অস্কারখ্যাত ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের দশম বার্ষিকী
মতিয়ার চৌধুরী: ইন্ডিয়ান কারি হিসেবে আজ থেকে দুই‘শ বছর আগে বৃটেনে ভারতীদের মাধ্যমে কারি হাউজের যাত্রা শুরু হলেও এই কারি আমাদের জাতীয় জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে মিশে গেছে। একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ‘ইন্ডিয়ান কারি’ এখন বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ কারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই ইন্ড্রাষ্ট্রিকে ধরে রাখতে হলে বিদেশ নির্ভর না হয়ে হোম গ্রউন শেফ এবং ষ্টাফ তৈরীতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। ট্রেনিং সহ সব ধরনের সাপোর্ট দিবে সরকার। এমন্তব্য ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারী থেরেসা মে এমপি‘র। সোমবার পয়েলা ডিসেম্বর অস্কারখ্যাত ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের দশম এওয়ার্ড বিতরনী অনুষ্টানে তিনি এমন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ড দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করছে। কারী শিল্পের প্রচার ও প্রসারে ব্রিটিশ ক্বারী এওয়ার্ড বিশেষ অবদান রাখছে। এই খাত থেকে বছরে ব্রিটিশ ইকোনমিতে যোগান আসে ৩.৬ বিলিয়ন পাউন্ড।
বৃটেনের ‘চিকেন টিক্কা মসলা’ এখন জাতীয় ডিশ হিসেবে স্বীকৃত। সম্পুর্ণ নতুনত্ব এবং ব্যাতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে লন্ডনের বাটারসী পার্কের ইবুলেশনে গত পয়েলা ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অস্কারখ্যাত দশম ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ড।
বৃটেনের ম্যালটিক্যালচারাল সোসাইটিতে একজন ব্রিটিশ বাঙ্গালী দ্বারা আয়োজিত ঝমকালো এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে আসছিলেন বৃটেনের মন্ত্রী, এমপি, সাংবাদিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী সহ বিশিষ্ট সেলিব্রেটিরা, শুধু কি তাই সুন্দর এই সন্ধ্যা উপভোগ করতে ইউকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উপস্থিত হয়েছিলেন সাদা, কালো, ভারতীয়, বাংলাদেশী সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও বর্ণের প্রায় দু‘হাজার অতিথি। জনপ্রিয় ব্রিটিশ টিভি তারকাদের সুন্দর ও সাবলীল উপস্থাপনায় এই বর্নাট্য এওয়ার্ড বিতরনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বিজনেন্স ফিগার ড. ভিজে মালায় চেয়ারম্যান ইউবি গ্রুপ, লর্ড চ্যান্সেলর এন্ড সেক্রেটারী অব ষ্টেইট ফর জাষ্ট্রিজ ক্রিস গ্রিফিন,সেক্রেটারী অব ষ্টেইট ফর এডুকেশন এন্ড মিনিষ্টার ফর ওমেন এন্ড ইকোয়ালিটিস নিকি মর্গান, সাবেক মিনিষ্টার কিথ ভাজ, ফুটববলার ডেভিড সামুয়েল এমবিই, পেরাঅলিম্পিয়ান ডেভিড ওয়ের সিবিই, নিউজ ব্রডকাস্টার কৃষগুরু মুর্তি, রাজে ওমর, অভিনেতা আদিল রয়, সবু কাফুর, সবনা গোলাথি, গেট জনাসন বেহারী, টিভি প্রেজেন্টার লিজা কেনডি, পাথ সরাফ, নেনসী ডেল ওলিও, নেইল, ক্রিষ্ট হেমিলটন। প্রেজেন্টার কেইট সিলভারটন ও হার্ডিফ কেইলের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কয়েকজন এমপি ও হাউজ অব লর্ড এর ডজন খানেক সদস্য সহ বৃটেনে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের কুটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা।
