ইস্তাম্বুলের মসজিদে ‘নামাজ’ পড়লেন পোপ

Popeইস্তাম্বুলের ইতিহাসখ্যাত নীল রংয়ের সুলতান আহমেদ মসজিদে ‘নামাজ পড়লেন’ ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিস। মসজিদে তাকে শুনিয়ে দেয়া হলো পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ৩৭ নম্বর আয়াত।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই আয়াতেই খ্রিস্টানদের কাছে ‘ম্যারি’ নামে সম্মানিত, যাকে কোরআনে মরিয়ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর কুমারী থাকার কথা। এই বিষয়টি নিয়েই মুসলমান আর ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় মতপার্থক্য রয়েছে। এসব অভূতপূর্ব ঘটনাই ঘটেছে শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে।
ইতিহাসখ্যাত কন্সটান্টিনোপল-ই আজকের ইস্তাম্বুল। এই শহরটি নানা কারণে ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। এশিয়া আর ইউরোপে মহাদেশে বিভক্ত ইস্তাম্বুলে একসময় ছিল খ্রিস্টান রোমান সম্রাটদের নখদর্পণে। কিন্তু এক সময় মুসলিম সেনানীদের কাছে ইস্তাম্বুলসহ পুরো তুরস্ক রোমানদের হাতছাড়া হয়। এক সময় তুরস্ক হয়ে উঠে মুসলিম বিশ্বের সর্বশেষ খিলাফত উসমানীয় খিলাফতের সূতিকাগার।
গত শুক্রবার থেকে তিনদিনের এক সফরে ইতিহাসসমৃদ্ধ তুরস্কে সফরে যান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিস। সফরের অংশ হিসেবে আজ শনিবার তিনি ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ধর্মীয় স্থাপনা দর্শন করেন।
ইস্তাম্বুলে গিয়ে তিনি খ্রিস্টানদেরই আরেকটি শাখা অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গুরু ফেনের গ্রিক প্যাট্রিয়ার্ক বার্থোলুমিউয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইস্তাম্বুলভিত্তিক এই ধর্মীয় গুরু হলেন বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের ধর্মীয় প্রধান।
এরপর তিনি যান সপ্তদশ শতকে উসমানীয় খিলাফতকালে নির্মিত সুলতান আহমেদ মসজিদে। এ সময় পুরো এলাকা ছিল নিরাপত্তার ছাদরে ঢাকা। অতিরিক্ত ৭ হাজার পুলিশ নিয়োজিত ছিল নিরাপত্তা রক্ষায়। মসজিদে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানান ইস্তাম্বুলের মুফতি রাহমি ইয়ারান। জুতা খুলে খালি পায়ে মসজিদে প্রবেশ করেন পোপ। ইস্তাম্বুলের গ্র্যান্ড মুফতি এ সময় পোপের সঙ্গে নামাজের ব্যাপারে কথা বলেন। নামাজ যে ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি তা তিনি পোপকে জানান। এ সময় তাকে কোরআনের সূরা আল ইমরানের ৩৭ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করে শোনান তিনি।
এরপর তারা দুজন নামাজের নিয়তে মক্কা অভিমুখে দাঁড়ান। মুফতির রাহমি ইয়ারানের পাশেই দাঁড়ান পোপ ফ্রান্সিস। তাঁরা দুজন এ সময় নামাজে নিয়ত করে হাত বাঁধার ন্যায় দাঁড়ান। এভাবে তারা নীরবে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন।
উল্লেখ্য, ইস্তাম্বুলের এই মসজিদটি এক সময় ছিল খ্রিস্টানদের ক্যাথেড্রাল। খ্রিস্টপূর্ব ৩৬০ সালে বাইজানটাইন আমলে এটি নির্মিত হয়। এরপর ১৪৫৩ সালে উসমানীয় খিলাফতের হাতে ইস্তাম্বুলের (তৎকালীন কন্সটান্টিনোপল) পতন হলে ক্যাথেড্রালটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। এরপর ১৯৩৫ সালে এই ঐতিহাসিক মসজিদটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়।
গ্র্যান্ড মুফতি ও পোপের নামাজের এই দৃশ্য দেখার জন্য এ সময় পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ের ফাঁক গলে শত শত মানুষ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই পর্যটক। এরপর পোপ পার্শ্ববর্তী সোফিয়া মিউজিয়ামে হেঁটে যান। একসময় এই মিউজিয়ামটি হাগিয়া সোফিয়া নামে খ্রিস্টানদের একটি চার্চ ছিল। এ সময় একদল স্কুল শিক্ষার্থী তুরস্ক ও ভ্যাটিকানের পতাকা নেড়ে পোপকে অর্ভ্যর্থনা জানান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button