দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ
বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা ভাবছে সরকার। তবে এর আগে তাদের অন্তরীণ রাখা হতে পারে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপ্রকাশিত একটি নথির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা আমেরিকা।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশান (আইওএম) আলজাজিরাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই নথিটি সরবরাহ করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
‘বাংলাদেশ প্রপোজেস ইন্টার্নিং, রিপ্যাট্রিয়েটিং আপ টু ২৭০ কে রোহিঙ্গা টু মিয়ানমার’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে নাইজেল ও’কনোর লিখেছেন, পরিকল্পিত সহিংসতা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ঢাকা গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন জাতীয় নীতি ঘোষণা করলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩১ মার্চ প্রস্তুত করা ওই নথিতে বলা হয়েছে, ‘তালিকাভুক্তিবিহীন রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের সঠিক সংখ্যা ও অবস্থান নির্ধারণে জরিপ চালানোর ব্যাপারে প্রস্তাব করা হয়েছে… এ প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্তদের নিয়মিত কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় বা সীমান্তপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো পর্যন্ত বিভিন্ন সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হবে।’
নথিতে বলা হয়, তাদের মৌলিক চাহিদা আইওএম মেটাতে পারে। আর অন্যান্য মানবিক সেবা দেবে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দেশত্যাগী প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছে। স্থানীয় অধিবাসীদের ঘরবাড়িতে কোনোমতে ঠাঁই নিয়ে অথবা বনে-জঙ্গলে পলিথিন, বেড়া দিয়ে ঘর বানিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। এর বাইরে উদ্বাস্তু স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আরো ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাস করছে জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত ক্যাম্পে। কিন্তু এখানেও তাদের যথেচ্ছ চলাফেরা বা কাজকর্মে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, তার দেশ কেবল জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ফিরে যাবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম।
তা ছাড়া তাদের পাঠানো হলেই যে মিয়ানমার গ্রহণ করবে, তা নিশ্চিত নয়।
ফিল রবার্টসন বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠালে, ওই দেশ তাদের গ্রহণ করবে না। ফলে রোহিঙ্গারা পিংপং বলে পরিণত হতে পারে। তারা সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
বাংলাদেশের নথিতে নিবন্ধনের পর রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার দেয়া হবে কি না তা বলা হয়নি।
এ ব্যাপারে মন্তব্য করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়।
জাতিসঙ্ঘের মতে, রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম। তারা বৌদ্ধ প্রাধান্যবিশিষ্ট মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে বাস করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব দেয়নি, তাদের ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন চালানো হয়। তাদের চলাচল এবং বিয়ের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাদের অনেককে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োগ করা হয়। অনেককে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফলে তাদের অনেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চরম পর্যায়ে উপণিত হয়। ওই গণহত্যা ও নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে ওই সময় এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়। তাদের অনেকে সাগরপথে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে আসেন; কিন্তু জনবহুল বাংলাদেশের জন্য সেটা কঠিন বিষয়ে পরিণত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে। তবে তাতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে রোহিঙ্গারা কিন্তু পুরোপুরি হাল ছেড়ে দেননি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার- উভয় দেশে বসবাসকারী অনেক রোহিঙ্গাই মনে করছেন, এক দিন তারা তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারবেন।
বাংলাদেশে বসবাসকারী আলম নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হলে আমরা অবশ্যই ফিরে যাব। মিয়ানমার আমার কাছে অত্যন্ত সুন্দর দেশ, তবে সরকার ভয়াবহ খারাপ। বাংলাদেশ আমাদের থাকতে দিয়েছে; কিন্তু এখানে আমাদের কিছুই নেই।’