরই ফার্গুসন শহরে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনগণ। লুটপাটসহ একাধিক ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত লোকজন। এ প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা জোরদারে ২,২০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছে।
সোমবারের বিভীষিকাময় রাত শেষে মিসৌরি গভর্ণর জে নিক্সন বলেন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ বন্ধ করতে ন্যাশনাল গার্ডের সংখ্যা তিনগুণ করা হচ্ছে।
গত ৯ আগস্ট সেন্ট লুইসের ফার্গুসনে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসনের গুলিতে নিরস্ত্র কৃষাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন (১৮) নিহত হলে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। যা অব্যাহত রয়েছে কয়েক সপ্তাহ ধরে এবং এ বিক্ষোভ মাঝেমাঝেই সহিংস হয়ে উঠছিল।
এর মধ্যেই সোমবারের এ রায় আগুনে ঘি ঢালার মতো চলমান বিক্ষোভকে আরো তীব্র ও গতিশীল করে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। এমনকি পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করেও বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়। এছাড়া এ রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় চলতি মাসের শুরু থেকেই পুরো মিসৌরি জুড়ে এক মাসের জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়। মোতায়েন করা হয় ন্যাশনাল গার্ডও। তবু অবদমিত হয়নি জনগণ। তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ অব্যাহত রাখে।
এদিকে ব্রাউনকে হত্যাকারী পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসন নিজের এ কাজকে সঠিক উল্লেখ করে বলেন, আমি জানি আমি ঠিক কাজটিই করেছি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সহিংসতার সমালোচনা করেন এবং দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। সংখ্যালঘুদের গভীর হতাশার কথা স্বীকার করেই ওবামা বলেন, ক্ষোভ প্রকাশের গঠনমূলক উপায় রয়েছে। কিন্তু দাঙ্গাকারীরা যা করছে তা ধংসাত্মক।
তিনি বলেন, বাড়ি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সম্পদ ধ্বংস এবং জনগণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা এসবই ধ্বংসাত্মক কাজ। এসব ফৌজদারী অপরাধ। এসবের কোন ক্ষমা নেই।
নিহত ব্রাউনের পরিবারও রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। পরিবারের আইনজীবীর মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘অনেকেই আমাদের যন্ত্রণার অংশীদার হয়েছেন। আমরা বলতে চাই আমাদের হতাশা ও ক্ষোভ এমনভাবে প্রকাশিত হওয়া উচিত যেন তা একটি শুভ পরিবর্তনের সূচনা করে।’
ব্রাউন পরিবারের আইনজীবী বেঞ্জামিন ক্রাম্প বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে একে ক্রুটিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ড্যারেন গ্র্যান্ড জুরির সামনে হাজির হলে তাকে জেরা করা হয়নি। অথচ ঘটনার পর ড্যারেন তার প্রথম টেলিভিশন মন্তব্যে বলেছেন, ব্রাউন তার বন্দুক ছিনিয়ে নিতে পারে এ আশংকায় তিনি গুলি করেন। এসময়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ না হয়ে শ্বেতাঙ্গ হলেও কি তিনি এভাবেই গুলি চালাতেন?
তার জবাবে ড্যারেন বলেন, প্রশ্নই আসে না।
গ্র্যান্ড জুরির এ রায়ের ফলে পুলিশ কর্মকর্তাটি মনে করছেন তিনি ঠিক কাজটিই করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার ধারণা আমি ঠিক কাজটিই করেছি।
ফার্গুসনের মেয়র জেমস নোলেস ড্যারেনের ভবিষ্যত নিয়ে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ২৮ বছর বয়সী এ যুবক অফিসার কেবল প্রশাসনিক ছুটিতে থাকতে পারেন। তার চাকরিগত অবস্থানের কোন হেরফের হবে না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button