মুক্ত বিশ্বে প্রবেশে আগ্রহী ইরান

Iranইরান বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিজের তৈরি কোটরে নিজেকে বন্দী করে রেখেছে নিজের চেষ্টাতেই এমনটাই বলা হয়ে থাকে। আরব বিশ্ব বা পশ্চিমা জগত স্বেচ্ছাবন্দী থাকতে ইরানকে বাধ্য করেনি। ইরানের স্বসৃষ্ট নিঃসঙ্গতার চিত্র প্রতিফলিত পাওয়া যায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাওয়াদ জরিফের কথায়। জরিফ সম্প্রতি বলেন, পরমাণু প্রশ্নে পি ৫+১ গোষ্ঠীর সঙ্গে সংলাপে বসার ফলশ্রুতিতে ইরান নিজেকে নিরাপদ বোধ করছে। জরিফের ভাষায় ইরানকে যুদ্ধের হুমকি এখন থেকে আর কেউ শোনাতে পারবে না। যে বৈরী বাতাবরণ ইরানের বিরুদ্ধে তৈরি করা হয়েছিল, তা দূর হয়েছে।
কোণঠাসা ও স্বেচ্ছাবন্দী অবস্থানে নিজেকে নিক্ষিপ্ত রাখে ইরান ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে। দেশটির চারপাশে অর্থনীতি, রাজনীতি ও কূটনীতিতে দুনিয়া যখন এগিয়ে যেতে থাকে, অসুস্থ আত্মকেন্দ্রিকতায় নিরন্তর আবদ্ধ থাকতে দেখা যায় তখন ইরানী নেতৃত্বকে। অনেকটা কমিউনিস্ট চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মতোই। যদিও ইরান সর্ব খাতে নিজস্ব একধরনের চিন্তা ধারায়। বাসিজ মিলিশিয়া ও রিভোলুশুনি গার্ডেরা প্রহরায় নিযুক্ত থাকে ইরানী নেতৃত্বের পোষিত মতবাদের সুরক্ষায়। তারা তৎপর থাকে বিরোধী কণ্ঠ নিস্তব্ধ করার কাজে।
প্রশ্ন উঠছে, বিপ্লবের উত্তরাধিকার স্বরূপ দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্ববিচ্ছিন্ন যে স্বেচ্ছাকারাগারে নিজেদের এতোদিন বন্দী করে রেখেছেন ইরানী নেতারা, সেখান থেকে আসলেই কি তারা বেরিয়ে আসতে চাচ্ছেন? মুক্ত বিশ্বে প্রবেশে আসলেই কি ইরানী নেতৃত্ব আগ্রহী? ইরান পরিবর্ধিত হতে যাচ্ছে- এমন স্পষ্ট কথা জরিফ বলেন নি। কিন্তু তিনি বলেছেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংলাপে বসতে পেরে তার দেশ নিরাপদ বোধ করছে।
জরিফের ভাষায়, ইরানকে লাগাতার হুমকি দেয়া বন্ধ করে পি-৫+১ গোষ্ঠী ইরানের সঙ্গে সংলাপে বসেছে, ইরানের জন্য এটি গর্বের বিষয় বলে তিনি মনে করেন। পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন হচ্ছে-জরিফ তার বক্তব্যে সত্যিই যদি আন্তরিক হন, তাহলে কি এমন সিদ্ধান্তে আসা যাবে যে, সংলাপের পরিণামে কোনো সমঝোতার আত্মপ্রকাশ ঘটা সম্ভব হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার ত্রিশ বছরের সাংঘর্ষিক অবস্থান থেকে ইরান বেরিয়ে আসবে? ইরানী কর্তৃপক্ষ আজো কিন্তু বৈপ্লবিক চিন্তা ও বক্তব্য প্রচার থেকে সরে আসেনি। সংঘর্ষ ও আত্মহননের তত্ত্বগত অবস্থানে ইরানকে আজো অনড় দেখা যাচ্ছে। দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মপন্থায় পরিবর্তন ইরান একান্তই যদি নিয়ে আসে তাহলে খাদ্য, খেলনা ও বিনোদন সামগ্রীর সরবরাহকারী বন্ধ হিসেবে ইরান দেখতে পাবে পাশ্চাত্যকে।
সে অবস্থায় ইরান আগের ইরান আর থাকতে পারবে না। ইরানকে প্রবেশ করতে হবে সমকালীন গতিশীল বিশ্বে। বিশ্বের সঙ্গে আদান প্রদানের দরজা উন্মুক্ত করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজস্ব পণ্য রফতানি করতে পারবে ইরান। বিপ্লবী ও বিদ্রোহী রফতানি করা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু লক্ষণীয় বিপ্লব সৃষ্ট মানসিকতার লৌহবেষ্টনি ভেঙে ইরান বেরিয়ে আসতে প্রস্তুত ইরানের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার রাজনীতির দ্বন্দ্ব এখনো কিন্তু তেমন কোনো বার্তা দিচ্ছে না।
যদিও ইরানী বিপ্লবের মহানায়ক আয়াতুল্লাহ খোমেনি প্রয়াত হয়েছেন আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও রাজনীতিকদের সভা-সমাবেশে প্রয়াত বিপ্লবী নায়কের বিশাল প্রতিকৃতি আজো কিন্তু শোভা পেতে দেখা যাচ্ছে। চীনে মাও সে তুংয়ের যে অবস্থান এক সময় ছিল, আয়তুল্লাহ খোমেনির সে অবস্থান আজো অমলিন দেখা যাচ্ছে ইরানে। চীন বিশ্বের দরবারে নিজেকে উন্মোচিত করে দেবার পরবর্তীতে অন্যান্য প্রয়াত চীনা নেতার পংক্তিতে স্থান হয়েছে বর্তমানে মাওয়ের। চীনের নবনির্মাণে তার অবদানের জন্য চীনারা গর্ববোধ করে থাকেন আজো। কিন্তু মাওয়ের প্রতি প্রশ্নাতীত সমর্থন জ্ঞাপনের মানসিকতা বর্তমান চীনের জনগণ পরিহার করেছেন।
জরিফ স্বীকার করেন, ইরানের সঙ্গে বোঝাপড়ায় বিশ্ব আসতে চেয়েছে বরাবর। কিন্তু স্বেচ্ছাবেষ্টনিতে বন্দীত্ব বরণকারী ইরানী নেতৃত্বই তা সম্ভব হতে দেয়নি।
বিদেশীদের সঙ্গে সম্পর্কে আসতে ইচ্ছুক ও তৎপর যেকোনো ব্যষ্টি বা গোষ্ঠীকেই ইরানী নেতৃত্ব একঘরে ও লাঞ্ছিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে দালাল, বিশ্বাসঘাতক ও ইহুদীবাদের সমর্থকের অভিযোগ এনে। –আরব নিউজ অবলম্বনে সৈয়দ আহমদ হোসেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button