জনগণের সমৃদ্ধিই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সমৃদ্ধিই তাঁর সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়ায় বাংলাদেশ এর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দরকারি যে কোন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব জোরদার করতে আগ্রহী।
শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়াই হবে আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য।’
প্রধানমন্ত্রীর গত ২৬ ও ২৭ নভেম্বর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান এবং সেখান থেকে ফিরেই প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া সফরের ফলাফল তুলে ধরতেই এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রায় এক ঘন্টা স্থায়ী এ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী খুবই প্রাণবন্ত ভাবে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফরের ফলাফল তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেসাই বিসওয়ালের সাম্প্রতিক সফর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ যদি কোনো মতামত দিয়ে থাকেন তাহলে সে দায়িত্ব তার। তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে। তাদের সহযোগিতা বাংলাদেশ সব সময় পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি আমরা লড়াই করে টিকে থাকতে পারি তাহলে স্বাধীন দেশ হিসাবে এখনো পারব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্বচ্ছ। এটা পূর্ব না পশ্চিম, উত্তর না দক্ষিণ- তা আমি বিবেচনায় নিতে চাই না।… বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে কারো সাথে যদি সম্পর্ক আরো গভীর করতে হয়, তা করব।”
তিনি বলেন, কাউকে ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারবে না- এমন চিন্তা না থাকাই ভাল।
এক প্রশ্নের জবাবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশল প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক ও প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোথায় দুর্নীতি- টিআই বলুক।’
তিনি বলেন, ‘কখন তারা এসব বলছে? যখন আমাদের প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক দুই। আমাদের রিজার্ভ ২২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন।”
কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়েছে- তার ব্যাখ্যাও তিনি এই আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘কে কার কাছ থেকে দুই টাকা খেল- তা নিয়ে যত কথা। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়েছে। তাদের বিষয়ে চুপ।’
তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরশাসকদের সময়ে দুর্নীতি শুরু হয়ে তা এরশাদ ও বিএনপির শাসনামলে প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সেখান থেকে হটাৎ করে বেরিয়ে আসা কঠিন। ‘জিয়াউর রহমান দুর্নীতির বীজ বপণ করে গেছে। আর খালেদা জিয়া তা ইন্সটিটিউলাইজড করেছে’- উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা গত ছয় বছরে বিভিন্ন খাতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সবত্রই যদি দুর্নতি থাকতো তাহলে আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি কখনোই ৬ শতাংশের উপরে হতো না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিএনপি সবখাতেই বিএনপি আমলের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী গত রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান অফিসে তার সঙ্গে বৈঠক করা প্রসঙ্গে বলেন, তিনি এই ধরনের সাক্ষাৎ বা বৈঠক করার মধ্যে কোন সমস্যা দেখছেন না।
তবে তিনি বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে রাতের বেলা বেগম জিয়ার বৈঠক করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি মনে করি রাতের পরিবর্তে দিবালোকে তার সব কিছুই করা উচিত।’
তিনি বলেন, তাঁর সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। বেগম জিয়া তার ৫ বছরের শাসনামলে তাদের কিছুই দেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে প্রতিটি লোকের চিন্তা-ভাবনা করার এবং কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। তবে কেউ আইন ভঙ্গ করলে বা বেআইনী কিছু করলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়াকে একটি শৃংখলার মধ্যে নিয়ে আসতে চায়। যাতে ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মালয়েশিয়াকে সে দেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত ২ লাখ ৬৭ হাজার বাংলাদেশী অভিবাসীকে বৈধতা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে আরও ৬০ হাজার শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ৭ হাজার ইতোমধ্যেই সে দেশে গিয়েছে এবং বাকিরা পর্যায়ক্রমে যাবে। সরকার তাদের মালয়েশিয়ার আইন-কানুন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান দান করে এবং একটি ডাটাবেজ তৈরি করে তাদের সেখানে পাঠাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রফতানিকে টেকসই করতে চায়। দেশ ও অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থে অবৈধভাবে এসব দেশে যাওয়া বন্ধ করতে হবে।
গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের ব্যাপারে সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হতো, তবে দেশ ২০০৭ সালের মতো সামরিক শাসনের অধীনে চলে যেত। তিনি বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় দেশে শান্তি বিরাজ করছে এবং জনগণ আরাম-আয়েশে বসবাস করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ৪০ শতাংশ লোক ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। যা অনেক উন্নত দেশেও দেখা যায় না। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার অব্যাহত রাখা ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল হয়ে যেত।-বাসস