যে মৃত্যু মুসলিম ও জার্মানদের এক করেছে
জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কি বংশোদ্ভূত ২৩ বছরের এক মুসলিম তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়সহ জার্মানির মানুষকে শোকাহত করেছে। সবাই ওই তরুণীকে জার্মানির সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। নিহত তরুণীর নাম টুচে।
গত ১৪ নভেম্বরের রাত গড়িয়ে ভোরের দিকে ফ্রাংকফুর্টের কাছে একটি এলাকার ম্যাকডোনাল্ড রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন টুচে। হঠাৎ বাথরুম থেকে চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে সেখানে যান তিনি। গিয়ে দেখেন একদল তরুণ দুই স্কুল ছাত্রীকে হয়রানি করছে। টুচে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন।
এর কিছুক্ষণ পর রেস্টুরেন্টের বাইরে গাড়ি রাখার জায়গায় একজন তরুণ টুচের মাথায় জোরে আঘাত করেন। এতে টুচে নীচে পড়ে আঘাত পান। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন।
দুই সপ্তাহ পর ২৮ নভেম্বের চিকিৎসকরা টুচে-র আর কোমা থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয় বলে ঘোষণা দিলে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়।
টুচে-কে আঘাতের ভিডিও সোমবার প্রকাশ করে জার্মানির সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বিল্ড। ওই এলাকায় থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থেকে ভিডিওটি সংগ্রহ করেছে বিল্ড। পুলিশ অবশ্য এই ভিডিও’র সত্যতা স্বীকার করেনি।
টুচেকে আঘাত করার অভিযোগে ১৮ বছরের এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। সে টুচেকে মারার ঘটনা স্বীকার করলেও তার দাবি, ওটা ছিল ‘একটা চড় মাত্র।’
এদিকে, টুচেকে জার্মানির সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব দেয়ার দাবি উঠেছে। চেঞ্জ ডট অর্গ ওয়েবসাইটে এই দাবির সপক্ষে চালু করা একটি পিটিশনে বুধবার পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই লাখের মতো মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। মুসলিম সম্প্রদায় থেকে শুরু করে সাধারণ জার্মানরাও পিটিশনে স্বাক্ষর করছেন।
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘টুচে সবসময়ের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
জার্মান ফুটবল লিগ বুন্ডেসলিগার এক খেলায় করা একটি গোল টুচেকে উৎসর্গ করেছেন ফ্রাংকফুর্টের এক খেলোয়াড়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, টুচের ঘটনা বহু-সংস্কৃতি আদর্শের সঙ্গে খাপ খেতে জার্মানির সংগ্রাম ফুটিয়ে তুলেছে। বুধবার জানাজা শেষে টুচেকে দাফন করা হয়।