অন্যান্য বারের চেয়ে এবছরের আয়োজনে ছিল বেশ কয়েকটি চমক। চলমান ১১টি রিজিওনাল এওয়ার্ডের পাশাপার্শি এবছর বৃটেন সেরা একজন প্রবীন ক্যাটারারর্সকে আজীবন এ্যাচিভমেন্ট এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। তিনি হলেন বটেনে বাঙ্গালী কমিউনিটিতে একজন সুপরিতিত মূখ বিশিষ্ট সমাজ সেবী আলহাজ্ব শামসুদ্দিন খান। ১৯৫৫ সাল থেকে এপর্যন্ত এই শিল্পের সাথে জড়িত। সাপ্তায় মাত্র সাড়ে চার পাউন্ড বেতনে রেষ্টুরেন্টের কিচেনে কাজ শুরু করেছিলেন, এখন এই ব্যাক্তি বিলিয়নার, শুধু তাই নয় এই শিল্পকে এগিয়ে নেবার পেছনে রয়েছে যার সীমাহীন অবদান। ব্যাতিক্রমী এই এওয়ার্ডটি প্রদান করতে ব্রিটিশ ক্বারী এওয়ার্ডের সাথে কয়েক মাস কাজ করছে লন্ডন স্কুল অব হসপিটালিটি এন্ড টুরিজম এসোসিয়েশন ও থেমস ভ্যালী ইউনিভারসিটি। সেই সাথে আট সদস্যের জাজ প্যানেল জাজরা হলেন ক্লাইভ উডব্রিজ, ডানিয়েল ষ্ট্রীক, রবার্ট ডবলিও ওয়ালটন এমবিই, অলিভার রেনার্ড রেরিমি সায়মন, এসবি ফারুক চার্লি মানরো, রবার্ট হিউজ। এখানে উল্লেখ্য যে কয়েক বছর যাবত কারী ম্যাগাজিন স্পাইস বিজনেন্স বৃটেনের সেরা রেষ্টুরেন্টগুলোকে এওয়ার্ড প্রদান করে আসছে। ব্রিটিশ ক্বারী এওয়ার্ড পরিচিতি পেয়েছে বিশ্ব ব্যাপী। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কেমেরুন অনুষ্টানে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যাস্ত থাকায় অনুষ্টানে উপস্থিত হতে পারেননি, ভিডিও লিংক এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী একজন স্পেশাল এওয়ার্ড কারীর নাম ঘোষানা করে বলেন বিটিশ ক্বারী এওয়ার্ড বৃটেনের ইতিহাসে একটি মাইল ফলক ।
আমি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডকে সমর্থন ও মালটি মিলিয়ন পাউন্ডের এই ইন্ট্রাষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে সব ধরনের সহযোগীতা দিয়ে যাব। ২০০৯ সালে মিঃ ডেভিড ক্যামরুন ‘অস্কারের সাথে তুলনা করে কারী এওয়ার্ডের সফলতা কামনা ও আয়োজকদের প্রশংসা করেছিলেন । এছাড়া বিরুধী দলীয় নেতা এ্যাড মিলিবান বিডিও বার্তায় তার সমর্থন ব্যাক্ত করে বলেন ২০০৫ সালে এমান আলী এমবিই প্রতিষ্টিত ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ড এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদান রাখছে। তিনি এই ইন্ড্রাষ্টিকে এগিয়ে নিতে সবধরনের সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।
