খ্যাতিমানদের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বিপর্যস্ত ব্রিটেন

Gimiমার্কিন টিভি আইকন বিল কসবির বিরুদ্ধে কয়েক দশক পুরোনা যৌন নির্যাতনের স্ক্যান্ডালে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। আটলান্টিক মহাসাগরের অপর প্রান্তে বৃটেন দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে শোবিজ জগতের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একই ধরণের নানা ঘটনা মোকাবেলা করে আসছে। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ব্রিটেনের দীর্ঘদিনের এ সমস্যার পর্যালোচনা। খ্যাতিমান ব্যক্তিরা কিভাবে তাদের খ্যাতি এবং ক্ষমতা ব্যবহার করে অপেক্ষকৃত কমবয়সীদের ওপর নির্যাতন করেছেন সেসব ঘটনা উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এর সূত্রপাত হয় যখন প্রয়াত ডিজে এবং টেলিভিশন উপস্থাপক জিমি স্যাভিলের যৌন নির্যাতন স্ক্যান্ডাল সামনে আসে। জিমি এমন একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তার প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রিন্স চার্লস থেকে শুরু করে বি গিস পর্যন্ত। জিমি অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের ওপর যৌন নির্যাতর করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। দাতব্য কাজকে ঢাল ও মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে এসব মেয়েদেরকে টার্গেট বানাতেন তিনি।
জিমি ২০১১ সালে মারা যান। আর তার এসব অপকর্ম টিভি ডকুমেন্টারিতে প্রচার হবার পর থেকে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা নামে। যেসব স্কুল, চ্যারিটি আর হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে জিমি কাজ করেছেন সেগুলোর অনেক প্রতিষ্ঠানের যোগসাজসের প্রমাণ মেলে। বৃটিশরা বিস্মিত হন কিভাবে তাদেরকে এতো লম্বা সময় ধরে প্রতারনা করা হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ে এসব ঘটনা ঢামাচাপা দেয়ার অভিযোগ আসে। এ স্ক্যান্ডাল দ্রুতই বড় আকার ধারন করে আর জাতীয় পর্যায়ে তদন্তের পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ। শুরু হয় ‘অপারেশন ইউট্রি’।
শত শত নারী-পুরুষ স্বাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসে। জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। খ্যাতিমানরা দাঁড়ান বিচারের কাঠগড়ায়। কয়েকজন কারান্তরীন হয়েছেন ইতিমধ্যে। আর প্রক্রিয়া এখনও চলছে। যেসব সেলিব্রিটিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বা দন্ড প্রদান করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে রল্ফ হ্যারিস (৮৪) যাকে ৫ বছর ৯ মাস কারাদ- দেয়া হয় জুলাইয়ে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল চার মেয়ের ওপর অশালীন নির্যাতন। একজন প্রসিকিউটর বলেন, ষাট আর আশির দশকে এসব অপকর্ম করে তিনি পার পেয়ে যান কারন তিনি ছিলেন, অতিরিক্ত খ্যাতিমান আর ক্ষমতাবান। সুখ্যাতির জন্য তিনি ছিলেন ধরা ছোয়ার বাইরে। প্রথিতযশ জনসংযোগ বিষয়ক গুরু ম্যাক্স ক্লিফোর্ড তিনি সাইমন কাওয়েল এর মতো সেলিব্রিটিদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাকে মে মাসে ৮ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ প্রমানিত হয়। সত্তর আর আশির দশকে চার মেয়ে ও নারীর ওপর নির্যাতন করেছিলেন তিনি। শোবিজ জগতে তার যোগাযোগ ব্যবহারক করে অল্পবয়সী মেয়েদেরকে যৌন সম্পর্কে প্রলুব্ধ করতেন তিনি। এর মধ্যে ছিল ৮০’র দশকের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ডাইনেস্টিতে অভিনয়ের সুযোগ দেয়ার প্রলোভন। আদালতের বিচারক বলেন অভিযোগের কয়েকটি ধর্ষণ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারতো যদি ঘটনাগুলো বর্তমান সময়ের হতো। সেপ্টেম্বর মাসে অভিযুক্ত হন ৬৯ বছরের রেডিও ডিজে এবং মিউজিক শো উপস্থাপক ডেভ লি ট্রাভিস। ১৯৯৫ সালে টিভি স্টুডিওর কোরিডরে এক নারী গবেষকের ওপর চড়াও হবার অভিযোগ প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে। অপর দুটি নির্যাতনের অভিযোগ থেকে রেহাই পান তিনি। এছাড়া রয়েছেন দীর্ঘদিনের বৃটিশ সোপ অপেরা ‘কোরোনেশন স্ট্রিট’ এর তারকা উইলিয়াম রোচ।
ষাট আর সত্তরের দশকে পাচ নারীকে ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। ৮১ বছর বয়সী উইলিয়াম দাবি করেন যে সব নারী তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনেছেন তাদেরকে কোনদিনই দেখেননি তিনি। অবশেষে ফেব্রুয়ারি মাসে সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তিনি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button