ভূটানের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
ভূটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শনিবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছালে তাকে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
ভূটানের প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী রয়্যাল ভূটানিজ এয়ারলাইন্সের ‘ড্রুক এয়ার’এর একটি বিমান শনিবার সকাল ৯টা ২ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমান থেকে নামার পর ৯টা ১২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরের ভিভিআইপি ট্যারম্যাকে শেরিং টোবগেকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময়ে একটি ছোট্ট শিশু ভূটানের প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দেয়।
বিমানবন্দরে পৌঁছার পর তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল শেরিং টোবগেকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাথে নিয়ে ভূটানের প্রধানমন্ত্রী একটি সুসজ্জিত মঞ্চে দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেন। পরে তিনি গার্ড পরিদর্শন করেন। এসময়ে দুদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে শেরিং টোবগের পরিচয় করিয়ে দেন। ভূটানের প্রধানমন্ত্রীও তার সফরসঙ্গীদের সাথে শেখ হাসিনার পরিচয় করিয়ে দেন।
বিমানবন্দরে এ সময়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও কেবিনেট সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
তিন বাহিনীর প্রধানগণ ছাড়াও বিমানবন্দরে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রেস সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, কুটনৈতিক কোরের প্রধান, ঢাকায় নিযুক্ত ভূটানের রাষ্ট্রদূত এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা শেষে ভূটানের প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান এবং স্বাধীনতার শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গত জুলাই মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি শেরিং টোবগের প্রথম বাংলাদেশ সফর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মন্ত্রী ও ব্যবসায়িসহ ১০ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভূটানের প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে তিনি প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে অবস্থান করবেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কসহ অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
তাদের আলোচনায় বিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কানেকটিভিটিসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় স্থান পাবে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে তিনটা ১৫ মিনিট থেকে উভয়ে একান্তে কিছু সময় কাটাবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এ কথা বলা হয়েছে।
আজ রাতে হোটেল সোনারগাঁয়ে শেরিং টোবগের সম্মানে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নৈশভোজ সভায় তিনি অংশ নেবেন।
ঢাকায় অবস্থানকালে ভূটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া তিনি বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সাথেও বৈঠক করবেন।
এছাড়া ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)এর একটি প্রতিনিধিদল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর প্রাণ গোপাল দত্তও শেরিং টোবগের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
সূত্র মতে, শেরিং টোবগে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
এ সফরকালে বাংলাদেশ ও ভূটানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে বলে গত সোমবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। বাণিজ্যিক উন্নয়নে একে অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া বিষয়ক ওই চুক্তি ১৯৮০ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। নভেম্বরে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
তিনদিনের সফর শেষে আগামী ৮ ডিসেম্বর সোমবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
ভূটানের প্রধানমন্ত্রীর এ সফর উপলক্ষে রাজধানীর সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ বাংলাদেশ ও ভূটানের জাতীয় পতাকায় সাজানো হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনা ও শেরিং টোবগের বড়ো বড়ো ছবিও নগরীতে শোভা পাচ্ছে।