ব্রিটিশ ক্বারী এওয়ার্ডের ফাউন্ডার বাংলাদেশী বংশদ্ভোত এনাম আলী এমবিই তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যদিও ভারতীয়দের মাধ্যমে বৃটেনে কারী ব্যবসা শুরু হয়, বৃটেন সহ বিশ্বব্যাপী এর প্রসার ঘটেছে বাঙ্গালীদের মাধ্যমে। আমি এই শিল্পকে ব্রিটিশ কারি হিসেবে পরিচিত করতে কাজ করছি, এখন এটি শুধু ইন্ডিয়ার কারী নয় ব্রিটিশ কারি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ব্যবসায় এখন সকল কমিউনিই এগিয়ে আসছে সমান ভাবে, কারী ইন্ডাষ্ট্রী ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তিনি আরো বলেন আমি কারী এওয়ার্ডকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই যা কেউ কোন দিন কল্পনাও করেনি।
এছাড়া তিনি বিদেশ থেকে দক্ষ শেফ আনতে সরকারের সহযোগীতা ইমিগ্রেশন নীতি শিতিল ও বাংলাদেশীদের ব্রিটিশ ভিসা প্রাপ্তিতে যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয় এবিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তাৎক্ষনিক ভাবে হোম মিনিষ্টার তেরেসা মে বলেন বৃটিশ বাংলাদেশী পোষ্য এবং ব্যাবসায়ীরা যাতে ঢাকা থেকে ভিসা পায় সরকার সে ব্যাস্থা নেবে। কারী এওয়ার্ডের প্রডিউসার ও ডিরেক্টর বিলেতে জন্ম নেয়া তৃতীয় প্রজন্মের ব্রিটিশ বাঙ্গালী জাষ্টিন আলী বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য কারী ইন্ডাষ্ট্রীকে টিকিয়ে রাখতে হলে নব প্রজম্বের পুরুষ মহিলা সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন আমার পিতার প্রতিষ্টিত এই কারি এওয়ার্ড দশম বর্ষে পদার্পন করেছে, এর মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সহ সকল সেক্টর থেকে কারি ইন্ড্রাষ্টিকে দেশের একটি অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন এবারের আয়োজনটি হচ্ছে আমার পিতার জন্ম দিনে তিনি তার পিতার দীর্ঘায়ু এবং এওয়ার্ডের অগ্রযাত্রকে অব্যাহত রাখতে সকলের সযযোগীতা কামনা করেন।
ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ড ২০১৪ উইনার:
বেষ্ট স্পাইস রেষ্টুরেন্ট ইন লন্ডন সেন্ট্রেল এন্ড সিটি- দি চিনামন ক্লাব- ওয়েষ্টমিনিষ্টার, বেষ্ট স্পাইস রেষ্টুরেন্ট ইন লন্ডন আউটার এন্ড সাবাবর্স সামপান -ওয়েলিং কেন্ট, বেষ্ট স্পাইস রেষ্টুরেন্ট ইন সাউথ ইষ্ট মালিকস রেষ্টুরেন্ট মেইডেনহেড বার্কসায়ার, বেষ্ট স্পাইস রেষ্টুরেন্ট সাউথ ওয়েষ্ট মাইরিস্টিকা-ব্রিষ্টল, বেষ্ট স্পাইস রেষ্টুরেন্ট নর্থ ইষ্ট আগ্রা মিডপয়েন্ট থনবারি ওয়েষ্ট ইয়র্কশায়ার, বেষ্ট স্পাইস রেষ্টুরেন্ট নর্থ ওয়েষ্ট ব্লুটিফিন ওল্ডহ্যাম, বেষ্ট স্পাইস রেষ্টুরেন্ট মিডল্যান্ড মেম সাব নটিংহ্যাম, বেষ্ট স্পাইস রেষ্টুরেন্ট ইন ওয়েলস রাছি ইন্ডিয়ান কিচেন সোওয়ানসী, বেষ্ট রেষ্টুরেন্ট ইন স্কটল্যান্ড লাইট অব বেঙ্গল আবারডিন, বেষ্ট ক্যাসুয়্যাল ডাইনিং ডিস হোম কভেন গার্ডেন, নিউকামার অব দি ইয়ার ফাইভ রিভার্স এ-লা কারটে ওয়েলস। বেষ্ট ডেলিভারী রেষ্টুরেন্ট / টেকওয়ে বাই জাষ্ট ইট ডট কম দিচিলি পিকেল ব্রাইটন। এবছরের সেপশাল এচিভমেন্ট এওয়ার্ড লাভ করেন ক্লাপহামের মহারানী রেষ্টুরেন্টের সত্বাধিকারী আলহাজ্ব শামসুদ্দিন খান।