জিম্বাবুয়েকে ২১ রানে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ
সিরিজের চতুর্থ এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচেও সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ২১ রানে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। এ জয়ের ফলে ৫ ম্যাচের সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা। বাংলাদেশের করা ৮ উইকেটে ২৫৬ রানের জবাবে ৮ উইকেটে ২৩৫ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে।
শুক্রবার মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ওডিআই ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। এর কারণ সম্পর্কে অধিনায়ক মাশরাফি বলেন আগের ম্যাচে আমরা শিশিরের উপস্থিতি খুব একটা দেখিনি। ভালো ব্যাটিংও করতে পেরেছি। ফলে জিম্বাবুয়েকে চাপে ফেলতে পেরেছি। আগের তিনটি ম্যাচেই আমরা ভালো করেছি। সেটি ধরে রাখতে চাই। অপরদিকে সফরকারী দলের অধিনায়ক এল্টন চিগুমবুরার চেস্টা ছিল আগের ম্যাচের ভুলত্রুটিগুলো সুধরে নিয়ে আরো ভালো পারফর্ম করা।
তিনি বলেন, প্রথম ১০ ওভারেই ম্যাচ গুলোতে আমরা তিন-চারটি উইকেট হারিয়েছি। এখন দেশে ফেরার প্রাক্কালে আমাদেরকে পরিবার ও সমর্থকদের সন্তুষ্টির জন্য খেলতে হবে। আশা করি আজ ভাল একটি ম্যাচ উপহার দিতে পারব।
তবে শেষ পর্যন্ত পরিবার পরিজনের আজ পর্যন্ত কিছুই অর্জন করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে দল। যথারিতি হারের গন্ডির মধ্যেই আবর্তন করেছে তারা।
অবশ্য একেবারেই যে কিছু নিয়ে যেতে পারেনি তা নয়। প্রথমে ব্যাটিং নেয়া বাংলাদেশকে শুরুতেই চাপে ফেলে দিয়েছিল টিনাসা পেনিয়াংগারাকে বাইরে রেখে আক্রমণভাগ সাজানো জিম্বাবুয়ে। বিশেষ করে স্বল্পরানের ব্যবধানেই দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হককে ফিরিয়ে দিয়ে চাপে ফেলে দেয় টাইগারদের। দলীয় মাত্র ১৪ রানে এনামুল হককে (৫) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন মেডজিভা। দলকে ৩১ রানে রেখে মিরের শিকার হিসেবে সাজঘরে ফিরেন ১৬ রান সংগ্রহকারী তামিম ইকবাল। ওয়ান ডাউনে মোমিনুলের পরিবর্তিত হিসেবে দলে ফেরা ইমরুল কায়েসও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান ব্যক্তিগত ৫ রানে। ব্যাট হাতে দারুণভাবে ব্যর্থ হন বিশ্ব সেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। মাত্র এক রান নিয়েই মিরের দ্বিতীয় শিকারে পরিন হন সাকিব। এরপর স্বাগতিক দলকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম জুটি। ৫ম উইকেটে জুটিবদ্ধ হয়ে তারা গড়ে তুলেন ১৩৪ রানের বিশাল এক পার্টনারশীপ। যেখানে মুশফিক ৭৭ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের যোগান ছিল ৫০ রানের। দলীয় ১৬৬ রানে মুশফিক কামুনগুজির বলে চিগুমবুরার হাতে ধরা পড়ার পর ফের টাইগাররা ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও একপ্রান্ত দৃড়তার সাথে আগলে রেখেছেন মাহমুদুল্লাহ। এসময় দ্রুত ক্রিজ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন সাব্বির রহমান (৪) ও আবুল হাসান (১)। এ পর্যায়ে ব্যাট হাতে স্বাগতিক দলের ইনিংস মেরামতের কাজে মনোযোগী হন অধিনায়ক মাশরাফি। ঝড়ো গতিতে ব্যাট চালিয়ে তিনি মাত্র ২৫ বলে ৪টি বাউন্ডারি ও দু’টি ওভার বাউন্ডারির সহায়তায় ৩৯ রান সংগ্রহ করেন। তার ওই ঝড়ো ইনিংসের সুবাধেই শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৫৬ রানের সম্মানজনক স্কোর গড়তে সক্ষম হয় টাইগাররা।
রিয়াদ ৮২ রান সংগ্রহ করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন। সফরকারী দলের হয়ে মেডজিভা ও মির তিনটি করে এবং কামুনগুজি ২ উইকেট লাভ করেন।
জবাবে জিম্বাবুয়ের শুরুটাও ছিল চমৎকার। দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ভুসি সিবান্দা বেশ দৃঢ়তার সাথে ব্যাট করে সফরকারীদের এগিয়ে নিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দলীয় সংগ্রহ ৫০ রানের কোটা পার হবার আগেই জুটিটি ভেঙে দেন সাকিব আল হাসান। ব্যক্তিগত ১৭ রানের মাথায় সিবান্দাকে তিনি যখন এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন তখন দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৮ রান। জিম্বাবুয়ে দল যখন ৫১ রানে তখন সাকিব সরাসরি বোল্ড আউট করে ফিরিয়ে দেন ২৮ রান সংগ্রহকারী মাসাকাদজাকে। ৬০ রানে পৌঁছাতেই ফের উইকেট খোয়াতে হয় সফরকারীদের। এবার মারুমাকে (৬) বোল্ড আউট করেন অভিষেক পাওয়া লেগ স্পিনার জুবায়ের।
এরপরেই ফের ঘুরে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ে। রান খরায় থাকা ব্রেনডন টেইলর ও সলমন মির চতুর্থ উইকেটে গড়ে তুলেন ১০৬ রানের বিশাল এক পার্টনারশিপ। যেখানে টেইলর ৫৩ ও মির ৫২ রানের যোগান দেন। শেষ পর্যন্ত জুবায়ের ভেঙে দেন জুটিটি। মাহমুদুল্লাহর সহায়তায় ফিরিয়ে দেন ৫২ রান সংগ্রহকারী মিরকে। তখনো বীর দর্পে ব্যাটিং করে চলছিলেন টেইলর। এবার রুবেলের বল টেইলরের (৬৩) ব্যাটের কানায় লেগে উইকেট রক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাবসে জমা পড়লে দারুনভাবে লড়াইয়ে ফিরে আসে বাংলাদেশ। ১৭২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর আক্ষরিক অর্থে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে জিম্বাবুয়ে। এরপর অধিনায়ক চিগুমবুরাকে (৪) স্বাগতিক অধিনায়ক মাশরাফি ফিরিয়ে দিলে জিম্বাবুয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব ব্যাটসম্যানকেই হারিয়ে বসে। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৩৫ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিক দলের হয়ে দু’টি করে উইকেট নেন যথাক্রমে সাকিব আল হাসান, রুবেল হোসেন ও জুবায়ের হোসেন। অধিনায়ক মাশরাফি নেন এক উইকেট।