প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার
প্রায় ২৮ বছর আগে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন হক সাহেব (ছদ্মনাম)। ঢাকায় রেখে গিয়েছিলেন স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা। স্ত্রীর গর্ভে তখন অনাগত কন্যা সন্তান। যার বয়স এখন ২৮ বছর। সেও আজ সন্তানের মা। আমেরিকায় আজ হক সাহেব প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু মনের গহীনে এক অব্যক্ত বেদনা সারাক্ষণ তাড়া করে ফেরে তাকে। অবৈধ অভিবাসী হিসাবে দীর্ঘ ২৮ বছরে আমেরিকায় কাটালেও পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকার বেদনা তাকে খুবলে খাচ্ছে। অবশেষে ভাগ্যবিধাতা সুপ্রসন্ন হতে চলেছে হক সাহেবের ওপর। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের এক ঘোষণায় ৫০ লাখ অবৈধ অভিবাসী বৈধতা পেতে যাচ্ছেন, যাদের মধ্যে হক সাহেবের মত প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি।
ওবামার ভাষণের পর প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। তাদের পরিবারে চলছে খুশীর জোয়ার। এই আনন্দ আর খুশী তাদের জন্য যারা শুধু বৈধপথে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তাদের এই আনন্দের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তাদের কেউই রাজি নন নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে। কারণ ২০০১ সালে ৯/১১-এ সন্ত্রাসী হামলার পর ফেডারেল সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বহু অবৈধ অভিবাসী বিপাকে পড়েছিলেন। তাদের অনেককেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। যে কারণে এবার সুখবরের সঙ্গে কিছুটা শঙ্কাও পেয়ে বসেছে।
নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ার বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাংলাদেশি জানান, ২৫ বছর আগে ভ্রমণ ভিসা নিয়ে সস্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে যাবার পর রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। কিন্তু আবেদন প্রত্যাখ্যাত হবার পর আদালতে লড়াই করে আসছেন। ৫ বছর আগে তার বহিষ্কারাদেশ দেয় দেশটির আদালত। এরপর থেকে এক প্রকার পালিয়ে জীবনযাপন করছেন তিনি। মার্কিন মুল্লুকে জন্ম নেয়া দুই ষোড়শী কন্যাকে নিয়ে স্ত্রী মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অবৈধ অভিবাসী হওয়ায় আজ পর্যন্ত তার স্ত্রী ভালো কোনো চাকরি পাননি। বৃহস্পতিবার ওবামার ঘোষণায় এই পরিবারে আশার সঞ্চার হয়েছে। এখন তারা স্বপ্ন দেখেন সন্তানদের নিয়ে এখানে বৈধভাবে বসবাস করতে পারবেন। তার স্ত্রী ইত্তেফাককে জানান, অবৈধ অভিবাসী হবার কারণে ৬ বছর আগে তার মা ঢাকায় মারা গেছেন। মৃত্যু সংবাদে শুধু হাউমাউ করে কেঁদেছেন।
ওবামার ভাষণের পর নির্বাহী ক্ষমতাবলে অভিবাসন আদেশে স্বাক্ষর এখন সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এই আদেশে কী কী সুবিধা থাকছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ ওবামা তার ভাষণে অভিবাসন প্রক্রিয়ার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ খোলাসা করেননি। অর্থাত্ কোন্ ধরনের অবৈধ অভিবাসী বৈধ হবেন, আবার কোন্ ধরনের বৈধতা পাবেন তা স্পষ্ট নয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন এটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, ওবামার ভাষণে স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয় কোন্ ধরনের অবৈধ অভিবাসী এই সুবিধার আওতায় আসবেন। তবে নির্বাহী আদেশ জারির পর পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ওবামার এই আদেশের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বসবাস করা দুসাধ্য হবে।
ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র সাংবাদিক মঈনুদ্দিন নাসের বলেন, ওবামার নির্বাহী আদেশটি মেক্সিকানদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক মেক্সিকান বসবাস করছেন। তবে ওই আদেশে অবৈধ বাংলাদেশিরাও লাভবান হবেন। তার মতে, বাংলাদেশি এই সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি ইতিপূর্বে বৈধতার আবেদন করেছেন, যাদের সন্তানেরা দেশটিতে বৈধ। তাদের কেউ স্থায়ী বাসিন্দা এবং জন্মসূত্রে নাগরিক। মঈনুদ্দিন নাসের আরো বলেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই তারা এই সুবিধার আওতায় আসবেন না। তবে যারা বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন এবং মার্কিন নাগরিক বিয়ে করেছেন তারা এই সুবিধা পাবেন। তবে কেউই স্থায়ী বাসিন্দা বা নাগরিকত্ব পাবেন না। এমনকি তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সফর করতে পারবেন না। স্থায়ী বাসিন্দা বা নাগরিকত্ব পেতে হলে কংগ্রেসে আইন পাস করতে হবে।