যেখানে স্বর্গ এসেছে নেমে
মাসুদ আহমদ, মৌলভীবাজার থেকে: নিরিবিলি ও আনন্দে সময় কাটানোর উপযুক্ত জায়গা মৌলভীবাজার। প্রাকৃতিক সোন্দর্যের বিপুল ভাণ্ডার এ জেলায় আছে বেড়ানোর মতো নানা স্থান।
এখানে এলে যেতে পারেন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে। বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত এই জলপ্রপাত বা প্রাকৃতিক ঝরনাধারা দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন সব সময়। এখানে এই জলপ্রপাতের দৃশ্য ছাড়া আছে পাহাড়ের সৌন্দর্য খাসিয়াদের বসতভিটা। বিশেষত পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পানি যে কুণ্ডে পড়ে সেখানে যাওয়া বা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ঝরনার কাছ যেতে বেখেয়ালে পা-ফসকে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। তাই সতর্ক থাকতে হয়।
সেখানে যেতে হয় সড়ক পথে মৌলভীবাজার থেকে অথবা ট্রেনে কুলাউড়া নেমে সড়ক পথে। মৌলভীবাজার থেকে দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। কুলাউড়া থেকে ৪৫ কিলোমিটার। মৌলভীবাজার থেকে যাওয়ার সময় রাজনগর উপজেলার চা-বাগানের মধ্য দিয়ে যেতে চোখে পড়বে চা বাগানের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। ভাগ্য ভাল থাকলে এই পথেই গাছের মগডালে দেখা মিলবে বানরের।
কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক: জলে টইটুম্বুর এক প্রাকৃতিক লেক। চা বাগানের মধ্যে অবস্থিত এ লেকের চারপাশে আছে ছায়াদানকারী গাছ। আছে টিলা। ছোট ছোট সরু পথ ধরে টিলার ওপর উঠলে আকাশের কাছাকাছি পৌঁছানোর মতোই মনে হবে। এই লেক এবং চা-বাগানের সবুজ সৌন্দর্য মনকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে। যেতে হয় মৌলভীবাজার থেকে কমলগঞ্জ। সেখান থেকে ৩৫ কিলোমিটার পথ। ট্রেনে গেলে নামতে হবে কমলগঞ্জের ভানুগাছ স্টেশনে। তারপর ছোট গাড়ি নিয়ে লেকে পৌঁছানো যায়।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: বিখ্যাত এই উদ্যানে আছে গহীন অরণ্য। বিচিত্র পাখি ও বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। বানর, লজ্জাবতী বানর, চশমাপরা হনুমান, হরিণ ছাড়াও আছে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক আর অর্কিডের বাস। আছে ময়না টিয়াসহ নানা প্রজাতির পাখি। বিচিত্র বর্ণের প্রজাপতি। লাউয়াছড়া যেতে হলে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ধরে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। শ্রীমঙ্গলে রাতযাপনের আছে ভাল ব্যবস্থা, আছে ভাল হোটেল, রিসোর্ট ও বিভিন্ন সংস্থার রেস্ট হাউজ। এছাড়াও কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা সীমান্তে আছে হামহাম ছড়া জলপ্রপাত। তবে সেখানে যাওয়া একটু কষ্টকর। যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও সহজ হয়ে ওঠেনি। মৌলভীবাজার শহরের খুব কাছেই এক কিলোমিটারের মধ্যে আছে বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক। মনু ব্যারেজ। এসব স্থানও বেড়ানো বা একটু নির্জনে সময় কাটানোর মতো উপযুক্ত স্থান। ইকোপার্কে আছে নানা প্রজাতির গাছগাছালি। আছে বিচিত্র সব পাখি। ছায়াঘেরা এই সবুজের হাতছানি ভ্রমণ পিয়াসুদের মনকে নাড়া দেবেই। এছাড়াও আরও আছে মনু ব্যারেজের কাছেই বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে নদীর এক অংশে কাঠের নৌকা বা স্পিডবোটে চড়ে ভ্রমণ করা যায়। দেখা যায় নদীতে জাল ফেলে জেলেদের মাছ ধরা। এছাড়া এর পাশেই নদীর কূল ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে একটি রিসোর্ট। এখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে। মৌলভীবাজারে আরও একটি বেড়ানোর স্থান হচ্ছে বাইক্কা বিল। হাইল হাওর পাখি ও মাছের অভয়ারণ্য। বাইক্কা বিল হাজারও পাখির কলকাকলিতে সর্বক্ষণ থাকে মুখরিত। পর্যটন টাওয়ারে বসে দেখতে পারেন বাক্কা বিলে পাখিদের জলকেলি। বাতাসের ঢেউয়ে বাক্কা বিলের কাঁচা যৌবন আপনাকে মুগ্ধ করবে। যে কোন সময়ই আনন্দ ভ্রমণে মৌলভীবাজার যেতে পারেন। যে কোন উৎসবে কিংবা শীতে। বাইক্কা বিলে উপস্থিত হয়ে পর্যটন টাওয়ারে বসে পাখির ওড়াউড়ি দেখতে ভালই লাগে।