দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে

Corruptionদুর্নীতি বিরোধী সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, দেশে শুধু টাকা বা অর্থের দুর্নীতিই হচ্ছে না বরং গণতন্ত্র ও সংবিধানের নামেও দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতির বাইরে দেশের এক ইঞ্চি মাটিও নেই। সব জায়গায় দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দুর্নীতিবাজ বোশ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যদি এ লুটপাট আরো বৃদ্ধি পায় তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, সবাই জানে দুদক এখন দুর্নীতিবাজ পোষণমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অনেক বক্তা দুদককে দুর্নীতি সহায়ক কমিশন নামেও আখ্যায়িত করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাগরিক ঐক্য’র উদ্যোগে আয়োজিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংহতি সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অনুমতি না দেয়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্থানান্তর করা হয়। নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে এ সমাবেশে দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ দুর্নীতির বিপক্ষে অবস্থান নেন। নারী ঐক্যের সমন্বয়ক জাকিয়া বেগমের সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অ.) আব্দুল মান্নান, গণফোরামের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এইচ এম আকরাম, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুল হক দুলু, জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান রতন, বিকল্পধারার কোষাধ্যক্ষ আজিজ আকন ও নাগরিক ঐক্যের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
‘দুর্নীতিকে না বলুন’ শীর্ষক স্লোগানকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে হাজারো মানুষের ঢল নামে। সমাবেশে শিক্ষক, চাকরিজীবী, রাজনীতিক, ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
মেজর (অ.) আব্দুল মান্নান বলেন, বাজেটের ৩০ শতাংশ করে বিগত ১০ বছরে ৫ লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। ৮০ বিলিয়ন ডলার জাতীয় সম্পদের বেশির ভাগ লুটপাট হয়েছে। সংসদ সদস্যরা যদি লুটপাটের নেতা হন আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় যদি এ লুটপাট আরো বৃদ্ধি পায় তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আমরা বলি ‘দুদক’ বা দুর্নীতি দমন কমিশন। কেউ কেউ বলেন ‘দূষণ’ বা দুর্নীতি সহায়ক কমিশন। তিনি মাহমুদুর রহমানকে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি এ সংগঠনের সদস্য হতে চাই।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। অথচ আজ দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। শিক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়েও দুর্নীতি করা হয়। দুদক নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত দাবি করে তিনি বলেন, দুদক কোন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান তা এখন দেশবাসী জানে। সমাজে যারা সকলের নিকট দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত দুদক তাদেরকে ভাল মানুষের সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে। না হলে এর করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। যে পুলিশ জনগণকে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করে থাকে, সেই পুলিশই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোহরওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে বাধা দেয়। তিনি বলেন, ধর্ম নয়, লতিফ সিদ্দিকী জয়ের বেতনের ব্যাপারে সত্য বলায় তাকে আজ মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে। তারপরই সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় জয়কে অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবে। তার মানে লতিফ সাহেবের কথা সত্য।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমাদের দেশে সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানই আছে। কিন্তু তারা কোনো প্রোডাক্টিভ কাজ করতে পারে না ঘুষ এবং দুর্নীতির কারণে। যে দেশের ১৮শ বিচারকের মধ্যে একজনও কারাগারে নেই, তাহলে বুঝতে হবে এ দেশ সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত। কিন্তু আসলে কি তাই?
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দুর্নীতি আমাদের পূর্ববর্তী অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। দুর্নীতিকে প্রতিহত করার জন্য আমি একাই আন্দোলন শুরু করেছিলাম। সে লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ডেকেছিলাম। কিন্তু সেখানে আমাদের সভা করতে অনুমতি দেয়া হয়নি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সরকার এমন অনুষ্ঠানে বাধা দিয়ে কি দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করেছে কিনা আমি জানি না।
দুর্নীতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বিরূপ মন্তব্যের সমালোচনা করে এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘মুহিত রাবিশ ও খবিশ’। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত যতদিন সরকারের অর্থমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন ততদিন তিনি রাবিশ এবং খবিশ হয়েই থাকবেন।
তিনি বলেন, আমরা বিগত দিনে হাওয়া ভবনের দুর্নীতি দেখেছি। তারেক রহমানকে যেমন দুর্নীতিবাজ হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়া হয়েছে এ রকম একশ’ নব্য দুর্নীতিবাজ এখন তৈরি হয়েছে। তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হয়।
তিনি আরো বলেন, এখন দেশে শুধু টাকা বা অর্থের দুর্নীতিই হচ্ছে না বরং গণতন্ত্র ও সংবিধানের নামেও দুর্নীতি হচ্ছে। এর জবাব জনগণ একদিন দিবে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দুর্নীতির বাইরে দেশের এক ইঞ্চি মাটিও নেই। সব জায়গায় দুর্নীতি বিস্তার ঘটেছে। দেশের এক ইঞ্চি মাটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে দুর্নীতি পাওয়া যাবে না। পরীক্ষা ক্ষেত্রে, রাস্তা-ঘাট, পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বস্তরে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতি হয় গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে। প্রতি ১০ হাজারেও একজন দুর্নীতিবাজ খুঁজে পাওয়া যাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে লড়াই করতে হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে দেশে যতো দুর্নীতি হয়েছে তা যদি সংরক্ষিত করা হতো তাহলে তা দিয়ে দুটি কোরিয়া রাষ্ট্র কেনা যেতো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের দুর্যোগের সময় প্রচুর পরিমাণ রিলিফের কাপড় এসেছিল। সেই কাপড় বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছিল।
সরকারের সকল মন্ত্রণালয়ের সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যারা দুর্নীতি করবে তাদের নাম ওই মন্ত্রণালয় বা দেয়ালে চক দিয়ে লিখে রাখা হবে বলেও তিনি জানান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button