নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। তিনি এই মামলায় প্রসিকিউশনের ত্রয়োদশ সাক্ষী। বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ গতকাল তিনি জবানবন্দি দেন। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। জবানবন্দিতে শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী একাত্তরে আলবদর বাহিনী দ্বারা তার স্বামী ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীকে অপহরণ, হত্যা ও পরে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে লাশ খুঁজে পাওয়ার বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। জবানবন্দিতে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আগস্ট মাসের শুরু থেকেই আমাদের পল্টনের বাসার আশপাশে ছাই রঙের প্যান্ট ও নীল শার্ট পরা অপরিচিত লোকজনদের ঘোরাফেরা করতে দেখি। তারা সবসময় সশস্ত্র অবস্থায় থাকতো। পরে জানতে পারি তারা ছিল কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর সদস্য। আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল
মাওলানা মান্নানের বাসা। তিনি ছিলেন আলবদর বাহিনীর সংগঠক। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের মুহূর্তে ১৫ই ডিসেম্বর ভারতীয় বিমান বাহিনী ঢাকা শহরে বোম্বিং করছিল। আমি আর আমার স্বামী বারান্দায় বসে তা দেখছিলাম। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে আলবদর বাহিনীর তিন সদস্য আমাদের পুরানা পল্টনের ভাড়া বাসায় আসে। একপর্যায়ে বাহিনীর সদস্যরা ডা. আলীম চৌধুরীর চোখ বেঁধে ফেলে। এ সময় তিনি তাদের প্রশ্ন করেন তাকে কেন এবং কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জবাবে একজন আলবদর সদস্য জানায়, আলবদর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর নির্দেশে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী জানান, অপহরণের ৩ দিন পর ১৮ই ডিসেম্বর মিরপুর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে আরও অনেক বুদ্ধিজীবীর লাশের সঙ্গে তার স্বামী ডা. আলীম চৌধুরীর লাশ পাওয়া যায়। এ সময় তার হাত পেছনে বাঁধা ছিল। এ ছাড়া গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা ছিল। সারা শরীরে ছিল বেয়নটের আঘাত। বুকে ছিল অনেক গুলির চিহ্ন। ডা. আলীম চৌধুরীর সঙ্গে বধ্যভূমিতে ডা. ফজলে রাব্বী, সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, লাডু ভাইসহ আরও অনেকের ক্ষতবিক্ষত লাশ ছিল। জবানবন্দির একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘গত ৪২ বছর ধরে আমি এই বিচারের অপেক্ষায় আছি। মারা যাওয়ার আগে আমার স্বামীসহ অন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী আলবদর বাহিনী ও এর হাইকমান্ডসহ সব সদস্যের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেখে যেতে চাই।’ পরে তাকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মিজানুল ইসলাম।