বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র নতুন এক জরিপে উঠে এসেছে। আর এটি দেশের জনস্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রমাণ বহন করে।
নতুন জরিপের তথ্য অনুসারে, ২০০৮ সালে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৬৬.৮ বছর। ২০১২ সালে চার বছরের ব্যবধানে এ গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৬৯.৪ বছর। অর্থাৎ চার বছরে গড় আয়ু বেড়েছে ২.৬ বছর।
বিশেষজ্ঞরা এ গড় আয়ু বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবার পরিসর বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শিক্ষার অগ্রগতিতে সহায়ক হিসেবে মনে করছেন।
পরিসংখ্যান ব্যুরো তাদের জরিপে জন্ম এবং মৃত্যুর হার কমে আসার প্রমাণ পেয়েছে।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর নুরুন নবী বলেছেন, “গড় আয়ু বাড়ার ক্ষেত্রে শিশু মৃত্যুর হার কমে যাওয়ার একটা সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার কমাতে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করছে। আর তাই দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে।”
পরিসংখ্যান ব্যুরোর আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, “পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ এ ২০০৮ সালে ছিল ৫৪ শতাংশ। ২০১২ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে।”
জরিপ অনুসারে, ২০০৮ সালে প্রতি ১০০০ এ বছরপ্রতি মৃত্যুর হার ছিল ৬ শতাংশ। বছরপ্রতি এ মৃত্যুর হার কমে এখন ৫.৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুহার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। গ্রামে মৃত্যুর হার ৫.৭ শতাংশ আর শহরে তা ৪.৬ শতাংশ।
প্রতি হাজারে দেশ মাতৃমৃত্যুর হারও কমে এসেছে। ২০০৮ সালে যেখানে মাতৃ মৃত্যুর হার ৩.৪৮ শতাংশ, ২০১২ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২.০৩ শতাংশে। জরিপ অনুসারে, নারীদের শিশু জন্ম দেবার হারও কমেছে।২.৩০ শতাংশ থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২.১২ তে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “গর্ভনিরোধ ব্যবস্থা সহজতর হওয়া এবং শিক্ষা সচেতনতা বাড়ায় শিশু জন্মের হার কমে এসেছে।”
প্রফেসর নূরনবী বলেন, “নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গ্রাম এলাকায় জনস্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড লেভেলে কমিউনিটি ক্লিনিক এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। এনজিও সংস্থাগুলোও জনগণের দ্বোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো নগরের স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রেখে যাচ্ছে।”
উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার মাধ্যমে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবার পরিকল্পনা ও মাতৃ শিশু মৃত্যুর হার কমাতে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রফেসর নূরনবী বলেন, “দেশের অধিকাংশ মানুষই এখন মোবাইলফোন ব্যবহার করে। সেবার জন্য জরুরি প্রয়োজন হলে এখন তারা মোবাইলে কল করতে পারে।”
দশ কোটিরও বেশি লোক এখন মোবাইলফোন ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, “গড় আয়ু বেড়ে যাওয়াতে আমরা এখন দীর্ঘায়ু মানুষ পেতে যাচ্ছি। আর এখন বৃদ্ধ বয়সের রোগগুলোও ক্রমে কমে যাচ্ছে। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য আমাদের আরো যত্নবান হতে হবে।”
নূরনবী জানান, “বাংলাদেশে জন্মের পরই শিশু মৃত্যু হারের বিষয়টি এখনো উচ্চ পর্যায়েই রয়ে গেছে। প্রতি হাজারে ২১ শতাংশ শিশু মারা যাচ্ছে। এদের অর্ধেকই জন্মের ২৪র ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছে। শিশু মৃত্যু বন্ধে আমাদের আরো যত্নবান হতে হবে।”
আন্তর্জাতিক এনজিও ‘পপুলেশন কাউন্সিল’ বাংলাদেশ শাখার পরিচালক উবায়দুর রব বলেন, “দেশের স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি ঘটলেও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “দেশে এখনো অকালে গর্ভপাতের ঝুঁকি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণে বন্ধ্যাত্বকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।”
উবায়দুর রব বলেন, “শহরের গরিবদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। অধিকাংশ মানুষ এখন শহরমুখি হচ্ছে। তাই তাদের স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো প্রয়োজন।”
এবিষয়ে প্রফেসর নূরনবী বলেন, “গ্রামে পর্যাপ্ত চাকুরির ব্যবস্থা করলে শহরমুখি হওয়ার প্রবণতা কমবে। আর তাতে জনসংখ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে।